কলকাতা, 4 জুন : কোরোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্থ রাখা একটা বড় বিষয় । কিন্তু এর মাঝেই চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে কাওয়াসাকি । কারণ, একসঙ্গে কোরোনা ও কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা । ইতিমধ্যেই অ্যামেরিকা, ব্রিটেন সহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের এইভাবে একসঙ্গে কোরানা ও কাওয়াসাকিতে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে । ভারতও এই তালিকায় রয়েছে । সম্প্রতি কলকাতায় চিকিৎসা হয়েছে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত চার মাসের এক শিশুর । তার শরীরেও কোরোনা ধরা পড়েছিল । বর্তমানে সুস্থ রয়েছে সে ।
বিদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কোরোনা ও কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত শিশুর হৃৎপিণ্ডে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি । কিন্তু, কলকাতায় এই শিশুর ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডে সমস্যা দেখা গিয়েছিল । চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ, কোরোনা আক্রান্ত কোনও শিশুর ক্ষেত্রে যদি কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় থাকে, তাহলে দ্রুত ওই শিশুর চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন । না হলে তার বাঁচার সম্ভাবনা কমতে পারে । অনেক ক্ষেত্রে প্রাণে বাঁচানো গেলেও, অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুটি । কলকাতার মুকুন্দপুরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে হুগলির ওই চার মাসের শিশুর চিকিৎসা করেছেন চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য । কোরোনা ও কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে? চিকিৎসক আচার্য বলেন, "কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের কারণ আমরা জানি না । হয়তো কোনও ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে । যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কিছু পরিবর্তন হয় । এর উপসর্গ অর্থাৎ কারও হয়তো র্যাশ হল, কারও হাত-পা ফুলে গেল, চোখ লাল হল । উপসর্গগুলি যদি কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে না যায়, তখন তাকে কাওয়াসাকি লাইক ডিজ়িজ় বা হাইপার ইনফ্লামেটরি রিয়্যাকশন বলা হচ্ছে ।"
কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় কী? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কাওয়াসাকি এক ধরনের ভাস্কুলাইটিস । শরীরে যে বিভিন্ন রক্তবাহী নালী রয়েছে, প্রধানত আর্টারি, তার মধ্যে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলা হয় কাওয়াসাকি । এটি রেয়ার ডিজ় অর্ডার । এই অসুখ প্রধানত হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে । হৃদযন্ত্রের মধ্যে যে রক্তবাহী নালী রয়েছে, যেগুলি হৃদযন্ত্র থেকে বের হয়, সেই করোনারি আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে আর্টারিগুলির মধ্যে প্রদাহ শুরু হয় । আর্টারিগুলির ফুলে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে যায় । ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি দেখা যাচ্ছে । বছরের বিভিন্ন সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে কোনও শিশু । তবে এ রাজ্যে বসন্ত এবং শরৎকালে এই অসুখ আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায় । সাধারণত, ছয় মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখ দেখা দেয় । তবে ছয় মাসের কম অথবা পাঁচ বছরের বেশি বয়স, এমন শিশুদের ক্ষেত্রেও এখন কাওয়াসাকি দেখা যাচ্ছে। ১৯৬৭-তে জাপানে এই রোগটি প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ।