কলকাতা, 20 মার্চ : রীতিমতো আতঙ্কিত বালিগঞ্জের অভিজাত আবাসনের বাসিন্দারা । কারণ এই আবাসনের দু'নম্বর টাওয়ারের 13 তলায় থাকে কোরোনায় আক্রান্ত যুবকের পরিবার । এই খবর পেতেই সেই আবাসনে পৌঁছে গেল স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধিদল । ওই আবাসনের প্রত্যেক বাসিন্দার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে । জারি হয়েছে কয়েকটি নির্দেশিকাও । সরকার ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে । দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পরামর্শ ।
ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাসিন্দাদের জন্য জারি করেছেন নির্দেশিকা । তাতে বলা হয়েছে, আবাসনের প্রতিটি পরিবারকে আইসোলেশনে থাকতে হবে । অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ আবাসনের বাইরে যাবেন না । যদি আবাসনের কারও জ্বর কিংবা সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা যায় তবে অবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানাতে হবে । ওই আবাসনে গাড়ির চালক, পরিচারিকা, অতিথি-সহ বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । আবাসনের বাসিন্দা 22 বছরের ওই যুবক 13 মার্চ কলকাতায় ফেরেন । তিনি লন্ডন থেকে দুই বন্ধুর সঙ্গে শহরে আসেন । সেই দুই বন্ধু অবশ্য ভিন রাজ্যের বাসিন্দা । তাদেরও কোরোনা সংক্রমণ হয়েছে । ওই যুবক যখন বিমানবন্দরে নামেন, তখন তাঁকে 14 দিন হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হয় ।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ওই যুবক কলকাতায় ঘুরে বেরিয়েছেন বেপরোয়াভাবে । এমনটাই অভিযোগ উঠেছে । ওই যুবকের বাবার ব্যবসা রয়েছে । কালীঘাটে তার দু'টি দোকান । এই সাত দিনের মধ্যে ওই দুই দোকানে গিয়েছেন আক্রান্ত যুবক । এমনকী গেছেন শপিংমল, রেস্তোরাঁতেও ৷ ওই আবাসনের চৌহদ্দিতেও বেপরোয়াভাবেই ঘুরেছেন তিনি । ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে । অভিজাত ওই আবাসনে থাকেন কলকাতা পৌরনিগমের এক মেয়র পারিষদ । তিনি বলেন, "শুনতে পাচ্ছি ওই যুবক বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে সাতদিন ধরে । গত দু-তিন দিন ধরে কোরোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাননি । উপেক্ষা করেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সাবধানবাণী । সবচেয়ে বড় কথা লন্ডন ফেরত যুবকের কোরোনা আক্রান্তের কথা শুনে তার আরও বেশি সাবধান হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু তিনি এবং তার পরিবার অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে বিপদে ফেলে দিয়েছেন সহ নাগরিকদের ।"
জানা গেছে, ওই যুবকের বাবার দোকানে প্রায় 10-12 জন কর্মী রয়েছে । তাদের প্রত্যেকেরই সংস্পর্শে এসেছেন তিনি । ইতিমধ্যেই ওই যুবকের ঠাকুরমা, দাদু, বাবা, মা এবং গাড়িচালককে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে ওই দোকানের কর্মীদের সঙ্গে । তাদের শারীরিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর । তবে আশঙ্কার জায়গাটা ভিন্ন । সেটা হল তার বেপরোয়াভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো । এতে আর কোনও মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা সেটা এই মুহূর্তে বোঝা সম্ভব নয় । কিন্তু ঝুঁকি তৈরি হয়েছে পূর্ণমাত্রায় । কলকাতায় প্রথম কোরোনা আক্রান্ত যুবক এবং তার উচ্চ শিক্ষিত বাবা-মা রীতিমত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছিলেন । "প্রভাবশালী" মায়ের প্রভাব খাটিয়ে তিনি শারীরিক পরীক্ষা এড়িয়ে গেছেন । যা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কলকাতাবাসীদের মধ্যে । সরকার যখন বারবার বাইরে থেকে ফিরলে আইসোলেশনে থাকার কথা বলছে, তখন অবিবেচকের মতো কাজ করছেন একশ্রেণীর মানুষ । তবে কী সরকারের সাবধান বাণী এবং সচেতনতাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে কলকাতাবাসীর একাংশ ? প্রশ্নটা উঠছেই ।