পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"এ লজ্জা রাখি কোথায় !" বিশ্বভারতীর ঘটনার নিন্দায় সরব শিক্ষা মহল

বিশ্বভারতীতে তাণ্ডবের ঘটনায় ফুঁসছে বাংলার শিক্ষা মহল। ঘটনার নিন্দা করেছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য থেকে শুরু করে বর্তমান অধ্যাপকরা । একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের অধ্যাপক এই ঘটনার সমালোচনায় সরব হয়েছেন ৷

visva bharati university
visva bharati university

By

Published : Aug 18, 2020, 10:53 PM IST

কলকাতা, 18 অগাস্ট : বিশ্বভারতীর ঘটনায় ফুঁসছে বাংলার শিক্ষা মহল । তাণ্ডবের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য থেকে শুরু করে বর্তমান অধ্যাপকরা । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসুর আমলে চুরি যায় নোবেল । তিনি পুরো ঘটনা দেখেছেন টিভিতে । ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেছে তাঁর। বিক্ষোভকারীরা বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী জ্যাকেটটি ভেঙে ফেলেছে, সেটি তার আমলে তৈরি হয়েছিল ।

সুজিত বসু বলেন, "আমার পুরো বিষয়টা অত্যন্ত খারাপ লাগছিল। বিশেষ করে যেভাবে গেটটা ভেঙে ফেলা হল, তা কাম্য ছিল না। গেটের ডিজ়াইন করেছিলাম অরুদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে । তিনি একজন বিখ্যাত শিল্পী। সেই স্থাপত্য তৈরির সঙ্গে যেহেতু নিজে জড়িয়ে ছিলাম, আমার খুব খারাপ লাগছিল। লজ্জা লাগছিল। কোথায় যেন মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখন অনেকটা পিছনে চলে গেছেন । পুরো ঘটনা দেখে মনে হয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না। তারা মানুষকে বোঝাতে পারেনি। ওখানে অনেক মানুষ থাকেন যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সকাল-বিকেল প্রণাম করেন। অত‍্যন্ত ভালোবাসেন। তাঁদের সেন্টিমেন্টের জায়গাটা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে। তবে তার মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি এই বিক্ষোভে জড়িয়ে ছিলেন না এমনটাও নয়। তারা নিজস্ব এজেন্ডায় সুযোগের ফায়দা নিয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, মানুষকে বুঝিয়ে কাজ করার। তবে গতকাল পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত লজ্জার ছিল। থানার গায়ে পাঁচিল তোলার কাজ চলছিল। সেখানে আরও উচ্চপদস্থরা উপস্থিত ছিলেন । কিন্তু পুলিশ নীরব দর্শকের মতো সবটা দেখছিল। উপাচার্যকে কেন ডাকতে হবে পুলিশকে ? পুলিশ নিজেরাই তো সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারত । আমার মনে আছে, যখন বিশ্বভারতীতে কাজ করতাম তখন প্রায় 300 লোক রেজিস্ট্রারের উপর চড়াও হয়েছিল । আমি SP-কে ফোন করতে উনি 45 মিনিটের রাস্তা 22 মিনিটে চলে এসেছিলেন সিউড়ি থেকে। এমনটাই তো হওয়া উচিত । আগামী দিনে বিশ্বভারতীর পড়াশোনার মান নিয়ে আমার কোনও প্রশ্ন নেই । কিন্তু প্রশাসন আরও সুচারুভাবে চালালে উপকৃত হবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । "

নিন্দায় সরব শিক্ষা মহল

যোগেশচন্দ্র চৌধুরি কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন, "বাঙালি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জা লাগছে । গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পাঁচিল দেওয়ার কাজ করছিলেন। 19 তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ ছিল। ট্রাইবুনালের নির্দেশে কাজ করতে গিয়ে যেভাবে শাসক দলের বিধায়কদের আক্রমণের মুখে পড়ল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাতে লজ্জা প্রকাশের ভাষা নেই আমার কাছে । প্রশাসন অদ্ভুতভাবে সবটা চুপচাপ দেখল। পরে দেখলাম প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্ত্রী যারা ভাঙচুর চালাল তাদেরকেই সমর্থন জানালেন । এটা কোনওভাবেই উচিত হয়নি। বাঙালি হিসেবে, ভারতবাসী হিসেবে, এই পৃথিবীর মানুষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী মানুষ হিসেবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি । "

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবীর বোস বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন কোনও কিছুর মধ্যে বেঁধে দেওয়া নয়, বিশ্বভারতীর চৌহদ্দি খোলা থাকবে । আজকাল আবার কোনও কিছু খোলা রাখলে দখল হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু, বিশ্বভারতীর সম্পত্তি দখল হয়ে যাবে এটা হতে পারে না। হয়তো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সবটা বোঝাতে কোথাও খামতি ছিল । তবে গতকাল যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে নিন্দা প্রকাশের ভাষা নেই । শুধুমাত্র পাঁচিল নয়, ঐতিহ্যবাহী গেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে । বিক্ষোভ থামাতে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল । কিন্তু সেই ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details