কলকাতা, 20 জুলাই:রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম উত্তাল হয়ে উঠেছিল। জমি আন্দোলন ও পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। বদল হয় রাজ্য সরকার। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই বারে বারে সেই ঘটনার চর্চায় চলে আসে। কারণ, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেলাগাম সন্ত্রাস, হিংসা, খুনের ঘটনা চলেছে বলে অভিযোগ।
এখনও দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় পুলিশি মদতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমন অবস্থায় এই পরিস্থিতির বদল কীভাবে সম্ভব, তার উত্তর খুঁজতে বৃহস্পতিবার মহাবোধি সোসাইটি হলে এপিডিআর নাগরিক কনভেনশন আয়োজন করে। সেই সভায় বক্তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, পঞ্চায়েত হিংসায় হার মেনেছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ড! বামফ্রন্ট, তারও আগে 77 সালে কংগ্রেস রিগিং করেছে বলেও দাবি করেছেন নাগরিক সমাজের সদস্যরা।
এমনকী ভোটারের থেকে ভোট বেশি পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যত্রতত্র ব্যালট পেপার, এবং ব্যালট বাক্স পড়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পুকুরে ফেলা হচ্ছে এমনটা আগে কখনও হয়নি বলে এদিন দাবি করেছেন বিদ্বজনেরা। এদিনের সভায় অভিনেত্রী পরিচালক অপর্ণা সেন বলেন, "ভোট ঘোষণার পর থেকে যা ঘটে চলেছে তাতে আমার বারেবারে মন বলছে, এ জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার বাংলা নয়। যেটা নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের সময় বলেছিলাম। সে সময় সাধারণ মানুষ তার জমি রক্ষার জন্য প্রতিবাদ আন্দোলন করেছিল। সেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু, এবার কী হল ! সাধারণ মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হল। খুন করা হল। বোমা মারা হল।"
অন্যদিকে, শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, "ভয় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই ভয়কে ভয় না-পাওয়ার অঙ্গীকার করি আমি। গ্রামের পঞ্চায়েত নির্বাচন নামেই রইল। গ্রামের মানুষরা নিজের ভোট দিতে পারল না। গ্রামের সকল মানুষ কী সন্ত্রাসী ? নাগরিকদের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। কয়েকটি দাবির কথা বলছি, ভাঙড়ের গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায়। এই সন্ত্রাসের কাজ সরকারের নয়। শাসকদল করেছে। প্রকৃত সরকার হলে এরকম সন্ত্রাস চলত না। কতজন হত্যার শিকার হয়েছে এখনও প্রকৃত সংখ্যা জানা নেই। এই হত্যার সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁরা তো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর যারা মারা গেল, তাদের পরিবারের কী হবে? শাসক দল নেত্রী পরিকল্পনা মাফিক হত্যা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। কিন্তু, তিনি হয়তো জানেন না মানুষের মৃত্যুর বা খুনের কোনও ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। গণতন্ত্র ঠিক কী অবস্থায় আছে তা আমাদের আবিষ্কার করতে হবে। কারণ, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল শাসক দল হিসাবে এই গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছে। দলতন্ত্রের এই বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।" বলেন মানবাধিকার কর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন: '52 জনের খুনের দায় নিন মমতা', পঞ্চায়েত হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি অপর্ণার
অন্যদিকে, ভাঙড়ের জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও এবারের পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার শিকার মির্জা হাসান বলেন, "বর্তমান সরকার বুঝে গেছে লুঠ করে খেতে গেলে মানুষের প্রতিরোধ আটকাতে হবে। তাই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। মনোনয়ন পর্বর শুরুর দিন থেকে হিংসা, সন্ত্রাস শুরু হয়। বাম আমলেও বিনা প্রতি্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার নজির আছে। মারামারি, সন্ত্রাসের নজির আছে। কিন্তু, তৃণমূলের মদতে এবারের নির্বাচনে সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। এখন পুলিশ বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। এলাকার বিধায়ককে ঢুকতে দিচ্ছে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে গ্রামে গ্রামে পুলিশ ভোর বেলা নাবালক, নির্দোষদের গ্রেফতার করছে। তুলে নিয়ে আসছে। কিছু মানুষ, প্রশাসনিক নেতৃত্ব এসব করছে। আর গোটা ভাংড়ের নামে বদনাম হচ্ছে। আসুন সমাজের সকল স্তরের মানুষ একাট্টা করে শান্তি ফিরিয়ে আনি।"