কলকাতা, 22 মে:পুলিশি নজরদারির অভাবে ভিন রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ঢুকছে চাইনিজ বাজি মশলা ৷রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে নেমে এ কথা জানতে পেরেছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা ৷
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পরে প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনারদের 6 দফার একটি বিশেষ নির্দেশিকা পাঠিয়েছে নবান্ন । সেই নির্দেশিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হল, প্রত্যেক পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন নিজ নিজ এলাকায় কোথায় বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে, তা খুঁজে বের করেন । কিন্তু সেই নির্দেশিকা আসার পর দেখা গেল পুলিশের সক্রিয় পদক্ষেপ করার আগেই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল দক্ষিণ 24 পরগনার বজবজ এলাকা ।
এ বিষয়ে তদন্তে নেমে আপাতত পুলিশকর্মীরা জানতে পেরেছেন যে, বাজির মশলা ঢুকছে জাতীয় সড়ক হয়ে । মূলত ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মুর্শিদাবাদ হয়ে সরাসরি সেই মশলা পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরতলিতে । গোটাটাই হচ্ছে রাতের অন্ধকারে । এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির ডিআইজি পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানান, জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়কে পর্যাপ্ত নাকা চেকিং বা পুলিশি বন্দোবস্ত সব সময় ঠিক থাকে না । আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়ক হয়ে বাজির মশলা পৌঁছে যাচ্ছে এই রাজ্যে ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাজি তৈরির জন্য যে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে তা হল, যদি বাজি কারখানায় মশলার পরিমাণ 15 কেজির উপরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে তার অনুমতি নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের থেকে । যদি 15 কেজি থেকে 500 কেজির বাজি তৈরির মশলা থাকে, সে ক্ষেত্রে কারখানার মালিককে লাইসেন্স প্রদান করার দায়িত্ব থাকে কন্ট্রোলার অফ এক্সপ্লোসিভসের উপর । আর তারও বেশি পরিমাণের বাজি তৈরি করতে গেলে তাঁর লাইসেন্স দেন কন্ট্রোলার ।
এছাড়াও বাজির মশলা তৈরি এবং তা প্যাকেটজাত করার জন্য আলাদাভাবে লাইসেন্স নিতে হয় এবং তা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক । আর এই সব লাইসেন্স পেতে ও তা পুনর্নবীকরণ করতে সরকারের সমস্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হয় এবং তা খরচসাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষও বটে । ফলে অনেকেই এই লাইসেন্স এড়িয়ে যাওয়ায় অধিকাংশের কাছেই এই লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই । আজ বজবজে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন সিআইডির প্রতিনিধি দল । ভবানী ভবন সূত্রের খবর, একটি বৈধ বাজি কারখানা গড়ে তোলার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তার ছিটেফোঁটাও নেই সংশ্লিষ্ট বাজি কারখানায় ।
ঘটনার পর আজ সিআইডির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গেলেও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নমুনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ৷ ফলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করলেও সেই ভাবে তথ্য প্রমাণ যাতে না পান, তার জন্যই অভিযুক্তদের সঙ্গে পুলিশের একাংশ যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ ।
আরও পড়ুন:এগরার পর এবার বজবজ, বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত নাবালিকা-সহ 3