কলকাতা, 27 ডিসেম্বর: "আয় রোদ্দুর আয়, আয় আমাদের ন্যাংটা খুকুর নোংরা বিছানায়/আয় রোদ্দুর বস্তিতে, আধমরা ওই খুকুর ঠোঁটে একটু চুমুর স্বস্তি দে...৷" বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালো বস্তির পাঁচালিতে ধরা দিয়েছিল শহরের পথঘাটের কঠোর বাস্তব ৷ রোদ্দুর যেন চিরকালই কৃপণ ফুটপাথের শিশুদের প্রতি ! সেই ছবিই ফুটে উঠেছে বড় পর্দাতেও ৷ বস্তির শিশুদের জীবনযাত্রার বাস্তব রূপ তুলে ধরে চোখে জল এনে দিয়েছে স্লামডগ মিলিয়নেয়ার ৷ বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়ে পুরস্কার এসেছে ৷ তবে চিত্রটা যে কে সেই ! বড়দিনের বড় সেলিব্রেশন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে চিনিয়ে দিল 'কলকাতার যীশু'দের ৷ যাদের কাছে যীশুর জন্মদিন (Christmas for Street Children) শুধুই বাড়তি আয়ের একটা দিন ৷ বেলুন, সান্তার টুপি হাতে যেন শিশু শ্রমের লাইভ প্রদর্শনী ! কবি ঠিকই বলেছেন, "যে ছেলেটা কাজ করে খায়, রাস্তার চায়ের দোকানে/তার ছুটি হারাল কোথায়, তার ছুটি আছে কোনখানে ?"
কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, গোটা দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্ব বড়দিনের (Christmas 2022) উৎসবে হুল্লোড়ে মাতোয়ারা । বাদ পড়েনি আমাদের রাজ্যও ৷ ঠিক তখনই প্রদীপের আলোর নিচে আঁধারের মতো শহরের অলিতে গলিতে ওরা আছে । আছে আলো-ছায়ায় মিশে । যাদের হাতে থাকার কথা বই । যাদের প্রাপ্য নিশ্চিত শৈশব । আজ তাদের জন্য পথই হল ঘর । বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তারা এই কাঁচা বয়সেই যেন বড় হয়ে গিয়েছে কয়েক গুণ । আইন বলছে, শিশুশ্রম নিষিদ্ধ । কিন্তু পেট সে কথা মানছে কোথায় ! আর তাই উৎসবমুখর কলকাতার চালচিত্রে আর পাঁচটা স্বাভাবিক জিনিসের মতোই তারা মিলে মিশে গিয়েছে । বয়স 18 পার না হলেও তাদের কারও হাতে আছে বেলুন, কারও হাতে সান্তা ক্লজের লাল টুপি । কেউবা হাতে নিয়ে ঘুরছে চকোলেট - আমার আপনার বাচ্চাদের জন্য । আমাদের আনন্দ, খুশি ওদের কাছে বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি আয়ের একটু উপায়মাত্র ।
চিত্র-1: স্থান পার্ক সার্কাস, সময় সন্ধ্যে 7টা ৷ পথেই দেখা মিলল বছর আট-নয়ের সমীরের সঙ্গে । বুকে স্কুল ব্যাগ, হাতে রয়েছে বেলুন । তার মতোই জনা চারেক বেচে বেড়াচ্ছে সেই বেলুন । পথচলতি মানুষকে তাদের আবেদন, একটা বেলুন নিন না । কেউ নিচ্ছেন, কেউ আবার বিরক্তি ভরে সরিয়ে দিচ্ছেন হাত । কেউ কেউ আবার ফুটপাথ পাল্টে নিচ্ছেন তাদের দেখে । কিন্তু তাদের এই ফেরি চলছেই । বছরের অন্য সময়ের তুলনায় উৎসবের এই দিনগুলিতে পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস চত্বরে ভিড় হয় ভালোই । আর সেখানেই বাড়তি আয়ের তাগিদে পথে নামা । তবে সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্ন থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যায় এই শিশুরা । পুলিশ দেখলেও দে ছুট । তাই এদের কাছে উৎসব হল পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা ।