পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Christmas for Street Children: কলকাতার রাজপথে অন্য বড়দিন 'স্লামডগ'দের

কলকাতার রাজপথে ধরা দিল 'স্লামডগ'দের অন্যরকম বড়দিন পালনের চেনা ছবি (Christmas for Street Children)৷ পথশিশুদের কেউ বিক্রি করল বেলুন (Christmas 2022), কেউ সান্তার টুপি ৷ আবারও চুরি গেল শৈশব !

Street Children ETV Bharat
শহরের পথশিশুর ছবি

By

Published : Dec 27, 2022, 7:36 PM IST

বড়দিনে কলকাতার পথশিশুরা

কলকাতা, 27 ডিসেম্বর: "আয় রোদ্দুর আয়, আয় আমাদের ন্যাংটা খুকুর নোংরা বিছানায়/আয় রোদ্দুর বস্তিতে, আধমরা ওই খুকুর ঠোঁটে একটু চুমুর স্বস্তি দে...৷" বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালো বস্তির পাঁচালিতে ধরা দিয়েছিল শহরের পথঘাটের কঠোর বাস্তব ৷ রোদ্দুর যেন চিরকালই কৃপণ ফুটপাথের শিশুদের প্রতি ! সেই ছবিই ফুটে উঠেছে বড় পর্দাতেও ৷ বস্তির শিশুদের জীবনযাত্রার বাস্তব রূপ তুলে ধরে চোখে জল এনে দিয়েছে স্লামডগ মিলিয়নেয়ার ৷ বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়ে পুরস্কার এসেছে ৷ তবে চিত্রটা যে কে সেই ! বড়দিনের বড় সেলিব্রেশন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে চিনিয়ে দিল 'কলকাতার যীশু'দের ৷ যাদের কাছে যীশুর জন্মদিন (Christmas for Street Children) শুধুই বাড়তি আয়ের একটা দিন ৷ বেলুন, সান্তার টুপি হাতে যেন শিশু শ্রমের লাইভ প্রদর্শনী ! কবি ঠিকই বলেছেন, "যে ছেলেটা কাজ করে খায়, রাস্তার চায়ের দোকানে/তার ছুটি হারাল কোথায়, তার ছুটি আছে কোনখানে ?"

কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, গোটা দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্ব বড়দিনের (Christmas 2022) উৎসবে হুল্লোড়ে মাতোয়ারা । বাদ পড়েনি আমাদের রাজ্যও ৷ ঠিক তখনই প্রদীপের আলোর নিচে আঁধারের মতো শহরের অলিতে গলিতে ওরা আছে । আছে আলো-ছায়ায় মিশে । যাদের হাতে থাকার কথা বই । যাদের প্রাপ্য নিশ্চিত শৈশব । আজ তাদের জন্য পথই হল ঘর । বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তারা এই কাঁচা বয়সেই যেন বড় হয়ে গিয়েছে কয়েক গুণ । আইন বলছে, শিশুশ্রম নিষিদ্ধ । কিন্তু পেট সে কথা মানছে কোথায় ! আর তাই উৎসবমুখর কলকাতার চালচিত্রে আর পাঁচটা স্বাভাবিক জিনিসের মতোই তারা মিলে মিশে গিয়েছে । বয়স 18 পার না হলেও তাদের কারও হাতে আছে বেলুন, কারও হাতে সান্তা ক্লজের লাল টুপি । কেউবা হাতে নিয়ে ঘুরছে চকোলেট - আমার আপনার বাচ্চাদের জন্য । আমাদের আনন্দ, খুশি ওদের কাছে বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি আয়ের একটু উপায়মাত্র ।

চিত্র-1: স্থান পার্ক সার্কাস, সময় সন্ধ্যে 7টা ৷ পথেই দেখা মিলল বছর আট-নয়ের সমীরের সঙ্গে । বুকে স্কুল ব্যাগ, হাতে রয়েছে বেলুন । তার মতোই জনা চারেক বেচে বেড়াচ্ছে সেই বেলুন । পথচলতি মানুষকে তাদের আবেদন, একটা বেলুন নিন না । কেউ নিচ্ছেন, কেউ আবার বিরক্তি ভরে সরিয়ে দিচ্ছেন হাত । কেউ কেউ আবার ফুটপাথ পাল্টে নিচ্ছেন তাদের দেখে । কিন্তু তাদের এই ফেরি চলছেই । বছরের অন্য সময়ের তুলনায় উৎসবের এই দিনগুলিতে পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস চত্বরে ভিড় হয় ভালোই । আর সেখানেই বাড়তি আয়ের তাগিদে পথে নামা । তবে সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্ন থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যায় এই শিশুরা । পুলিশ দেখলেও দে ছুট । তাই এদের কাছে উৎসব হল পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা ।

আরও পড়ুন:প্রথমবার পাহাড়ে ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল আয়োজনে জিটিএ

চিত্র 2: স্থান ভিক্টোরিয়া, রাত 8টা ৷ বছর আটের সাব্বির হাতে নিয়ে ঘুরছে চকোলেট । বড়দিনের ছুটির এই সময়টায় প্রচুর মানুষের ভিড় হয় ভিক্টোরিয়ায় । তাদের ভরসায় ভাগ্য যাচাইয়ে নেমেছে সাবিরের মত আরও জনা পাঁচেক কচিকাঁচা । এদের কারও হাতে গোলাপ ফুল, কারও হাতে বেলুন, কেউবা নিয়ে বেচছে সান্তা ক্লজের লাল টুপি । ভাবতে অবাক লাগে, এই বয়সে এই জিনিসগুলোই তো টানে তাদের । উৎসবের দিনগুলোতে একটা বেলুন দেখে বা একটা চকোলেটের জন্য মায়ের কাছে বায়না জুড়ে দেয় কত খুদে । কিন্তু এদের জন্য সে সব কিছু অলীক কল্পনা । তাই উৎসব এদের জন্য আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকে বেশি কিছু নয় । বরং উৎসব এদের জন্য কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ ।

চিত্র-3: স্থান উত্তর কলকাতার শোভাবাজার মোড়, রাত 9টা ৷ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দুই ধারে এই চত্বরের ফুটপাথে বসবাস বেশ কয়েকটি পরিবারের । মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে রাস্তার ধারে লোহার রেলিং লাগোয়া প্লাস্টিকের ছাউনি । রাস্তায় কুড়িয়ে আনা কাগজ কাঠ এ সব জ্বালিয়ে ইট পেতে রান্না চলে । পথে আসা যাওয়ার পথে শিশুগুলিকে যে যেমন পারেন, সাধ্য মতো দু পাঁচ টাকা দিয়ে যান । উৎসবের আলো জ্বললে ওদের মনে নামে ঘোর অন্ধকার । ফুটপাথে ভিড় হলেই ফের ছাউনি হারাতে হবে তাদের । তবে পার্ক স্ট্রিটের মতো এই এলাকা নয়, এটাই এখন তাদের কাছে বড় স্বস্তির । কারণ ভিড় বাড়লে শহরে নিজের শেষ আশ্রয়টুকুকে হারিয়ে ফেলার ভয়ও বাড়ে । সত্যি কথা বলতে কী, বড়দিন বা এই উৎসব তাদের জন্য নতুন কিছু নয় । বরং সবটাই চেনা ছবি এই তিলোত্তমার । এই দিনটা এদের কাছে শুধুই আর একটা দিন ৷

শহরের শিশু শ্রমের বর্ণনা দিয়ে কবীর সুমন লিখেছেন, 'এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে, এই বাবু কোনওদিন পারবে কি জানতে...যে ছেলেটা প্রাণপণে রিকশা চালাচ্ছে, আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে...৷' আজাদি কি অমৃত মহোৎসবেও কি তবে শিশুদের প্রাপ্তি এটাই !!!

ABOUT THE AUTHOR

...view details