কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: আধুনিকতার ভিড়ে অনেক সময় হারিয়ে যায় ঐতিহ্য। ভারতবর্ষের অন্যতম পুরনো শহর কলকাতা। শহরের মতোই অনেক কিছুই এখানে প্রাচীন। তেমনই ইতিহাস বিজরিত গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ 98 বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা উঁচু করে ৷ অনেকেই হয়তো জানেন না, আর পাঁচটা গির্জার চেয়ে এটি একটু আলাদা ৷ কারণ বলা হয়ে থাকে এশিয়া মহাদেশের একমাত্র গ্রিক অর্থডক্স গির্জা এটি ৷ লম্বা লম্বা শ্বেত পাথরের সিঁড়ি পেরিয়ে প্রবেশ করতে হয় চার্চে। মেহগণী কাঠের আসবাব পত্র, মাথার উপরে বড়বড় শ্যান্দেলিয়ার নিয়ে সেজে থাকা গির্জা, কালীঘাট ট্রাম ডিপোর সন্নিকটে একাকি বয়ে নিয়ে চলেছে ফেলে আসা অতীত ৷
তিনটি প্রকান্ড ডোরিক স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে রয়েছে ত্রিভুজাকার ছাদ বিশিষ্ঠ ভবনটি। খিলান, কারুকার্য করা প্রবেশ দ্বার এবং তার অভ্যন্তরে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে উপাসনা কক্ষ। প্রভু যিশুর জন্মদিনে উৎসবের শান্ত ও স্নিগ্ধ আবেশে এই শহরের একমাত্র গ্রিক চার্চ আজও উজ্বল। আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে ঐতিহ্যের বাহক হয়ে জীবিত। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, 1774 নাগাদ অটোমান তুর্কিদের আক্রমণের ফলে থ্রেসিয়ান শহরের এড্রিয়ানোপোলিস এবং ফিলিপপুলিস থেকে বহু ধনি গ্রিক পরিবার ভারতে প্রবেশ করে। অনেকে আবার বাংলার দিকে চলে আসেন।
কলকাতায় এসে তাঁদের একটি প্রার্থনা শালার প্রয়োজন হয়। 1752 নাগাদ প্রথম গ্রিক গির্জা তৈরি করা হয় এজরা স্ট্রিটের কাছে। কিন্তু তারপরে সেই গির্জাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর 1781 সালে আর একটি গ্রিক গির্জা তৈরি করা হয় আমড়াতলায়। সেটিও হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে ৷ ধীরে ধীরে গ্রিকরা কালীঘাটের দিকে চলে আসেন। 1924 সালের 3 নভেম্বর কালীঘাটের এই গির্জাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তারপরের বছর 19 নভেম্বর এই চার্চে প্রথম প্রার্থনা সভা বসে। তবে 1960 সালে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায় চার্চটি ৷ 9 বছর পর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফাদার ক্যালিস্ট্রাটোস অ্যাডামো কলকাতায় এসে আবার এই চার্চটি খোলার উদ্যোগ নেন। তবে কলকাতায় আর গ্রিক ধর্মাবলম্বী না থাকায় গির্জা পুনরায় খোলার উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর 1991 সালে কলকাতার গ্রিক দূতাবাস পুনরায় এই গির্জা খোলার উদ্যোগ নেয়। এই প্রচেষ্টার প্রধান কাণ্ডারী ছিলেন ফাদার ইগনেসিওস। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন সিস্টার নেকটারিয়া পারদিসি। দুজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলেই পুনরায় ভক্তদের জন্য খুলে যায় গ্রিক অর্থডক্স গির্জার দরজা। ইস্তানবুলের গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের আধ্যাত্মিক শিকড়কেই এখানে মানা হয়। দিল্লির গ্রিক দূতাবাস এই গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে। কলকাতায় ফাদার রাফায়েল 10 বছর ধরে এই গির্জার প্রধান পাদ্রি ৷ তাঁর তত্ত্বাবধানেই চলে গির্জার কাজ ৷ যাতে সকলে প্রার্থনা বুঝতে পারেন, তাই এখানে বাংলায় পবিত্র বাইবেল পড়েন ফাদার রাফায়েল। বর্তমানে হাতে গোনা কিছু গ্রিক ধর্মাবলম্বীরা নিয়মিত এই গির্জায় প্রার্থনা করতে আসেন। তবে বড়দিন এবং ইংরিজি নতুন বছরে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এই ধবধবে সাদা ত্রিভুজাকার ভবনে প্রার্থনা এবং সাজসজ্জা দেখতে ভিড় করেন।