কলকাতা, 2 নভেম্বর: দলে থাকতে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করতে শোনা যায়নি তাঁকে । কিন্তু তৃণমূলে যোগদানের পর থেকেই লাগাতার বিজেপি-কে বিঁধে আসছেন বাবুল সুপ্রিয় । মঙ্গলবারও সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন তিনি । উপনির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবির জন্য কাঠগড়ায় তুললেন বিজেপি নেতৃত্বকে ।
মঙ্গলবার উপনির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর নতুন করে আত্মসমীক্ষার দাবি উঠছে বিজেপি-র অন্দরে । কারণ মাত্র ছ’মাসের মধ্যে জিতে আসা শান্তিপুর এবং দিনহাটা, দু’টি কেন্দ্রই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে তাদের ৷ জোড়াফুলের সামনে গোসাবা এবং খড়দায় মাথাই তুলতে পারেনি তারা ৷ তিন কেন্দ্র জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৷
আরও পড়ুন:Trinamool Congress : উপনির্বাচনেও বাংলা সবুজ
সেই নিয়েই বিজেপি এবং দলের নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করলেন বাবুল ৷ এ দিন টুইটারে তিনি লেখেন, ‘দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া ভাল কী আর করতে পারে বিজেপি ৷ দলের একনিষ্ঠ কর্মী, যাঁরা কি না মনপ্রাণ দিয়ে দলের জন্য রক্ত এবং ঘাম ঝরায়, তাঁদেরই অপমান করে বিজেপি, পিছন থেকে ছুরি মারে ৷ দলের বর্ষীয়ান নেতারা, যাঁরা এক সময় দলের স্তম্ভ ছিলেন, একে একে কত জন মুখ খুলছেন দেখুন ৷’
দলে থাকাকালীনই ভোটের আগে তৃণমূল ভাঙিয়ে দলভারি করা নিয়ে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বাবুল । কিন্তু সেই সময় তাঁর ওজর আপত্তি খাটেনি । বরং ভোটে পরাজয়ের পর কেন্দ্রে তাঁর মন্ত্রিত্বই চলে যায় । তার পরই তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল ।
সেই সময় তাঁর সমালোচনা করলেও, সম্প্রতি তৃণমূলে থেকে লোক ভাঙিয়ে দলভারি করা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতেও । তৃণমূল থেকে আসা লোকজনকে ভরসা করেই ভরাডুবি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি । একে একে সকলকে বিদায় দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি ।
আরও পড়ুন:Dilip Ghosh: তিন কেন্দ্রে জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও সন্ত্রাসের তত্ত্বেই অনড় দিলীপ
এর আগে, নির্বাচনী পরাজয়ের আঁচ দিলীপকেও পোহাতে হয়েছে । রাজ্য সভাপতি থেকে সরিয়ে নামমাত্র সর্বভারতীয় সভাপতির পদে বসানো হয় । তাই তৃণমূল থেকে লোক নেওয়া নিয়ে তাঁকে এখন আক্ষেপ করতে দেখে তথাগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান নেতাও দিলীপকে একহাত নিয়েছেন । সরাসরি দিলীপের নাম না করলেও, টুইটে বাবুলও দিলীপকেই নিশানা করেছেন বলে করছে রাজনৈতিক মহল । নিজের টুইটে আবার সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করেছেন বাবুল, উপনির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর কয়েক ঘণ্টা আগেই যিনি বিজেপি-র উদ্দেশে শ্লেষ দাগেন ।
উপনির্বাচন থেকেই 2024-এর লোকসভার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে এ দিন শোনা যায় একাধিক তৃণমূল নেতার মুখে । বাবুলের গলাতেও সেই একই সুর । বিজেপি-র যা প্রাপ্য ছিল, তা-ই পেয়েছে বলে মত তাঁর । টুইটারে লেখেন, ‘দিদি আপনাকে অভিনন্দন । বিজেপি যা পাওয়ার যোগ্য, তা-ই পেয়েছে । জনতা বিরোধী এই দল, যারা পিছন থেকে তৃণমূলস্তরের নেতাদের পিছন থেকে ছুরি মারে, অভব্য আচরণ করে তাঁদের সঙ্গে, অযোগ্য নেতাদের নিয়ে 2024-এ কটা আসন জিততে পারে দেখব।’
তবে শুধু বিজেপি-কে আক্রমণ করেই থামেননি বাবুল । বিজেপি-তে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা মন্তব্য এ দিন শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে । বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র পরাজয়ের পর ‘বাংলার মানুষ ঐতিহাসিক ভুল করেছেন’ বলে বিজেপি-র হয়ে নেটমাধ্যমে লিখেছিলেন বাবুল । এ দিন পুরনো সুর বদলে বাবুল লেখেন, ‘এটা মানুষের জয় । অপপ্রচার এবং ঘৃণার রাজনীতির পরিবর্তে বাংলা যে উন্নয়ন এবং ঐক্যই বেছে নেবে, আজকের ফলাফলই তার প্রমাণ ।’ মানুষের আশীর্বাদ সঙ্গে থাকলে আগামী দিনে এ ভাবেই তৃণমূল বাংলাকে শিখরে নিয়ে যাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন বাবুল ।