কলকাতা, 16 জুন:পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পেশ করাকে ঘিরে গত তিন দিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়ে ৷ ইতিমধ্যেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য আজ ভাঙড়ে নিজে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । কিন্তু রাজ্যপালের পরিদর্শনের আগেও প্রোটোকল মেনে এলাকায় চেকিং-এর বালাই নেই ৷ বরং রাজ্যপালের যাওয়ার পথে মিলল একটি তাজা হাত বোমা ৷ রাজ্য পুলিশের কারওকে না পেয়ে রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানই হাতে করে অন্যত্র সরালেন সেই বোমাটিকে ৷ এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে ৷
একে বোমা-গুলির তাণ্ডবে থমথমে পরিস্থিতি ৷ তার উপর পরিদর্শনে যাচ্ছেন রাজ্যপাল ৷ প্রোটোকল অনুযায়ী, রাজ্যপালের পরিদর্শনের আগে গোটা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ আছে কি না তা নিশ্চিত করার কথা রাজ্য পুলিশের ৷ কিন্তু শুক্রবারও ভাঙড়ে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল ৷
এ দিন রাজ্যপাল ভাঙড়ে ঢোকার আগে স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা মোট সাতটি ব্যাগে তাজা বোমা উদ্ধার করেন । সেই ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে । তার পরেও হয়নি যথাযথ চেকিং ৷ সে জন্যই রাজ্যপাল ভাঙড়ে যাওয়ার সময় তাঁর রাস্তাতেই মিলেছে একটি তাজা হাত বোমা । সামনা সামনি পুলিশকে না পেয়ে রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একজন জাওয়ান নিজেই হাতে করে ওই হাত বোমা সেখান থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র রেখে আসেন । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই পুলিশি ব্যর্থতার ছবি আরও প্রকট হল বলে অভিযোগ উঠেছে ।
আরও পড়ুন:ভাঙড়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে রাজ্যপাল
গোটা ঘটনায় উঠে আসছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন...
1. কেন রাজ্যপাল আসার আগে গোটা ঘটনাস্থল নিয়ম মেনে চেকিং করা হল না ?
2. কেন রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সেই বোমাটিকে খালি হাতে উদ্ধার করলেন ?
3. কেন ঘটনাস্থলে কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দেখা মিলল না বা পুলিশি সাহায্যের ছবি চোখে পড়ল না ?
ভাঙড়ে সন্ত্রাসের ঘটনায় রাজ্যপালের এই সফরকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে । এ দিন সকাল দশটা নাগাদ কলকাতার রাজভবন থেকে দক্ষিণ 24 পরগনার উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । এরপরে ভাঙড়ে ঢুকে তিনি বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন । পাশাপাশি ভাঙড়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে আলাদাভাবে তিনি কথা বলে জানতে চান যে, গতকাল ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে কোন কোন পুলিশকর্মী ছিলেন ।
আরও পড়ুন:শুক্রবারই ভাঙড়ে যাচ্ছেন রাজ্যপাল, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি আনন্দ বোসের
এ দিন রাজ্যপাল আসার খবর সামনে আসার পরেই স্থানীয় কাশীপুর থানা এবং ভাঙড় থানার উদ্যোগে কয়েকজন পুলিশ কর্মী ওই এলাকায় যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বোমা উদ্ধার করেন । কিন্তু এখানেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে । প্রশ্ন উঠছে, যেখানে দিনভর মনোনয়নপত্র পেশ করাকে কেন্দ্র করে অশান্তি এবং মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা গুলি চলল, ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, সেখানে এই ঘটনায় ঠিক 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজ্যপাল ঘটনাস্থলে আসার আগে কেন সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হল না ৷
এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের সিআইডির এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণ পুলিশকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলার ডিউটি করেন । কিন্তু এলাকায় বোমা কোথায় কোথায় থাকতে পারে তা বুঝতে এবং সেইগুলি রিকভারি বা উদ্ধারকাজে যাঁরা সিদ্ধহস্ত তাঁরা সিআইডির স্পেশাল বম্ব স্কোয়াডের গোয়েন্দা । এই ক্ষেত্রে কেন তাঁদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হল না, সেই বিষয়টি জানা নেই ।