কীসের নথি পুড়েছে ভাঙরে ? ঘনাচ্ছে রহস্য কলকাতা, 18 এপ্রিল:ভাঙড়ের ফাঁকা মাঠে কীসের নথিপত্র পুড়ছিল মঙ্গলবার সকালে, তা জানতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাকেশ রায়চৌধুরীকে তলব করলেন সিবিআই তদন্তকারীরা ৷ নিজাম প্যালেস সূত্রে এমনই খবর জানা গিয়েছে ৷ যে জমিতে মঙ্গলবার ওই নথিগুলি পোড়ানো হচ্ছিল তা রাকেশের জমি বলে খবর ৷ যদিও ভাঙরের আন্দুলবেড়িয়া এলাকায় তাঁর কোনও জমি নেই বলে জানিয়েছেন রাকেশ ৷
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা ওই এলাকার ফাঁকা মাঠে জড়ো করে রেখেছিলেন একাধিক নথিপত্র । পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । এরপর সকালে স্থানীয়রা দেখতে পান, বিশাল এলাকা জুড়ে আগুন জ্বলছে । ওই নথিগুলি কীসের, কেন তাতে আগুন ধরানো হল, তা এখনও অস্পষ্ট । ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ । সিবিআই-এর বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও এলাকায় যান ৷
ইতিমধ্যেই আধ পোড়া বহু নথিপত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে সেখান থেকে উদ্ধার করেছে সিবিআই ৷ নিজাম প্যলেস সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া নথিগুলি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে । তবে এলাকাবাসীদের একটা অংশের দাবি, শুধু সোমবার নয়, ওই পাঁচিল ঘরে জমিতে গত কয়েকদিন ধরেই একাধিক গাড়ি আসছিল আর সেখানে বিভিন্ন নথি ফেলা হচ্ছিল ৷
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে পুড়ল সরকারি নথি ! 'দুর্নীতির প্রমাণ' বাঁচাতে মাঠে সিবিআই
সিবিআই সূত্রের খবর, এই নথিগুলি চাকরি চুরির নথিও হতে পারে । তবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে সময় লাগবে ৷ জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে একাধিক চেক । তাতে কোনও ব্যক্তির সই আছে । আছে একাধিক পাস বই । একাধিক রেজাল্ট ও প্রশ্নপত্রও থাকতে পারে ৷ এই বিষয় আরও ভালোভাবে জানার জন্য সংশ্লিষ্ট জমির মালিক তথা শাসকদলের স্থানীয় নেতা রাকেশ রায়চৌধুরীকে মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে তলব করেছে সিবিআই ।
যে পাঁচিল ঘরে জমিতে এদিন ওই নথিগুলি পোড়ানো হচ্ছিল তা আসলে একটি বাগানবাড়ির জমি বলে জানা গিয়েছে ৷ এই বাগানবাড়ির মালিক হিসেবে রাকেশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে গৌতম মণ্ডল নামে আরও এক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে ৷ দুজনেই এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত ৷ এই গৌতম ও রাকেশ আবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে । যদিও রাকেশের মতো গৌতমও এই জমি তাঁর নয় বলে দাবি করেছেন ৷
তাঁদের বক্তব্য, এই জমির মালিক বিহারের বাসিন্দা । তাঁরা এয়ারফোর্সে চাকরি করেন । যে নথিগুলি পোড়ানো হয়েছে, সেগুলিও বিহার, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানার বলেও একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে ৷ মূলত 2008-10 সালের নথি সেগুলি ।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন,"বাংলায় একটা কাগজ পুড়লেও সিবিআই চলে আসে ৷ এজেন্সির তদন্ত করে দেখা উচিত । আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে । তদন্তে আমাদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে । এখানে যদি রাকেশ ও গৌতমের কোনও হাত থাকে, তাহলে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই ।" এরপরই তাঁর সংযোজন, আসলে বাংলায় যদি কোনও কাগজও পোড়ে, তা নথি বলে দেখানো হয় । এটা তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা ৷
ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি বলেন,"ওটা শওকত মোল্লার এলাকা । ইতিমধ্যেই শওকত মোল্লাকে ডেকেছিল সিবিআই । কারণ তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন । কী নথি পুড়েছে তা তদন্তেই বেরোবে । যারা নথি পোড়াচ্ছিল, তাদের জবানবন্দি খুব প্রয়োজন । তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার । তা না হলে তাঁদেরও গুম করে দেওয়া হতে পারে ।"