কলকাতা, 8 জানুয়ারি:চেন্নাই থেকে কলকাতায় আনার পথে ফিল্মি কায়দায় 10 কোটি টাকার আইফোন লুট ! পুরো ঘটনায় মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।
ফিল্মি কায়দায় লুট: ঘটনা শুনলে মনে পড়ে যাবে বলিউডের ধুম 2 ফিল্মের কথা ৷ সেখানে চলন্ত ট্রেন থেকে হিরে চুরি হয়েছিল ৷ আর এ ক্ষেত্রে চলন্ত অবস্থাতেই একটি লরি থেকে আইফোন লুট করে অন্য লরিতে তোলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ একটি পরিবহণ সংস্থা লরিতে করে আইফোন নিয়ে আসার পথে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পরেই তা লুট করা হয় বলে অভিযোগ । মাস দুয়েক আগের এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কিনারা না করতে পারায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ওই পরিবহণ সংস্থা । তবে পুলিশ জানতে পেরেছে ওই লুট হওয়া মোবাইলের অনেকগুলি এখন চালু রয়েছে । এর থেকে অনুমান যে, ওই মোবাইল চালু করে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে ।
জিপিএস সিস্টেম সত্ত্বেও লুট:হাইকোর্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর 26 সেপ্টেম্বর চেন্নাই থেকে লরিটি মোট 9.70 কোটি টাকা মূল্যের অ্যাপলের আইফোন নিয়ে যাত্রা শুরু করে । গন্তব্য ছিল কলকাতা । লরির উপর নজরদারি করতে অত্যাধুনিক 'জিপিএস সিস্টেম' ব্যবহার করে পরিবহণ সংস্থাটি । যাতে লরিটি 5 মিনিটের বেশি কোথাও দাঁড়ালে সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে পরিবহণ সংস্থার অফিসে । সঙ্গে সঙ্গে অফিস থেকে গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে । তাঁকে গাড়ির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে সংস্থার আধিকারিকদের কাছে ।
কীভাবে লুট: অভিযোগ, লরিটি রওনা হওয়ার পরের দিন তিনটি রাজ্য পেরিয়ে 6 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে । অফিস জানতে পারে, গত বছর 28 সেপ্টেম্বর ভোর 6টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের নতুন বাজার এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি 5 মিনিটের বেশি দাঁড়িয়েছিল । তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সংস্থার কর্মীরা । কিন্তু লরির চালককে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ । বাধ্য হয়ে 45 মিনিট পরে ডেবরা থানায় খবর দেয় পরিবহণ সংস্থাটি । ঘটনাস্থলে গিয়ে লরিটি উদ্ধার করে পুলিশ । পুলিশ গিয়ে দেখে লরিটি ফাঁকা । গাড়িতে কোনও আইফোন নেই । সেখানে চালক, খালাসি কারওকেই দেখা যায়নি । ফোন লুটের বিষয়ে এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি ।
চলন্ত অবস্থায় লুট: হাইকোর্টে ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী অপলক বসু বলেন, সম্ভবত চলন্ত অবস্থাতেই ওই লরি থেকে আইফোনগুলি লুট করা হয়েছে । কারণ, তার আগে গাড়িটি কোথাও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল না । এ রাজ্যে ঢোকার পরে ওই লরির পাশাপাশি আরেকটি লরি চলে আসে । দু'টি গাড়ি দীর্ঘক্ষণ একই গতিতে পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছিল । ওই অবস্থাতেই ফোনগুলি লুট করা হয়ে থাকতে পারে । ডেবরার টোলপ্লাজার আগেও লুটের ঘটনা ঘটতে পারে । যাতে টোলপ্লাজায় গাড়িগুলির যোগসাজশ শনাক্ত করা না যায় । পরিকল্পনামাফিক টোলপ্লাজা পার হওয়ার পরে গাড়িটি ফেলে রেখে চালক ও খালাসি পালিয়ে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের: বিস্মিত বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত আপাতত জেলার পুলিশ সুপারকে এই তদন্তের নজরদারি করতে নির্দেশ দিয়েছেন । আগামী 2 ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি । ওই দিন পুলিশকে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে । মামলার কেস ডায়েরি নিয়ে হাজির হতে হবে পুলিশকে ।
আরও পড়ুন:
- এসএসকেএমে ঠাঁই কতজন গ্রেফতার হওয়া ভিভিআইপি'র ? জানতে চাইল হাইকোর্ট
- তদন্তে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে তীব্র ভর্ৎসনা
- জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার মামলায় ফের স্বস্তি বিজেপির! বিধায়কদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়, নির্দেশ হাইকোর্টের