কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: বিবাহিতা কন্যাও পরিবারের সদস্য । পরিবারের প্রাপ্য চাকরি বিবাহিতা কন্যাকে দিতে হবে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের এই নির্দেশকেই মান্যতা দিল ডিভিশন বেঞ্চ ।
বিয়ের পরেও মেয়েরা বাবার সম্পত্তির অংশীদার । তাহলে বাবার মৃত্যুর পর কেন সেই মেয়ে পরিবারের সদস্য হবেন না ? এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা । দশ বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেই নির্দেশ পালন করেনি বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ । এত বছর পর শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চও সেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকেই মান্যতা দিল ।
বীরভূমের বাসিন্দা রেখা পাল । তাঁর বাবার সম্পত্তি বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার । গত 12 অক্টোবর 2012 সালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় । সেই নির্দেশিকা অনুসারে বিশেষ ছাড়ের কোটাতে আবেদন জানান রেখা পাল । সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেখা চাকরির আবেদন জানান । কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয় এই কারণ দেখিয়ে যে, রেখা পাল বিবাহিতা । তাই তিনি বিশেষ কোটাতে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত প্রার্থী নন ।
কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তিনি বিধবা মায়ের দেখাশোনার দায়-দায়িত্ব পালন করে আসছেন । বাধ্য হয়ে রাজ্য সরকারের প্রকাশিত নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে 2013 সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রেখা । বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী 2014 সালে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকাকে অসাংবিধানিক বলে তা খারিজ করে দেন । পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, রেখা পাল বিবাহিত হলেও তাঁকে তাঁর বাবার পরিবারের সদস্য হিসাবে ঘোষণা করার এবং তাঁকে বিশেষ কোটায় অন্তর্ভুক্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয় । বিচারপতি তাঁর রায়ে জানান, জমিহারা হিসেবে বিশেষ কোটায় চাকরি পাওয়ার যোগ্য রেখা ৷
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় । দীর্ঘ 10 বছর কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাস ঘুরে অবশেষে মামলা আসে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে । মামলাকারী রেখা পালের পক্ষের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী যুক্তি দেন, কেন বিবাহিতা মেয়েকে তাঁর পিতার পরিবারের সদস্য বলে গণ্য করা হবে না ? যদি পুত্র অথবা বিবাহ বিচ্ছিন্ন মেয়েরা পরিবারের সদস্য হন, তাহলে বিবাহিতা মেয়েরাও তাঁর পিতার পরিবারের সদস্য । তাই রাজ্যের নির্দেশিকা অসাংবিধানিক । তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ দেখিয়ে কারওকে এ ভাবে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না । বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা ও মামলা ঝুলিয়ে রাখার জন্য মামলাটি খারিজ করে দেন এবং অবিলম্বে ওই মহিলাকে চাকরিতে নিযুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন ।
আরও পড়ুন:
- চোর সন্দেহে থানায় নিয়ে গিয়ে অকথ্য অত্যাচার, আইসির বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট পেশ হাইকোর্টে
- প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের
- প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় দ্রুত চার্জ গঠন করে নিম্ন আদালতে বিচার শুরুর নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের