কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: পুলিশ চাইলে আইএসএফ নেতা তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধুকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ (Virtual Police Interrogation of Nawsad Siddique Friend) করতে পারে ৷ কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না ৷ শুক্রবার নৌশাদ সিদ্দিকীর ব্যবসায়ী বন্ধু শামসুর আলমের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Justice Rajasekhar Mantha) ৷
ঘটনাটি ঠিক কী ?
আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ করেন দলের নেতা ও কর্মীরা ৷ সেই কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর ৷ তার জেরে গ্রেফতার হন নৌশাদ ৷ এখনও মুক্তি পাননি তিনি ৷ এদিকে, তাঁর কাছে থেকে দু'টি স্মার্ট ফোন বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশ ৷ সেই ফোন ঘেঁটে শেখ শামসুর আলমের নাম পায় তাঁরা ৷ শামসুর চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ৷ সেখানেই তিনি রত্নের ব্যবসা করেন ৷ নৌশাদকে গ্রেফতার সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয় ৷ কিন্তু, শামসুর তাতে সাড়া না দেওয়ায় তাঁর চেন্নাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ ৷
আরও পড়ুন:নৌশাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল, অনুমতি চেয়ে আদালতে সিপিএম
এই প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন শামসুর ৷ তাঁর বক্তব্য, নৌশাদ তাঁর বন্ধু এবং তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী ৷ নৌশাদকে কলকাতায় রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ সেই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন শামসুর ৷ তাঁর প্রশ্ন, কেন তাঁকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে ? তাই ঘটনায় অব্যাহতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শামসুর আলম ৷
শুক্রবার মামলার শুনানি চলাকালীন শামসুর আলমের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "শেখ শামসুর আলম আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধু ৷ নৌশাদের মোবাইলে তাঁর নাম পায় পুলিশ ৷ তিনি একজন ব্যবসায়ী ৷ তাঁর সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ থাকতে পারে ৷ নৌশাদকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায় ৷ কলকাতাতেই রাজনৈতিক বিক্ষোভ হয়েছিল ৷ তাতে নৌশাদ গ্রেফতার হন ৷ তিনি এখনও বন্দি রয়েছেন ৷ অন্য়দিকে, তাঁর বন্ধুর চেন্নাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে ! তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে !"
বিকাশরঞ্জনের সওয়ালের জবাবে রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল বলেন, "এফআইআরে নাম থাকা দুই ব্যক্তির জবানবন্দিতে এই মামলার আবেদনকারী শেখ শামসুর আলমের নাম উঠে এসেছে ৷ তাই তাঁকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার ৷ কারণ, এক্ষেত্রে বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হতে পারে ৷ সেই নথি হাতে হাতে খতিয়ে দেখা দরকার ৷"
প্রসঙ্গত, নৌশাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ সেই মামলাগুলির শুনানি চলছে নিম্ন আদালতে ৷ তার মধ্যে একটি মামলায় চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে ৷ সেই একই ঘটনায় এবার নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধু শামসুরকে সাক্ষী হিসাবে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ ৷
কলকাতা পুলিশের বক্তব্য জানার পর বিচারপতি মান্থা বলেন, "পুলিশকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হয়, সেক্ষেত্রে নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধুর জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে বন্দোবস্ত করা যেতেই পারে ৷ তাছাড়া, যে মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, সেই একই মামলায় কাউকে কি আবার সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠানোর নোটিশ দেওয়া যায়?"
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে অ্য়াডভোকেট জেনারেল বলেন, "তদন্তের প্রয়োজনে নিশ্চয় চার্জশিট পেশের পরও কাউকে সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠানোর নোটিশ দেওয়া যায় ৷ সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করতে হবে ৷ নৌশাদের বন্ধুকে নিউ মার্কেট থানায় রুজু হওয়া মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে ৷ বেশ কিছু নথিও খতিয়ে দেখতে হবে ৷ ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদে সেটি সম্ভব নয় ৷"
দুই পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, পুলিশ শেখ শামসুর আলমকে ভার্চুয়ালি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে ৷ কোনও নথির প্রয়োজন হলে তার জন্য শামসুর আলমকে নোটিশ পাঠিয়ে তা পেশ করতে বলতে হবে ৷ এর জন্য ওই ব্যবসায়ীকে 72 ঘণ্টা সময় দিতে হবে ৷ পাশাপাশি, তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য রিপোর্ট আকারে আদালতে জমা করতে হবে পুলিশকে ৷ পরবর্তীতে পুলিশ যদি শামসুরকে হেফাজতে নিতে চায়, তার জন্যও আদালতে আবেদন করতে হবে ৷ কিন্তু, তার আগে পর্যন্ত শেখ শামসুর আলমের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না ৷ 2 সপ্তাহ পর এই মামলার ফের শুনানি হবে ৷