কলকাতা, 9 অক্টোবর : আর জি কর হাসপাতালে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ 13 সেপ্টেম্বর মধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনের সজাগ দৃষ্টি দেওয়া জরুরি বলে তাদের পর্যবেক্ষণ ।
সত্য লুকোচ্ছে হাসপাতাল, দাবি করে আর জি কর হাসপাতালের বিরুদ্ধে 29 জুন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন মৃত শিশুর বাবা । 12 জুন চন্দননগরের বাসিন্দা বাবান মণ্ডলের স্ত্রী চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে এক সন্তানের জন্ম দেন । তারপর সদ্যোজাতর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় রেফার করা হয় । 13 তারিখ আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয় ।
ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর সন্তান হাসপাতালের SMCU বিভাগে ভরতি ছিল । সেই জন্য নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ওই বিভাগে কখনও ঢুকতে দেয়নি । হাসপাতালের তরফে শুধু বলা হয়েছিল, কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডেকে নেওয়া হবে । সেইমতো তিনি মাঝে মাঝে রিপোর্টগুলো দিয়ে আসতেন, আর বাইরে বসে থাকতেন । 15 জুন তাঁর স্ত্রীকে চন্দননগর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় । 21 তারিখ সেলাই কাটা হয় ।
তখন বাবান মণ্ডল ফোন করে বাড়িতে জানান প্রসূতি বিভাগে যেহেতু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ফলে স্ত্রী যদি হাসপাতালে আসে তাহলে ঢুকতে পারবে এবং সন্তানকে দেখতে পাবে । সেইমতো 23 জুন বাবান মণ্ডলের স্ত্রী হাসপাতালে আসেন । কিন্তু তাঁদের কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি । 25 জুন সন্তানকে দেখার জন্য তাঁরা খুব জোরাজুরি করলে জানানো হয়, 15 জুন তাঁদের সন্তান মারা গেছে । মর্গে দেওয়া হয়েছে এবং মারা যাওয়ার পরপরই মাইকে ঘোষণা করে জানানো হয়েছিল ।
বাবান মণ্ডলের দাবি , এই কথা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের মৃতদেহ দেখতে চান তাঁরা । কিন্তু 25 জুন তাঁদের মৃতদেহ দেখানো হয়নি । 26 জুন তাঁদের একটি বিকৃত মৃতদেহ দেখানো হয় । তিনি জানান, এটি তাঁর সন্তান নয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে অভিযোগ জানান এবং দাবি করেন মৃত সন্তানের DNA টেস্ট করা হোক । পাশাপাশি ময়নাতদন্ত করা হোক । কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি । সেই জন্য তিনি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ।
বাবান মণ্ডলের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি মামলার শুনানিতে বলেন,"যে বিকৃত মৃতদেহ দেখানো হয়েছে সেটা তাঁর সন্তান নয় । অবিলম্বে মৃতদেহের DNA টেস্ট করা হোক । ময়নাতদন্ত করা হোক । এবং হাসপাতালের চিকিৎসক ও অন্য কর্মচারীদের লাইসেন্স বাতিল করা সহ উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক । কারণ তাদের সন্তান যদি মারা যাবে তাহলে দশ দিন পর কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটা জানাবে ?"
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে আগেই মৃতদেহের DNA টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছিল কিন্তু এখনও সেই রিপোর্ট আসেনি । মামলাকারীর বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ দ্বিতীয়বার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল আজ ।