কলকাতা, 11 ডিসেম্বর: ট্রাম কতৃপক্ষ খালি ট্রাম বিক্রি করতে বসে রয়েছে ? কর্মচারীদের বেতন দেওয়া বা কি করে পুনরায় ভালো পরিষেবা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে কোনও চিন্তাভাবনাই কি নেই তাদের ? কলকাতা শহরের ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে সোমবার এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ৷
কলকাতার ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল ৷ তারপর সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ৷ এ দিনের শুনানিতে সেই কমিটি কোনও বৈঠক করেছিল কিনা, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি ৷ মামলাকারীর আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী আদালতে আজ বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দু’টি বৈঠক হয়েছে ৷ যে বৈঠকে কয়েকটি রুটে কলকাতা পুলিশ ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করেছে ৷ যেখানে সহমত পোষণ করেছে কলকাতা ট্রাম কর্তৃপক্ষও ৷’’ তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘কোনও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই এই আপত্তি তোলা হয়েছে ৷’’
যার পরেই কলকাতা পুলিশ ও ট্রাম কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ আদালত জানিয়েছে, পুলিশ এভাবে ট্রাম চালানোর বিরোধিতা করতে পারে না ৷ ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য ৷ অহেতুক বিতর্ক তৈরি না করে, একে রক্ষা করার কথা বলেন প্রধান বিচারপতি ৷ প্রয়োজনে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার পরামর্শ দেয় তিনি ৷ আর সেই কাজে গঠিত কমিটিকে উদ্যোগী হওয়ার কথা জানায় আদালত ৷ এমনকি কলকাতা পুলিশের আপত্তির কারণ কী ? তা খতিয়ে দেখে সমাধান বের করার পরামর্শ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
আদালতের তরফে বলা হয়, ‘‘সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে যে কমিটি হয়েছে, সেখানে বেসরকারি সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হোক ৷ পিপিপি (সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ) মডেলে কিছু করা হোক ৷ না হলে পুরো উদ্যোগ নষ্ট হবে ৷ কমিটি প্রথমে ভাববে কীভাবে ট্রামকে আধুনিক করা যায় ৷ বসার আসন থেকে শুরু করে, ভিতরের খোলনলচে বদলে সমস্ত কিছু অত্যাধুনিক করতে হবে ৷ যাতে সব বয়সী যাত্রীদের আকর্ষিত করা যায় ৷ আদালত আশা করছে রাজ্য আগামী দিনে ফলপ্রসূ কিছু জানাবে ৷’’
18 জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের শীতকালীন ছুটির পর এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে ইতিবাচক রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ অন্যদিকে, মামলাকারীর আইনজীবীর একাধিক অভিযোগে ট্রাম কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে আদালত ৷
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘ট্রাম কোম্পানি কী করছে ?’’ আইনজীবীদের তরফে জবাব আসে, ‘‘কর্তৃপক্ষ মাত্র একটি রুটে ট্রাম চালানোর পক্ষে ৷’’ যা শুনে প্রধান বিচারপতি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘ওরা শুধু বিক্রি করার জন্য রয়েছে ? কর্মচারীদের বেতন ওরা দিতে পারবে না ? আনুমানিক কতগুলি ট্রাম প্রয়োজন হতে পারে চালানোর জন্য ?’’ আইনজীবীরা বলেন, ‘‘বহু ট্রাম প্রয়োজন ৷’’ যা শুনে ফের বিচারপতি পরামর্শ দেন, ‘‘যারা ট্রাম অপারেট করতে পারবে, এই ধরনের কোনও সংস্থার সঙ্গে কথা বলুন ৷ তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখুক ৷ তারা কী করতে পারে দেখা যাক !’’
আরও পড়ুন:
- পরাধীনতার শিকল ভেঙে 77 বছরের স্বাধীনতা, কলকাতার ট্রাম দেখেছে সবটাই
- বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা, বন্ধ রুটে ট্রাম লাইন তুলে দেওয়ার পরামর্শ ফিরহাদের
- মেট্রোর কাজের জন্য ফের বন্ধ হতে চলেছে কলেজস্ট্রিট- শ্যামবাজার রুটের ট্রাম