কলকাতা, 28 জুন:নিজেরজয়েন্ট এন্ট্রান্সের র্যাঙ্ক জাল করে নিজেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন এক পরীক্ষার্থী ৷ তাঁর এই কীর্তি দেখে হতবাক হয়ে যান বিচারপতি ৷ তিনি মামলাটি খারিজ করে দিলেও, পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি ৷
একদিনের মধ্যে জয়েন্টের র্যাঙ্ক পরিবর্তনে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট । সিবিআইয়ের মতো সংস্থাকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ । সেই মামলাই বুধবার খারিজ করে দিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ ।
গত 26 মে জয়েন্টর ফলাফল প্রকাশিত হয় । আবেদনকারী পলাশ পাত্র (নাম পরিবর্তিত) আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 16 নম্বর এবং ফার্মেসিতে 24 নম্বর স্থান অধিকার করেন বলে আদালতে জানিয়েছিলেন । তিনি দাবি করেন, পরের দিন তিনি দেখেন, আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাঁর ব়্যাঙ্ক 1,439 নম্বর এবং ফার্মেসিতে তিনি রয়েছেন 3,920 নম্বর স্থানে । এই ব়্যাঙ্কিং দেখে নাকি তাজ্জব বনে যান তিনি । ওই দিনই আবেদনকারী জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান । 29 মে বোর্ডকে তিনি সমস্ত নথিপত্র দেন ।
এরপর 30, 31 মে এবং 6 জুন বোর্ডকে ফের চিঠি দেওয়া হয় । কিন্তু বোর্ড কোনও জবাব না দেওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ছাত্র । তাঁর আইনজীবী বলেন, এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত তাঁদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে ।
আরও পড়ুন:টেট পাসের নম্বর নিয়ে মতভেদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির, মামলা সরল অন্য বেঞ্চে
গত 20 জুন বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানতে চান, আবেদনকারী সর্বভারতীয় জয়েন্টে কত ব়্যাঙ্ক করেছেন ? আইনজীবী জানান, সেখানে ব়্যাঙ্ক 1,515 নম্বর । সরকারি আইনজীবী বলেন, আবেদনকারী এখানে জালিয়াতি করেছেন । আবেদনকারী মামলা প্রত্যাহার না করলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
বিচারপতি চন্দ সরকারি আইনজীবীকে বলেন, "আপনি এই ভাবে ওই ছাত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না । এই ঘটনা গুরুতর । উপযুক্ত তদন্ত না হলে সিবিআইয়েরর মতো তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ জারি করতে আদালত বাধ্য হবে ।"
সেই মামলার এ দিনের শুনানিতে মামলাকারী জানান, চলতি বছরেই জয়েন্টে বসেছিলেন । কিন্তু রেজাল্ট বেরনোর পর কিউআর কোড স্ক্যান করে তিনি প্রথমে নিজের যে র্যাঙ্ক দেখেছিলেন, তা পরে হঠাৎ বদলে যায় । এরপর বিচারপতি এজলাসে বসেই নিজেই স্মার্টফোনে কিউআর কোড স্ক্যান করেন । শুধু নিজের নয়, আইনজীবীর ফোন থেকেও স্ক্যান করানো হয় কিউআর কোড । দেখা যায়, দ্বিতীয়বার যে র্যাঙ্ক পরীক্ষার্থী দেখেছিলেন, সেটাই ঠিক । যার পর পরীক্ষার্থীকেই পালটা প্রশ্ন করতে শুরু করেন বিচারপতি । এরপর আদালতে বিচারপতির প্রশ্নের সামনে ভেঙে পড়েন ওই পরীক্ষার্থী । পরীক্ষার্থী বিচারপতির কাছে স্বীকার করে নেন, তিনিই র্যাঙ্ক সংক্রান্ত ডাউনলোডেড নথি জালিয়াতি করেছিলেন এবং আদালতে মিথ্যে নালিশ করেছেন ।
শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন বিচারপতি ৷ তবে ছাত্রটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর নির্দেশ দেননি বিচারপতি ।