যোগেশচন্দ্র ল' কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্যকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট কলকাতা, 11 অক্টোবর: যোগেশচন্দ্র ল' কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্যকে তাঁর পদে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার সকালে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে ৷ এর আগে 5 অক্টোবর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷
এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট স্পেশ্যাল অফিসার অর্ককুমার নাগকে অবিলম্বে অধ্যক্ষের ঘরের তালা খুলে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ তবে প্রিন্সিপালের অপসারণের মূল মামলার মেরিট অনুযায়ী শুনানি হবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই ৷ মেরিট অনুযায়ী ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
এছাড়া চারু মার্কেটের ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 12 অক্টোবর অধ্যক্ষকে পুনরায় পদে বহাল করার সময় তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে ৷ সেই সময় যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা দেখার দায়িত্ব তাঁর উপরেই দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
আরও পড়ুন: সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে সিএসসি
এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অধ্যক্ষকে অপসারণের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের মধ্যে স্বাভাবিক ন্যায়ের যে ধারণা, তাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে ৷ শুধুমাত্র টেলিফোনিক আলোচনার উপর প্রিন্সিপালের অপসারণের সিদ্ধান্ত ঠিক নয় ৷ 2015 সালে তাঁকে কলেজ সার্ভিস কমিশনের সুপারিশে নিয়োগ করা হয় ৷
অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়াঙ্কা ভাট্টাচার্যের আইনজীবী সুবীর স্যানাল এ দিন জানান, 1998 সালে তাঁকে নিয়োগ করার সময় কলেজটি বেসরকারি ছিল ৷ তখন ইউজিসির নেট স্লেট যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না ৷ পরে 2015 সালে 26 ডিসেম্বর কলেজ সার্ভিস কমিশন তাঁকে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ করে ৷ এ বছর 5 অক্টোবর তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ অভিযোগ, তাঁর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না-থাকলেও তিনি অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ৷ এরপর মাজুল হক নামে একজন বর্ষীয়ান অধ্যাপককে অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ আইনজীবী প্রশ্ন করেন, "আইনজীবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এটা কি কোনও আইনি প্রক্রিয়া ? এত তাড়া কীসের ?"
এ দিকে মামলাকারী আইনজীবী পড়ুয়া অঙ্কন দাসের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, "আপনি কলেজের ছাত্র ৷ আপনার কেন মনে হল অধ্যক্ষকে অপসারণ করা প্রয়োজন ?" বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, "যোগ্য শিক্ষক আমায় পরিচালিত করবেন, এই অধিকার আমার আছে ৷" এদিকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, "এত বছর কী করছিলেন ? ঘুমোচ্ছিলেন ? অধ্যক্ষকে অপসারণের আবেদন জানিয়েছেন ৷ এতটা স্পর্ধা হয় কী করে ?"
আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, "তাঁকে একাধিক বার শোকজ করা হয় ৷ প্রশাসনের অনুসন্ধান কমিটির সামনে তাঁকে হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল ৷ তিনি হাজির হননি ৷" রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী শীর্ষাণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "তাঁকে নিয়োগের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় ৷ 2020 সালের 18 মার্চ কমিটি জানায়, কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা মানিক ভট্টাচার্য, অচিনা কুণ্ডু ও সুনন্দা গোয়াঙ্কা ভাট্টাচার্যের নেই ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সুপারিশ করে কমিটি ৷ 2 জুলাই সুনন্দা গোয়াঙ্কা ভাট্টাচার্যকে শোকজ করে কলেজের তৎকালীন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ৷ কিন্তু তিনি এখনও কোনও উত্তর দেননি ৷"
কলেজ সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, "আমার ভাগ্য ভালো ৷ আমি এখন কোনও আইনি কলেজের ছাত্র নয় ৷ অনেক আগেই পাশ করেছি ৷ না হলে এখন দেখতে হত একজন ছাত্র তার অধ্যক্ষের নিয়োগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ৷ এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমার নেই ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমি কখনও শুনিনি স্পেশাল অফিসার কলেজ চালাচ্ছে ৷ কোনও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সরিয়ে দেওয়া হল ৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করা হোক ৷ ফের একক বেঞ্চে শুনানি হোক ৷ অধ্যক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শুনে তার অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক ৷ নিয়োগের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল ৷"
আরও পড়ুন: যোগেশচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ কীভাবে বেতন পেতেন ? কলেজ সার্ভিস কমিশনকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের