কলকাতা , 16 অগাস্ট : তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বাসের আসন । এই আসনের নাম দেওয়া হয়েছে "ত্রিধারা "। ইতিমধ্যেই 205 ও 205/A দুই রুটে প্রায় 36টি বাসে 'ত্রিধারা' স্টিকার লাগানো হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রুটের বাস মালিক ও মালিক সংগঠন সাধুবাদ জানালেও তাদের বক্তব্য , সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া এই ধরনের স্টিকার লাগানো বেআইনি ।
কলকাতার প্যাডম্যান শোভন মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে । আগে তিনি গণশৌচালয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন । এই শৌচালয়গুলিরও নাম দেওয়া হয়েছে ত্রিধারা । পাশাপাশি গণশৌচালয়গুলিতে স্বল্প মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা করেছেন ।
তিনি বলেন , "2019 সালে ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের চেয়ারপার্সন রঞ্জিতা সিনহা মেট্রোয় মহিলাদের সিটে বসায় অন্যান্য মহিলা সহযাত্রীদের কাছে অপমানিত হন । তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করব । এরপর আমি আমার এলাকার কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের সহযোগিতায় 205 ও 205/A রুটের বাস মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি । আমার পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পায় । এই বিষয়টি নিয়ে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তিনি আশ্বাস দেন যে , তাঁর রুটে সবকটি বাসেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। "
এইভাবে ত্রিধারার স্টিকার লাগিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে তবে বেসরকারি বাসে আসন সংরক্ষণের বিষয়টি পুরোপুরি মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট অনুসারে হয় । বাসে আসন সংরক্ষণ করতে হলে প্রয়োজন সরকারি নির্দেশিকার । এই বিষয়ে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার বন্দোপাধ্যায় বলেন , "প্রস্তাবটিকে আমি স্বাগত জানিয়েছি । কারণ আমি নিজেও বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি । তাই আমার মনে হয় যে , এঁদের জন্য যদি বাসে আসন সংরক্ষণ করা যায় , তাহলে সেটা খুবই ভালো একটা পদক্ষেপ হবে । বাসে যখন মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রয়েছে তখন এঁদের জন্যই বা কেন হবে না ? যাতে সমাজের মূল স্রোতে এঁরা আসতে পারেন এবং কেউ এঁদের বিদ্রূপের চোখে না দেখেন, তাই এই উদ্যোগটি নেওয়া প্রয়োজন।" ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু বলেন , "তৃতীয় লিঙ্গের বহু মানুষ যখন বেসরকারি বাসে ওঠেন তখন তাঁদের থেকে ভাড়া নেওয়া হয় না । তবে সরকারি আদেশ ছাড়া এঁদের জন্য আলাদা আসনের সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় । তাই পরিবহন দপ্তরের তরফে ঘোষণা করা হলে আমাদের তাতে কোনও আপত্তি থাকবে না । কিন্তু দেখা গেছে যে এঁরা যখন বাসে ওঠেন তখন দলবদ্ধভাবে ওঠেন । তাই এঁদের জন্য একটি বা দু'টি আসন সংরক্ষণ করলে কোনও সুরাহা হবে না । বরং তৃতীয় লিঙ্গের প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণ করলে তা অনেক বেশি কার্যকরী হবে বলে আমি মনে করি ।"সিটি সাব-আরবান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন , "আসন সংরক্ষণের বিষয়টা বাস মালিকরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না । পরিবহন দপ্তর ও মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট অনুসারে এই সিদ্ধান্ত হয় । এই বিষয়ে যদি সরকারি নির্দেশিকা আসে , তাহলে আমরা নিশ্চয়ই তাঁদের জন্য আসন সংরক্ষণ করব । সার্টিফিকেট অফ ফিটনেসের সময় প্রতিটি বাসের আসন সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই কড়াকড়িভাবে খতিয়ে দেখা হয় ।"অন্যদিকে , অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন , "এই বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশনামা বের হয়নি । তবে, সরকারি আদেশ ছাড়া কোনও রুটের বাস মালিক আসন সংরক্ষণ করে এভাবে স্টিকার লাগাতে পারেন না । ঠিক যেভাবে COVID স্পেশাল স্টিকার লাগিয়ে কয়েকটি রুটের বাস বাড়তি ভাড়া নিচ্ছিল । এবং সেটি বেআইনি বলে পরে তা তাঁরা খুলে ফেলতে বাধ্য হন । ঠিক তেমনভাবে মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্টের আইন ছাড়া এই ধরনের স্টিকার লাগানো বেআইনি । যদিও উদ্যোগটিকে আমরা স্বাগত জানাই । তবে আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত একান্তই সরকারি ।"