কলকাতা, 18 ডিসেম্বর : বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে গত দু’দিন ধরে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ধর্মঘট ৷ পরিষেবা না পেয়ে নাজেহাল সাধরাণ মানুষ ৷ এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ নিয়ে বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্তের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বির্তক ৷ সরকারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করলেন বিজেপি নেতা (BJP Leader Rantidev Sengupta Criticise Narendra Modi) ৷ যে পোস্টকে ঘিরে অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি ৷ ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে বেসরকারিকরণের বিষয় নিয়ে রন্তিদেব সেনগুপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করেছেন ওই পোস্টে ৷ শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রন্তিদেব দেশের অন্যতম বড় শিল্প গোষ্ঠী আম্বানি ও আদানির নামও উল্লেখ করেছেন নাম করেছে ওই পোস্টে ৷ যেখানে তিনি লেখেন, ‘‘ভোটের সময় আদানি-আম্বানি লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয় ৷ আর আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিই ৷’’
রন্তিদেব সেনগুপ্ত ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘‘সারাজীবন চাকরি করে যেটুকু টাকা সঞ্চয় করেছি তা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছি ৷ এ কথাটা শুুধু আমার কথা নয় ৷ আমরা যারা পাঁচ পাবলিক, এটা আমাদের সবার কথা ৷ সারাজীবনের এই সঞ্চয়টুকুর ওপর নির্ভর করে আমরা কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছি মেয়েটার একটা ভদ্রস্থ বিয়ে দেওয়ার ৷ কেউ বা ভাবছি ছেলেটার উচ্চশিক্ষা এই টাকাতেই হয়ে যাবে ৷ আদানি, আম্বানি, টাটা বা গোয়েঙ্কাদের ভারতের থেকে আমাদের এই পাঁচ পাবলিকের ভারত অন্যরকম ৷ আমাদের ভারতে মাসের শেষে ভাবতে হয় সংসারের খরচ কাটছাঁট করে কীভাবে নিত্যদিনের চাহিদা মেটাব ৷ আমাদের এই পাঁচ পাবলিকের ভারতে ছোট ছোট সুখ দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকি আমরা ৷ তবুও, আদানি, আম্বানি, টাটা, গোয়েঙ্কাদের সঙ্গে একটি বিষয়ে মিল আছে আমাদের ৷ এই মহান গণতান্ত্রিক ভারত রাষ্ট্রে আদানি, আম্বানি, টাটা, গোয়েঙ্কাদের মতো আমাদেরও প্রত্যেকের একটি করে ভোটাধিকার ৷ পাঁচবছর পর পর ওনারা যেমন ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন, তেমনি আমরাও দিই ৷ তবে, আমাদের একটাই তৃপ্তি ৷ পাঁচবছর পর পর নেতারা এসে আমাদের দুয়ারে হাত জোড় করে দাঁড়ান ৷ স্বপ্ন ফেরি করে যান আমাদের দুয়ারে ৷ আর আমরা পাঁচ পাবলিক অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, বছরের পর বছর ব্যাঙ্কের সুদ কমতে কমতে পাঁচ পার্সেন্টে এসে পৌঁছয় ৷ আমরা যারা এই সুদ টুকুর ওপর নির্ভর করে অবসর জীবন কাটাই, আমাদের জীবনটা আরও বেশি অনিশ্চয়তায় ভরে ওঠে ৷’’
মূলত, ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ ও সুদের হার কমা নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত (Rantidev Sengupta on Bank Privatisation) ৷ তবে, এখানেই থামেননি রন্তিদেব ৷ আমজনতার হয়ে সরব রন্তিদেবের কথায়, ‘‘আমরা কেউ কষ্ট করে ব্যাঙ্কে দশলাখ টাকা জমিয়েছি, কেউ পনেরো, কেউ পঁচিশ, কেউ বা তিরিশ লাখ টাকা জমিয়েছি ৷ এই সঞ্চিত অর্থটুকুর ওপর ভরসা করে আমরা আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করি ৷ আদানি আম্বানি, টাটা, গোয়েঙ্কারা যে ভারত বাস করেন ৷ সে ভারতকে আমরা শুধু স্বপ্নে দেখি ৷ এখন ভাবুন তো, আমরা এই পাঁচ পাবলিক ব্যাঙ্কে যে টাকাটুকু জমিয়েছি সেটা যদি চোট হয়ে যায় তাহলে কী হবে ? আমাদের ছোট ছোট সুখ দুঃখ দিয়ে গড়া ওই ভারতটাও কি নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে না ?’’ প্রশ্ন রন্তিদেবের ৷ তবে, এ প্রশ্ন কাকে করছেন তিনি ? কেন্দ্রীয় সরকারকে ? যে সরকার তাঁরই দলের ৷ বকলমে যে দল চলে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় ৷ অর্থাৎ, সরাসরি মোদি-শাহ’কেই নিশানা তাঁর (Rantidev Sengupta Criticise Center Over Bank Privatisation) ৷
আরও পড়ুন : বেসরকারি করণের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের