কলকাতা, 22 মে: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ । আর সেই কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে সুন্দরবনের বাসন্তী এলাকার জয় গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের উদ্যোগে তৈরি জীববৈচিত্র্য উদ্যান । 22 মে অর্থাৎ আজ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসে এই পার্কের বিষয় ভাবনা হল হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্যকে ফিরিয়ে আনা । সুন্দরবনে এই পার্ক সেই কাজ যেন অনেকটাই করে দিচ্ছে । অজান্তেই মানুষজন সাময়িক লাভের জন্য বিভিন্ন সময় এমন সব কর্মকাণ্ড করে থাকে যার ফলে জীববৈচিত্র্য তার প্রভাব পড়ে । সুন্দরবনে বহু বছর ধরে কমেছে ম্যানগ্রোভ প্রাচীর । অবলুপ্ত হয়েছে বহু জলজ পোকা, বহু প্রজাতির মাছ, কমেছে বিভিন্ন পশু ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা । আর এই গোটা ঘটনার প্রভাব কিন্তু পড়ছে জনজীবনে ।
ছোট থেকেই পড়ুয়াদের জীববৈচিত্র্যের ধারণা দেওয়া হচ্ছে এই পার্ক থেকে তাই বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে অবগত করার কাজ করছে এই পার্ক ৷ পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মহাকুর বলেন, "সুন্দরবনের মানুষ সঠিকভাবে অবগত নয় যে তাদের এলাকায় কী আছে, তার প্রয়োজনীয়তা কী ৷ আমরা গড়তে চেয়েছিলাম বিজ্ঞান গ্রাম । কেন্দ্রের কাছে তদ্বির করেও সাড়া মেলেনি । তাই আমরা পরিবেশ কর্মীরা মিলে এই পার্ক তৈরি করি । এখান থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ছোট থেকেই জানতে পারছে তাদের এলাকার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে । কোনটা কী গাছ, কী পশু-প্রাণী সবই ৷ তিনটি ব্লক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে । রাজ্য বায়োডাইভারসিটি বোর্ডের আর্থিক অনুদান মিলেছে ।"
এখানে আছে স্থানীয়ভাবে পাওয়া একাধিক প্রজাতির ধান গাছের বীজ ভাণ্ডার । মহিলারা এই কাজ করেছে । আছে দেশীয় একাধিক প্রজাতির মুরগি, শুয়োর ও বিভিন্ন প্রাণী । আছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একাধিক মাছ, বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি ও মৌমাছি ৷ এছাড়াও আছে বিভিন্ন গাছ যেমন ম্যানগ্রোভ থেকে শুরু করে কফি, চা সবই । আগে পরিযায়ী পাখি শিকার করা হলেও এখন তা বন্ধ করা হয়েছে ৷ গঠিত হয়েছে কমিটি, যারা লাগাতার সুন্দরবন এলাকার জীববৈচিত্র্যের উপর নজর রাখেন ।
এই পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ধান বীজ জানা যাচ্ছে, রাজ্যে প্রায় 36টি এমন পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য বায়োডাইভারসিটি বোর্ড । তার মধ্যে 8টি হয়েছে । এর মধ্যে সুন্দরবনের এই পার্কটি মডেল । এই পার্কের জন্য প্রায় 9 লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান মিলেছে । এই বিষয়ে বিজ্ঞানী সুজিব কর জানান, যেভাবে মানুষ নানা কর্মকাণ্ড করছে তাতে বিভিন্ন জায়গার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে । যেমন কলকাতায় বায়ু দূষণ বা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ রবীন্দ্র সরোবরে জলস্তর কমে যাওয়া, পাহাড়ের দূষণের কারণ যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা । সুন্দরবন বা জঙ্গলমহল এলাকায় প্রাণীরা বন ছেড়ে লোকালয়ে আসছে কারণ এই জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ বায়োডাইভারসিটি পার্ক গঠনের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকার মানুষজনকে আরও সচেতন করে তাদের মাধ্যমেই এই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে । এ বছরে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসে বিষয় ভাবনাও তাই হারিয়ে যাওয়া জীব বৈচিত্র্যকে ফিরিয়ে আনা ।
আরও পড়ুন :রাজ্যের প্রথম জীবাশ্ম উদ্যানকে জীববৈচিত্র্য অনুযায়ী হেরিটেজ ঘোষণা