নিম্নচাপের জেরে পুজোর আগেই সাত জেলায় বন্যার আশংকা কলকাতা ও দুর্গাপুর, 2 অক্টোবর: ঝাড়খণ্ডে প্রবল বর্ষণের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ৷ সোমবার এমনই আশংকার কথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ৷ এ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সাত জেলার প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ৷ সেখানে তিনি আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন ৷ যে সাতটি জেলা নিয়ে সরকার বন্যার আশংকা করছে, সেগুলি হল - পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়া ৷
এই বৈঠকের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে দেওয়া একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সভা চলাকালীন মুখ্যসচিব সমস্ত জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের অবিলম্বে নিচু ও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করতে বলেছেন ৷ প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন ৷
ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, মুখ্যসচিব বৈঠকে জানিয়েছেন যে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বা আইএমডি আগামিকাল, মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ৷ আগামী 5 অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে । নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের উপর ঘোরাফেরা করছে ৷ তা আপাতত সেখানে থাকবে আরও কয়েকদিন ৷ ফলে বৃষ্টি হবে ৷ এই বৃষ্টির জেরে চাপ বাড়বে বাঁধগুলির উপর ৷ অক্টোবরের প্রথম দিনই ঝাড়খণ্ডের উপরের দিকের এলাকায় 50 মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ৷
সেই কারণে প্রয়োজনীয় ত্রাণ-সহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে ৷ কোথাও অস্বাভাবিক বৃষ্টি হলে, তা অবিলম্বে নবান্নকে জানানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ নবান্নের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই বৈঠক হয় ৷ এই বৈঠকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ছাড়াও সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন ৷ রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-ও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে ৷ বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাঁচ ঘণ্টা অন্তর নবান্নে জানাতে বলা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন:বৃষ্টি চলবে আরও পাঁচদিন! মহালয়ার পর বর্ষা বিদায়ের সম্ভাবনা
নবান্নের বক্তব্য, এখন মাইথন ড্যাম থেকে 60 হাজার ও পাঞ্চেত ড্যাম থেকে 73 হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয় ৷ কিন্তু সোমবার সকাল 9টার পর এই দু’টি ড্যাম থেকে প্রায় 1 লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে ৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরে হয়তো আরও জল ছাড়া হতে পারে ৷ সেই কারণেই আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে ৷ পাশাপাশি সেচ দফতরের আধিকারিকরা ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ৷
দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া জলের জেরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে দুর্গাপুর ব্যারেজেও । দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকেও শুরু হয়েছে দফায় দফায় জল ছাড়া । এখনও পর্যন্ত 75 হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে । এই জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে থাকলে হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়া ও দুই বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আশংকা থাকছে । সেই আশংকাই কার্যত উঠে এসেছে নবান্নের বৈঠকে ৷
উল্লেখ্য, বর্ষার সময় পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় থাকা পূর্ব বর্ধমানের কিছু অংশ, বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি ব্লক, পশ্চিম বর্ধমানের কিয়দংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় । তবে এর আগে দেখা গিয়েছে দামোদরের জল বাড়লে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হুগলি জেলার বহু ব্লক এবং হাওড়ার বেশ কিছু অংশ । এবারও কি তাই হবে ? আশংকা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জেরে ৷
দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে বহুবার পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের কর্তৃত্ব থাকা কেন্দ্রের অধীনে থাকা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জল ছাড়া নিয়ে বিষোদগার করেছেন । মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি ছিল, এই দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার আগে জানাতে হবে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন দামোদরের এই জল ছাড়ার পর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি নিয়ে সমালোচনা করে বলেছিলেন ‘ম্যান মেড বন্যা’ ।
আরও পড়ুন:সক্রিয় নিম্নচাপ, রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের
তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দামোদরে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দশকের পর দশক ধরে এই নদের পলির সংস্কার না করার কারণে প্রচুর এলাকায় চড়া পড়ে গিয়েছে ৷ দুর্গাপুর ব্যারেজের জল ধারণ ক্ষমতা বহু অংশে কমে গিয়েছে । কেন্দ্রের কাছে এই নিয়ে বারবার রাজ্যের পক্ষ থেকে দরবার করা হলেও এই নিয়ে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি । যদিও বহুবার দুর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শন করতে এসেছেন লোকসভার প্রতিনিধিদ দল । কিন্তু আজ পর্যন্ত দামোদরের পলিসংস্কার নিয়ে সামান্য প্রয়াস দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে । তাই বছরের পর বছর আমাদের রাজ্যে এবং প্রতিবেশী দুই রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলেই দামোদরের নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলগুলি বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে ।
দুর্গাপুজোর আগে কি আবারও একই পরিস্থিতি তৈরি হবে ? আকাশের দিকে চেয়ে বাংলার সাত জেলার মানুষ ৷
(পিটিআই ইনপুট-সহ)