বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ । প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বরাবরেই বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মধুর । পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের মানুষজন উল্লসিত। তবে কৌশলি অবস্থানে রয়েছে সরকার ।
পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যে কোনও নির্বাচনকে তাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ । দলটি মনে করে, যারাই ভারতে সরকার গঠন করুক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং পাশের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যে নৈকট্য, তা যেন আরও গভীরে প্রোথিত হয় । দু’দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হোক, এটাই প্রত্যাশা ।
বাংলাদেশ ও ভারত এই দুটি নিকট প্রতিবেশি দেশ বহুমাত্রিক পারস্পরিক স্বার্থের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ । এর শুরুটা হয়েছিল ঘোর দুর্দিনে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় । সে সময় ভারতের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দিয়েছে । ইতিহাস, ভুগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার বিবেচনায় দুটি দেশ পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, এটাই বাস্তব । এ সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভারতের জন্যও । দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতি আছে অনেক, পাশাপাশি ব্যর্থতা বা ভুল–বোঝাবুঝি যে নেই তা নয় । দুই দেশের মানুষের মধ্যেই বন্ধুত্বের বাতাবরণের পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি অভিযোগও আছে বেশ কিছু ।
আরও পড়ুন : গণি-মিথের অবসান, তৃণমূল ও বিজেপিতেই ভরসা রাখল মালদা
আওয়ামি লিগের 1996-2001 শাসনকালে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য সূচিত হয় দীর্ঘকাল অমীমাংসিত গঙ্গার জল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে । ভারতের পক্ষে মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল নিরাপত্তা । উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের সহায়তা । 2009 সালে আওয়ামি লিগ আবার ক্ষমতায় আসার স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সহায়তায় এ সমস্যা সম্পূর্ণ দূরীভূত হয় । বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থলগুলো ভেঙে দেওয়া হয় এবং পালিয়ে থাকা বিদ্রোহি নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয় ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অপ্রাপ্তি, অসন্তোষের তালিকা বেশ দীর্ঘ। গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল, বিগত 24 বছরে তা দিগন্তরেখায় প্রায় অদৃশ্য। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি পিছতে পিছতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গিয়েছে। শুকনো মৌসুমে তিস্তার পুরো পানিই ব্যবহার করছে ভারত। ভারতীয় পণ্যের বিশাল বাজার বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েও আবার অশুল্ক বাধার বেড়াজালে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রসমূহে ট্রানজিট সুবিধা হাসিল করেছে ভারত, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নেপালে পণ্য পরিবহনে শিলিগুড়ি করিডরের 14 মাইল দূরত্ব আর কমছে না কিছুতেই।