তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর এক সময়ের কাছের মানুষ শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনটি এবারের ভোটে আলোচনার কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে । অনেকে এটাকে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ।
তবে নন্দীগ্রাম ছাড়াও আরও একটি আসন রয়েছে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, বাংলার রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার উপর অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করছে । সেটি হল দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের ভবানীপুর কেন্দ্র । এই ভবানীপুর কেন্দ্রটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের বিধায়ক বানিয়েছে । সেই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিতে সোমবার রাজ্যের সপ্তম ধাপে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে ।
আর সে জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও স্পষ্ট করে বললে তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । যে আসনটি পর পর দুই বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছে ।
2011 সালে যখন মমতা বামেদের হারিয়ে রাজ্যের শাসন ভার গ্রহণ করেছিলেন, সেবার 49,936 ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন । এই আসনটিতে প্রায় 63.78 শতাংশ স্মার্ট ভোটার । মমতার জয়ের ব্যবধান ছিল 21.91 শতাংশ । স্পষ্টতই এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি ।
এর পর 2014 সালে লোকসভা নির্বাচন হয় । তিন বছরে এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা গোঁত্তা খায় । যদিও এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সী বিজেপির তথাগত রায়কে 136000 ভোটে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত করেন । কিন্তু, তিনি ওই কেন্দ্র থেকে 185 ভোটে পিছিয়ে যান । মমতা বুঝে যান, তিন বছরে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, ওই আসন সংখ্যা কমার একটা কারণ সমন্বয় সাধনের অভাব । আবার কলকাতা পুরসভার 73 নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট । এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ।
অন্তঃকলহ এবং বিভিন্ন সমন্বয়ের অভাব মিটিয়ে ওই আসনটি থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2016 সালে বিধানসভায় নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন । সেই বছর এই আসনটি ছিল দিদি ( মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নামেই বাংলার রাজনীতিতে পরিচিত ) এবং বৌদি , দীপা দাশমুন্সির মধ্যে লড়াইয়ের ক্ষেত্র । দীপা দাশমুন্সি হলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এক কালে কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী । বাম এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী হয়ে সেবার ভোটে লড়াই করেছিলেন দীপা । তাঁর হয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন স্বয়ং রাহুল গান্ধি এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । স্বাভাবিক ভাবেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপার প্রচারে এই দুই নেতার অংশগ্রহণ অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল । কিন্তু, ফলাফল যখন সামনে আসে, তখন শেষ হাসি হেসেছিলেন মমতাই । তবে সেই হাসির জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছিল । হাসিতে ছিল অন্ধকারের কালো আভাস । কারণ, 2011 সালে মমতা এই ভবানীপুর থেকে যে ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন, এবার সেই ব্যবধান অর্ধেকের থেকেও কমে গিয়েছিল । মমতা জয় পেয়েছিলেন 25,301 ভোটে । জয়ের ব্যবধান ছিল 10.21 শতাংশের । অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বোস পেয়েছিলেন 26,299টি ভোট । শতকরা হিসেবে 19.13 শতাংশ ।