কলকাতা, 26 মার্চ : ভোটের লড়াই জমজমাট । প্রত্যেক রাজনৈতিক দলগুলি নিজের মত করে রাজ্য জয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে । ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটি দল মানুষের কাছে তাদের একটি নিজস্ব ইস্তাহার তুলে ধরেছে । তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস বা বিজেপি প্রত্যেকেই ইস্তাহারে নজরকাড়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । আর যাকে সামনে রেখেই মানুষের দরজায় যাচ্ছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ।
কিন্তু ভোটের বাজারে এই বিপুল প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কতটা পূরণ সম্ভব তা নিয়েই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষকরা বলছেন, একবারে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে খয়রাতি বাটতে ব্যস্ত, তাতে কি শেষ পর্যন্ত রাজ্য দেউলিয়া হয়ে যাবে ? রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি তো দিচ্ছে, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেই অর্থ আসবে কোথা থেকে ।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলি যে টাকা দেওয়ার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা আদতে জনপ্রিয় রাজনীতিরই অংশ । তিনি বলেন, "সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যখন আমরা নয়া উদারনীতির কথা বলছি, ঠিক তখন ভোটারদের রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কথা বলা হচ্ছে । এই দিক থেকে দেখতে গেলে এটা বিপরীত অর্থনীতি ও রাজনীতির সহাবস্থান ।"
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই প্রবণতা যথেষ্টই ভয়ানক । কারণ এই মুহূর্তে রাজ্যের ঘাড়ে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের দেনা রয়েছে । তার চাপ কাটিয়ে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ কঠিন ব্যাপার ।
ইস্তাহারগুলিতে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা কতটা পূরণ হবে ? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে আরও পড়ুন : কংগ্রেসের ইস্তাহারে আইনের শাসন-মহিলাদের নিরাপত্তায় জোর
তিনি এও মনে করেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলি যে প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই প্রতিশ্রুতি বহুলাংশেই বাস্তবায়িত হয় না । পশ্চিমবঙ্গে যে চারটি দল ইস্তাহার প্রকাশ করেছে তাদের মনে রাখতে হবে সেখানে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তাদের পূরণ করতে হবে । অমলবাবু বলেন, সাধারণ ভোটারের মনে একটা প্রশ্ন জাগছে, এই মুহূর্তে রাজ্যের কোষাগার শূন্য । যেই ক্ষমতায় আসুক তাদের এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজা গোপাল ধর চক্রবর্তী মনে করেন, আসলে এই সমস্ত প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে রাজ্যকে দেউলিয়া হওয়ার দিকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে । তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, রাজ্যের ঘাড়ে এই মুহূর্তে 5 লক্ষ কোটি টাকার দেনা । এই অবস্থায় যদি তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠিত হয়, এই দেনা আকাশ পরিমাণ হবে । এর ফলে রাজ্য দেউলিয়া হওয়ার দিকেই এগোবে ।
আরও পড়ুন : তৃণমূলের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বিজেপির ইস্তাহারে মিল ঘিরে বিতর্ক
তবে তিনি মনে করেন, বিজেপির ক্ষেত্রে একটা সুবিধা রয়েছে । তারা যে ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলছে, এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সাহায্য রাজ্য পেতে পারে । এখন কি হবে তা ভোটের পরেই বলা যাবে । তবে প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকছে ।
এদিকে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলির উপর প্রতিশ্রুতি পূরণের চাপ রয়েছে । তিনি বিশ্বাস করেন না রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেয় । এক্ষেত্রে বিজেপির 374 ধারা বিলোপের উদাহরণ তিনি তুলে ধরেছেন ।একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেস 2011 সালে যে সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণের কথাও তিনি বলেছেন । তিনি মনে করছেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না । আগামী দিনে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এই প্রতিশ্রুতিগুলিকে পূরণ অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলিকে করতে হবে ।