কলকাতা, 17 অক্টোবর : এ বছরের দুর্গা পুজোতেও কোরোনা আর নিউ নর্মালের ছোঁয়া । শখের বাজারের বড়িশা ক্লাবে মাতৃ মূর্তিতেও উঠে এসেছে লকডাউনের সময়ের পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্বিষহ ও মর্মান্তিক স্মৃতি ।
মায়ের কোলে ছোট্ট ছেলে আর পাশে দুই মেয়েকে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন এক ভিন রাজ্যের মহিলা শ্রমিক । যেভাবেই হোক বাড়ি ফিরতেই হবে । হাতে নেই টাকা । হাটতে হাটতে সারাদিনে কিছু খাবারও মেলেনি তাঁদের । মাঝে মধ্যে কোনও লরি হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে হয়তো এক প্যাকেট বিস্কুট বা মুড়ি আর জলের বোতল দিয়েছে তাঁদের । অনন্ত এই পথ । কিন্তু যতক্ষণ প্রাণ আছে, পা চালিয়ে যেতেই হবে।
এটা কোনও গল্প কথা নয় । আজ থেকে কয়েক মাস আগের কথা । লকডাউনের সময় বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতার গল্পগুলি ছিল ঠিক এমনই । সেই দুর্বিষহ অবস্থার কথা উঠে এসেছে বড়িশা ক্লাবের এবারের দুর্গা বন্দনায়। বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ ।
বড়িশা ক্লাবের পুজোয় দেবী এবার ভিন রাজ্যের শ্রমিক শিল্পী রিন্টু দাস দেবীর চিন্ময়ী রূপে তাঁর হাতের নিখুঁত শিল্পকর্ম দিয়ে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছেন । মূর্তির মাধ্যমে সম্মান জানিয়েছেন সেই সব মায়েদের, যাঁরা প্রাণের পরোয়া না করে সেদিন মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরার একটা শেষ চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন । পথেই আবার মারা গেছেন অনেকে ।
অন্যদিকে প্যানডেমিকের সময় কাজ হারানো মানুষের কাছে আসার একমাত্র আশার আলো ত্রাণ । ক্লাবের সম্পাদক স্বপন বড়াল বলেন যে, "এই আশায় ভর করেই চক্ষু-লজ্জা ভুলে ট্রেনের লাইনে দাঁড়িয়েছে গ্রাম-শহর মফস্বল । তাই এই বার্তা নিয়ে কোরোনাকালে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে বড়িশা ক্লাব । মা এখানে একই সঙ্গে ত্রাণদাত্রী ও ত্রাণগ্রহীতা । ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে অন্নপূর্ণা যাবেন অন্নের সন্ধানে । আর সেই ট্রেনের কাজে শামিল হওয়া সমস্ত ক্লাব ও সংগঠন মায়ের জনপ্রতিনিধি । "