বারুইপুর, 7 এপ্রিল: গ্রীষ্মের এক তপ্ত দুপুর । এক বাংলা ছবির শ্যুটিং কভার করতে হাজির হওয়া বারুইপুর রাজবাড়িতে (Baruipur Rajbari)। বলা বাহুল্য, এই বাড়ি এখন শ্যুটিংয়ের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয় (Shooting in Baruipur Rajbari)। সে দিন শুটিং চলছিল বাংলা ছবি 'সুনেত্রা সুন্দরম'-এর ।
বারুইপুরের (South 24 parganas news) ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ি শতাব্দী প্রাচীন । বারুইপুরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে সুবিস্তৃত এলাকা যৌতুক হিসেবে পান জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী । এক বিঘা দুই বিঘা নয়, জমিদারি ছিল বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত । চৌধুরী পরিবার পরবর্তীকালে রায়চৌধুরী উপাধি পান । রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী লর্ড কর্নওয়ালিসের জমানায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এক পেল্লাই রাজবাড়ি তৈরি করান । কী না হত সেই রাজবাড়িতে ? বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ । তার প্রায় প্রত্যেকটিই পালিত হত রাজকীয় ভাবে । দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে রথযাত্রা - বাদ পড়ে না কোনওটাই ।
এই বাড়ির কোণায় কোণায় যেমন ইতিহাস, তেমনই রয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ । সন্ধে গড়ালেই নানা অনুভূতি ঘিরে ধরে উপস্থিত প্রায় সকলকে । এখানে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলি যুগ যুগ ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে । খোলা হয় না কখনও । তার মধ্যে একটি ঘর নাকি রানির অর্থাৎ জমিদার গিন্নির । একটি ছোট সিঁড়ি আছে । সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই নানা অনুভূতির শিকার হয়েছেন । সম্প্রতি দু‘জন সাংবাদিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার লোভ সামলাতে পারেননি । চেয়েছিলেন কিছু এক্সপ্লোর করতে । সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে দু‘জনেরই বাঁ হাত অবশ হয়ে আসে । বাকি সিঁড়ি না উঠে নেমে আসেন গড়গড়িয়ে ।
সূত্রের খবর, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নাকি একবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন একটি ঘরে ঢুকবেন । বাসিন্দাদের বারণ সত্ত্বেও তিনি ঘরটি খোলার জন্য অনুরোধ জানান । এক পা ঘরের দিকে বাড়িয়েই বেরিয়ে আসেন । পারেননি ঢুকতে । অনেকের এই একই অনুভূতি হয়েছে টয়লেটে গিয়েও । ঢুকতে পারেননি ভিতরে । এ রকম অনুভূতির শিকার অনেকেই হয়েছেন এই রাজবাড়িতে । সন্ধে নামলেই যেন মনে হয় দু‘টি চোখ চোখে চোখে রাখছে । দিনের বেলাতেও বেশ নিঝুম রাজবাড়ি চত্বর । বন্ধ ঘরের দিকে কেউ ভুলেও পা বাড়ায় না । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর রাজবাড়িতে প্রবেশ করলে রাজবাড়ির জরাজীর্ণ অবস্থার বদলে চোখে পড়ে রাজকীয়তা । তবে সেখানে বেশিক্ষণ কেউ থাকতে পারে না । কে যেন বলে, "দূর হটো।"