পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Justice Abhijit Ganguly: কী রয়েছে বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপালে ? কী নিয়ম ভাঙার অভিযোগ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ?

এই মুহূর্তে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপাল ভেঙেছেন বলে বলা হচ্ছে ৷

ETV Bharat
বিতর্কে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

By

Published : Apr 25, 2023, 10:10 PM IST

কলকাতা, 25 এপ্রিল: তাঁর এজলাসে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ চ্যানেলে মুখ খুলে ও দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়ে বর্তমানে বেকায়দায় পড়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বিষয়টি নিয়ে সোমবারই উষ্মা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ৷ তিনি এ বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছ থেকে ৷ প্রধান বিচারপতি এও জানিয়েছেন, যদি উনি এরকম কোনও সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন, তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই মামলাগুলির বিচারের অধিকার হারিয়েছেন ৷

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের ৷ প্রশ্ন উঠছে, এর ফলে কি সত্যিই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির মামলাগুলি থেকে সরতে হবে ? সোমবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বক্তব্যের পর থেকেই সেই প্রশ্ন ঘুরছে রাজ্যবাসীর মনে ৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে কী এমন নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করলেন যে তাঁর বেঞ্চ থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা অন্য বেঞ্চে স্থানান্তর করা হতে পারে ?

গত বছর শেষের দিকে একটি সংবাদ চ্যানেলকে ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ সেই সাক্ষাৎকারের ফুটেজও কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিচারপতিরা কোনও ভাবেই তাঁদের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না । সেক্ষেত্রে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অন্য কোনও বিচারপতিকে সেই মামলাগুলি শোনার দায়িত্ব দিতে হবে ৷

অন্যদিকে, মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই এজলাসে বসে এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমার নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে, পদত্যাগ করব বলা হচ্ছে । আমি পদত্যাগ করছি না। যে লড়াই শুরু করেছি তার শেষ দেখে ছাড়ব । আমি থাকি না-থাকি, লড়াই চলবে...৷" তাঁর সেদিনের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, সেদিন আত্মপক্ষ সমর্থনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেঙ্গালুরু প্রোটোকলের কথা বলেছিলেন ৷ তাঁর কথায়, "বেঙ্গালুরু প্রোটোকলের মধ্যে থেকেই আমি সাক্ষাৎ দিচ্ছি । এই প্রোটোকলেই বিচারপতিদের বাক স্বাধীনতার কথা বলা রয়েছে । আমি বিচারব্যবস্থা বা রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলছি না ।"

কী এই বেঙ্গালুরু প্রোটোকল ? এটি আসলে "দ্য বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপলস অফ জুডিশিয়াল কনডাক্ট" নামে পরিচিত । রাষ্ট্রপুঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলের উদ্যোগে 2002 সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এই নীতিমালা তৈরি করা হয় । মোট ছ'টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল এই সম্মেলনে ৷ সেগুলি হল- স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, সংহতি, অধিকার, সাম্য এবং যোগ্যতা ও পরিশ্রম । বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপালের 4.6 নম্বর নীতিতে বলা আছে বিচারপতিদের নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে । সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, একজন বিচারপতি অন্য সাধারণ মানুষের মতোই যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে বা জমায়েতে যেতে পারেন । তবে তাতে যেন বিচারালয়ের নিরপেক্ষতা ও পবিত্রতা নষ্ট না হয় । এখানেই অনেকে মনে করছেন ওই সাক্ষাৎকার দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিরপেক্ষতার বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন ৷

আরও পড়ুন: বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ বয়কটের ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে আদালতে হলফনামা 9 আইনজীবীর

আগামী শুক্রবার সুপ্রিমকোর্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে ৷ তবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা হাতে নেওয়ার পর এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যাতে রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে কী চলছিল, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মানুষের কাছে । বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে অনেকের চাকরিও গিয়েছে তাঁর নির্দেশে ৷ অনেকে তাঁর সমালোচনা করলেও সাধারণ মানুষ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে এখন ভগবানের মতো মনে করেন । তাঁর একের পর এক নির্দেশে সিবিআই-ইডি তদন্ত করছে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার । এই পরস্থিতিতে তাঁর হাত থেকে এই সংক্রান্ত মামলা চলে গেলে তদন্তে তার প্রভাব পড়বে কি না, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details