কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর:হস্টেলে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্য মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে যাদবপুরকে বিশ্ববিদ্যালয়কে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন । উঠছে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল । বিশ্ববিদ্যায়কে কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ৷ এই নির্দেশের পরেই সক্রিয় হল বিশ্ববিদ্যালয় । সোমবার অ্যান্টি ব়্যাগিং অ্যাওয়ারনেস ও পড়ুয়াদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম নিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ কাউন্সিলিং সার্ভিস অ্যান্ড স্টাডিস ইন সেলফ ডেভেলপমেন্ট ।
ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ব়্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে হবে । সব ঝড়-ঝাপটা সামলে এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিল । সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগ অর্থাৎ বাংলা, সংস্কৃত এবং দর্শন এই তিন বিভাগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ে চললো কাউন্সেলিং ।
ব়্যাগিং কী, কীভাবে হয় এই সমস্যার সমাধান, সেই সব কথাই উঠে আসে এই অনুষ্ঠানে । একইসঙ্গে পড়ুয়ার মধ্যে কিসের জন্য মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে সেই সব প্রশ্ন-উত্তরের সাহায্যে লিখিত মাধ্যমে জমা নেওয়া হয় । তারপর এই বিষয়গুলিকে এক জায়গায় করে ছোটও ছোটও গ্রুপ করে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন সার্ভিস অ্যান্ড স্টাডিস ইন সেলফ ডেভেলপমেন্টের সদস্যরা ।
সংস্থার ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এবং ফিলোজফি বিভাগের অধ্যাপক সমর কুমার মণ্ডল বলেন, "এই ধরনের অনুষ্ঠান ইউজিসির নিয়মে থাকলেও আমরা খুব একটা মেনে চলতে পারিনি । তবে এবার এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে । সব পড়ুয়াদের মনের ভাব প্রকাশ পায় কিছু মাধ্যম দিয়ে । কারও ক্ষেত্রে সেটা রাগ বা অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছয় । ওটাকেই বলা হয় ব়্যাগিং । আবার মূলত গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেরা যখন বড়দের দেখে 'হস্টেলের বস' মনে করে ও একটা ক্ষমতার প্রকাশ সেখানে থাকে ৷ পরবর্তীকালে অন্যদের উপর ওই শক্তি কী প্রভাব ফেলে তারা বুঝতে পারে না । এটা আমাদের দোষ, কারণ আমরা ওদের এই র্যাগিংয়ের ফলে কী হতে পারে সেইগুলো শেখাই নি । তাই আজকের অনুষ্ঠানে শুধু দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের রেখেছি । প্রথম বর্ষের সঙ্গে এদের এখন মেলানো যাবে না । "
আরও পড়ুন: যাদবপুর-কাণ্ডে পকসো আইনে মামলা রুজু লালবাজারের
এর সঙ্গে তিনি আরও বলেন, "যদি নিজের আত্মসম্মান বা নিজের মূল্যবোধ তৈরি না হয় তাহলে অপরের উপর জোর দেওয়ার এবং এই র্যাগিং মূলক ঘটনা ঘটে ।"এদিনের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বতী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ, সহপাচার্য অমিতাভ দত্ত, রেজিস্টার স্নেহমঞ্জু বসু, ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়, সহ অধ্যাপক ও মনোবিদরা । এই বিষয়ে উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ বলেন,"এই ধরনের অনুষ্ঠান আমরা করে থাকি, নতুন নয় । তবে হয়তো এত বড় মাত্রায় হয় না । এ বছর এই ঘটনাটা ঘটায় হয়তো সবার নজরে পড়ছে । আমি যখন অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে ছিলাম তখন আমরা বারবার এই র্যাগিং বিরোধী নিয়ে কথা বলতাম । কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হত এখানে র্যাগিং হয় না । তবে এবার আমরা দেখতে পেলাম ওই তথ্য ভুল, চোখের সামনে একটা ঘটনা ঘটল । আমরা পড়ুয়াদের কথা বিশ্বাস করে একটা গাফিলতি করেছিলাম তবে আর নয় । অ্যান্টি রাগিং এই সমস্ত কর্মসূচি আমরা এবার থেকে করব ।"