কলকাতা, 3 এপ্রিল : হাত বাড়ালেই সাহায্যের জন্য প্রস্তুত এক দল যুবক-যুবতি । এই লকডাউনে যারাই সাহায্য চাইছে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে খড়দা-রহড়া অঞ্চলের সদস্যরা ।
লকডাউন ঘোষণার পরই ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি পোস্ট । পোস্টটি করে "রোদ্ধা" নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । বলা হয়, "চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা সাংবাদিকরা যদি কোনও সমস্যায় পড়েন তবে যোগাযোগ করুন । আপনার পরিবারকে জরুরি পরিষেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর ।" এরপরই এক সাংবাদিক যোগাযোগ করেন ওই সংগঠনের সঙ্গে । জানান, সংসার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে পারছেন না । দ্রুত পৌঁছায় রোদ্ধার সদস্যরা । ওই সাংবাদিককে সাহায্য করেন । আবার এক চিকিৎসকের বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পৌঁছানোর ছিল । খবর পেয়েই পৌঁছে দিয়ে আসেন ওই সংগঠনের সদস্যরা ।
খবর পেলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন "রোদ্ধা"-র সদস্যরা
বিভিন্ন সমস্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন খড়দার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা । তাঁদের এই কাজে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পৌরসভার চেয়ারম্যানও ।
লকডাউনের জেরে অনেক প্রবাসী বাঙালিই ঘরে ফিরতে পারেননি । বাড়িতে আছে বৃদ্ধ বাবা-মা । তাঁদের সন্তানরা অনেকেই যোগাযোগ করছেন রোদ্ধার সঙ্গে । আর পাশে দাঁড়াচ্ছেন সদস্যরা । বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য করে দিচ্ছেন বাজার ।
লকডাউনের সময় যত এগিয়েছে তত সক্রিয় হয়েছেন রোদ্ধার সদস্যরা । খবর পাওয়া যায়, রহড়া বাজারে ভিড় করে মানুষ জিনিসপত্র কিনছেন । হাজির হয়ে যান এই সংগঠনের সদস্যরা । হাতজোড় করে মানুষকে অনুরোধ করেন সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য । তারপর রাতারাতি চুন হাতে তাঁরাই নেমে পড়েন গণ্ডি কাটতে । এরই মাঝে খবর আসে ব্যারাকপুর BN বসু হাসপাতালে রক্ত সংকট । চলে যান রোদ্ধার সদস্যরা । দান করেন বেশ কয়েক ইউনিট রক্ত ।
এসবের মাঝে ওরা ভুলে যাননি খড়দা স্টেশনে বসবাসকারী সব হারানো মানুষগুলোর কথা । খুব বেশি সাধ্য হয়নি । নেই বড় আয়োজন । ওদের জন্য চাঁদা তুলে রোদ্ধার সদস্যরা প্রথম প্রথম তুলে দিয়ে এসেছিলেন মুড়ি- বাতাসা আর একটু খাবার জল । এরই মাঝে স্টেশন সংলগ্ন কয়েকজন যুবক ওই মানুষগুলোর জন্য খাবার ব্যবস্থা করে । তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় রোদ্ধা । সংগঠনের অন্যতম সদস্য গৌরব সাহা জানান, সমাজসেবা তাঁর নেশা । সেটা করতে গিয়ে চাকরি করছেন না । কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে চালের বস্তা কাঁধে, এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছেন । কখনও আবার রাতের অন্ধকারে গণ্ডি কাটছেন । এবিষয়ে গৌরব বললেন, "ছেলেবেলা থেকেই মানুষ হতে চেয়েছিলাম । সেটারই প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।"
খড়দা পৌরসভার চেয়ারম্যান তাপস পাল বলেন, "আমি যখন থেকে রোদ্ধাকে দেখেছি, তখন থেকে দেখছি ওরা মানুষের জন্য কিছু না কিছু করে চলেছে । এই যে সামাজিক দূরত্ব নিয়ে কাজ করছে ওরা, সেটা মানুষের সচেতনতা ফেরাবে । মানুষকে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করবে ।"
আর রোদ্ধার সদস্যরা বলছে, এভাবেই আাগামীদিনেও মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তাঁরা ।