কলকাতা, 30 নভেম্বর : 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল,অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন বা সংক্ষেপে AIMIM। আর সেই লক্ষ্যপূরণে মরিয়া হয়ে সুবক্তা বাংলাভাষী মুখের খোঁজ চালাচ্ছেন AIMIM-র এরাজ্যের নেতৃত্বরা ৷ যিনি AIMIM-র রাজনৈতিক বার্তা সরলভাষায় পৌঁছে দিতে পারবেন বাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে। উর্দুভাষীর পাশাপাশি বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে AIMIM-কে সমান গ্রহণযোগ্য করতেই এই উদ্যোগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যার মাত্র ছয় শতাংশ উর্দুভাষী ৷ কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, আসানসোল এবং উত্তর দিনাজপুরের কিছু বিক্ষিপ্ত অঞ্চলে এই উর্দুভাষী মানুষের বাস। কিন্তু রাজ্যের সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোটের বড় অংশ টানতে মরিয়া AIMIM-র শীর্ষ নেতৃত্বরা৷ যার ফলে AIMIM-র দরকার মজবুত সংগঠন এবং জনভিত্তি। যা এই রাজ্যে একমাত্র রয়েছে মুর্শিদাবাদ ও মালদায়৷ মূলত এই দুই জেলায় মুসলমান জনসংখ্যার একটি বড় অংশের বসবাস৷ আর সেখানে জনভিত্তি তৈরিতে প্রয়োজন সুবক্তা বাংলাভাষী মুখের৷
বিষয়টি একপ্রকার স্বীকারও করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই রাজ্যের এক AIMIM কর্মকর্তা ৷ তিনি বলেন, "বাংলায় উর্দু এবং বাংলাভাষী দুই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা AIMIM-র সমর্থক ৷ তবে এটা সত্যি যে বাংলাভাষী সুবক্তার অভাব রয়েছে।" তিনি আরও জানান, "তবে আমরা খোঁজ চালাচ্ছি। আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে বিভিন্ন মুসলমান অরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বর সঙ্গে। আশা করি বাংলাভাষী সুবক্তা পেতে আমাদের দেরি হবে না ৷"
AIMIM-র সর্বভারতীয় মুখপাত্র এবং দলের পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক, আসিম ওয়াকার অবশ্য ব্যাপারটাকে এখনই খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর মতে দলের সর্বোচ্চ নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সভা শুরু করলেই মুসলমান সম্প্রদায়ের আরও অনেক মানুষ AIMIM-র পতাকাতলে আসবেন ৷ তখন উর্দু বা বাংলা কোনও ভাষাতেই সুবক্তার অভাব হবে না।
AIMIM-কে অবশ্য এখনই কোনও রকম গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্যের শাসক সহ বিরোধীরা এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে ডিসেম্বরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই সভা শুরু করবে AIMIM। সভায় বক্তব্য পেশ করবেন ওয়েইসি স্বয়ং। তবে এখনও পর্যন্ত সভার দিন ঠিক হয়নি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
নিখিল ভারত সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, মহম্মদ কামরুজ্জামানের মতে ভাষার দূরত্ব একটা বিষয় অবশ্যই এবং এটাও ঠিক যে AIMIM-র প্রভাব মূলত উর্দুভাষী মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি জানান, "কিন্তু AIMIM যেহেতু মুসলমান সমাজের সামগ্রিক উন্নতির এবং অধিকারের কথা বলছেন, তাতে তার প্রভাব বাংলার সমগ্র মুসলমান সমাজের মধ্যে কম সময়ের মধ্যে বিস্তৃত হওয়া অসম্ভব কিছুই না। আর এটা খেয়াল রাখতে হবে যে সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ আছেন যাঁরা বাংলা, উর্দু এবং আরও কিছু ভাষায় সমান সাবলীল। তাই ব্যাপারটা অসম্ভব নয় যে কিছু এরকম মানুষ দুই ভাষার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি করলেন।" তবে, AIMIM-কে অবশ্য এখনই কোনও রকম গুরুত্ব দিতে নারাজ কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের নেতৃত্বরা।
কলকাতা পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক এবং রাজ্যের পৌরবিষয়ক মন্ত্রী, ফিরহাদ হাকিম বলেন, সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যাগুরু আলাদা কিছু নয়। তাঁর কথায়, "সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু দুজনেই মানুষ। যদি পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে। যদি হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে। বাংলার মানুষের হৃদয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা আছে। সেই নাম মোছার ক্ষমতা কট্টরপন্থী AIMIM বা RSS-র নেই ৷"
CPI(M)-র বিধায়ক, তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতা এবং সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতা, এই দুটোই দেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক। তিনি বলেন, "BJP-RSS যেমন সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক, তেমনি AIMIM হল সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। আসলে AIMIM হল BJP-র হাতের পুতুল। বিহারে AIMIM সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে BJP-র সুবিধা করে দিয়েছে। তেমনি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাতেও ওদের লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে BJP-র সুবিধা করে দেওয়া ৷" পাশাপাশি, এটাও খবর পাওয়া যাচ্ছে যে BJP-র সঙ্গে AIMIM-র বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠকও হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷
রাজ্য যুব-কংগ্রেস সভাপতি, মহম্মদ সাদাব বলেন, BJP এবং AIMIM আসলে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। তিনি বলেন, "শুধু তফাতটা হল BJP "হিন্দু-হিন্দু," আর AIMIM "মুসলমান-মুসলমান" করে। এই করে বিহারে AIMIM BJP-কে জিতিয়ে দিয়েছে। এবার বাংলাতেও ওদের একই লক্ষ্য। কিন্তু বাংলার মানুষ ওদের আসল উদ্দেশ্য বুঝে গেছে। তাই বাংলাতে AIMIM বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না ৷"