কলকাতা, 11 নভেম্বর: সাধারণত এই বয়সে রোগভাগ এবং একাকীত্বকে সঙ্গে করেই জীবন কাটে । কিন্তু 84 বছর বয়সে পিএইচডি করে, বার্ধক্যের সমস্ত ধ্যানধারণা ভেঙে দিলেন খড়গপুর আইআইটি প্রাক্তনী রণজিৎকুমার চৌধুরী । দেশের দ্বিতীয় বরিষ্ঠতম পিএইচডি অর্জনকারী হলেন তিনি ।
আদতে মেঘালয়ের শিলংয়ের বাসিন্দা, খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তনী রণজিৎবাবু । সেখানে পঞ্চম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি । বিষয় ছিল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং । ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন । বর্তমানে বাস মুদিয়ালির প্রতাপাদিত্য রোডে । চার বছর আগে পিএইচডি সম্পূর্ণ করেছেন ।
গতে বাঁধা জীবনে শুরু থেকেই অনীহা ছিল রণজিৎবাবুর । তাই বার্ধক্যে পৌঁছেও জীবনে নতুন কিছু অর্জনের ইচ্ছা ছাড়েননি । সেখান থেকেই পিএইচডি করার ভাবনা মাথায় আসে । তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট । এখন অবসরোত্তর জীবনে শিক্ষকের ভূমিকায় তিনি ।
আরও পড়ুন:Srabanti Chatterjee : মোহভঙ্গ, এবার বিজেপি ত্যাগ শ্রাবন্তীর
ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে রণজিৎবাবু বলেন, ‘‘চাকুরি জীবনের শেষ দিকে একটি ম্যানেজমেন্ট কলেজে পড়ানো শুরু করেছিলাম ৷ সেখানেই দেখি, পড়ুয়াদের সঠিক প্রশিক্ষণ হয়নি ৷ প্রশিক্ষণ না থাকলে কোনও ব্যক্তি সংস্থার পক্ষে উপযোগী হয়ে উঠতে পারেন না ৷ তাই ওখানে ছাত্র এবং শিক্ষকের ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এর বিষয়টি দেখতাম। ৷ তাই ট্রেনিং নিয়ে কাজ করার বিষয়টি হঠাৎ করে শুরু হয়নি বা করিনি বলতে পারি ৷’’
ওই কলেজে থাকাকালীনই পিএইডির ভাবনা মাথায় আসে বলে জানান রণজিৎবাবু ৷ তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনিং দিতে দিতে কখন যে বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর তৈরি হয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি ৷ আর এখান থেকেই গবেষণার ভাবনা শুরু ৷ ট্রেনিং দিতে দিতে বুঝলাম, আমার কিছু ক্ষেত্রে পারদর্শিতা রয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে শেখারও রয়েছে অনেক কিছু ৷ তাই দু’টিকে এক বন্ধনীতে এনে গবেষণার বিষয় করে ফেললাম ৷’’
কিন্তু এই বয়সে পিএইচডি করে কি তৃপ্তি পেয়েছেন ? রণজিৎবাবুর জবাব, ‘‘অবশ্যই । দক্ষিণ ভারতের কথা বাদ দিলে, দেশের বাকি অংশের মধ্যে আমিই এক নম্বর । মাদ্রাজের এক জন আমার চেয়ে বেশি বয়সে পিএইচডি করার নজিরের অধিকারী । আর একটি কথা বলব, বয়স একটি সংখ্যামাত্র । ইচ্ছে থাকলে যে কোনও বয়সে শুরু করা যায় ৷’’ প্রশান্তির ছাপ অশীতিপর তরুণের চোখে মুখে ৷ একই সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘দেখুন, আমাদের দেশেই এ সব নিয়ে আলোচনা হয় ৷ বিদেশে দেখুন, কর্মজীবনের পরে সবাই গবেষণার কাজ শুরু করেন । নব্বই বছর বয়সে বিদেশে ডক্টরেট করা স্বাভাবিক । সেদিক থেকে আমরা অনেক কাঁচা বয়সে পিএইচডি করেছি ।’’
আরও পড়ুন:North Central Railway Recruitment:মাধ্যমিক পাশে রেলে নিয়োগ
টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি সম্পূর্ণ করা রণজিৎবাবু দেশে তো বটেই, বংলাদেশেও বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস করিয়ে এসেছেন ৷ ছাত্র হিসেবেও বরাবরই মেধাবী ছিলেন রণজিৎবাবু ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আইআইটিতে পড়ার শেষ বছরেই চাকুরির প্রস্তাব এসেছিল । সব চেয়ে আগে পেয়েছিলাম পড়ানোর প্রস্তাব । কিন্তু সেই সময় আমল দিইনি । কর্মজীবনের শেষভাগে পড়ানোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বুঝতে পেরেছি, গড়ে তোলার আনন্দ কতটা ৷’’
রনজিৎবাবু ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরির সময় ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন । সেই অভিজ্ঞতা থেকেও নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন ৷ এখন বাড়িতে পড়াশোনা করেই দিন কাটে তাঁর ৷ আর সুযোগ পেলেই বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন । তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের আর দু’টি দিক ঘোরা বাকি রয়েছে তাঁর ৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর বেরিয়ে পড়বেন ৷ নতুনত্বের সন্ধানই অক্সিজেন জোগায় রণজিৎবাবুকে ৷