কলকাতা, 9 জুলাই : লড়াইয়ের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হল ৷ শুরু হল সরকারিভাবে ফের লকডাউন ৷ আনলক শুরু হওয়ার পর এই লকডাউন এক কথায় চিন্তা বাড়ানোর প্রথম ধাপ অবশ্যই ৷ যেদিন নবান্ন থেকে রাজ্যের প্রধান ঘোষণা করেছিলেন নতুন করে লকডাউনের, সেদিনই আর একটা আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল ৷ তাহলে কি মহানগরে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেল ? আজ বিকেল পাঁচটা থেকে কলকাতা, হাওড়া ও উত্তর 24 পরগনায় নতুন করে লকডাউন শুরু হওয়ার পর যেভাবে তা কার্যকর করতে পুলিশ-প্রশাসন কোমর বেঁধে রাস্তায় নামল তা একদিকে সেই আশঙ্কাকেই যেন বাড়িয়ে দিল ৷ অনেকে আজকের ছবিটা দেখে বলতেও শুরু করে দিলেন, প্রথম দু'মাসে (এপ্রিল ও মে) যদি এই ছবিটা দেখা যেত, তাহলে আর নতুন করে লকডাউনের পথে হাঁটতে হত না ৷
1 জুন থেকে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠতে শুরু করেছিল গোটা দেশেই ৷ দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লকডাউন উঠছিল রাজ্যতে ৷ নিয়ম মেনে দোকান খোলা, প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন বা যানবাহনের চাকা ঘোরার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও শুরু হচ্ছিল ৷ কিন্তু, কোথায় যেন নির্দেশিকা আর বাস্তব চিত্রের মধ্যে ফারাকটা চোখে পড়ছে বারবার ৷ যেমন- নবান্নের নির্দেশ ছিল সামাজিক ব্যবধান মেনে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন নিত্য যাত্রীরা ৷ কিন্তু যেভাবে বাদুড়-ঝোলা ভিড়ের ছবি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে বারবার তা আশঙ্কা বাড়িয়েছে উলটে ৷ আবার বিধিনিষেধের ঘেরাটোপ থাকলেও যেভাবে দোকানে-পাড়ার মোড়ে জমায়েত চোখে পড়েছে, সরকারি নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পথে নেমেছেন আমজনতা, তাতে যেন ভয়টা তখনই স্পষ্ট হয়েছে ৷
গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা উসকে দিয়ে কলকাতা-সহ জেলায় আবার লকডাউন... আনলক শুরু হওয়ার পরই এই ছবিগুলো নিয়ে চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন বারবার ৷ আর ঠিক তখনই রকেটের গতিতে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে কলকাতা, শিলিগুড়ি, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, মালদার মতো একাধিক জেলায় ৷ আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুও ৷ সামান্য ছাড়ের সুযোগে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি প্রশাসনের ৷ আর বিন্দুমাত্র দেরি হলে যে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠবে তাও হয়ে গিয়েছিল স্পষ্ট ৷ আর তারপরই মঙ্গলবার নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন ৷ সেই মতো আজ বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় লকডাউন ৷ এই দফার লকডাউন যে আগের দফার থেকে আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বয়ং নগরপাল ৷
নবান্নের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে ভবানীপুর, উলটোডাঙা, ফুলবাগান, বেলেঘাটা, আলিপুর, কাকুরগাছি, হিডকো, বিজয়গড়, যাদবপুর, নিউ আলিপুর, কসবা, মুকুন্দপুর, অজয়নগরের মতো এলাকাগুলি রয়েছে । ওই এলাকাগুলিতে প্রয়োজনে রাস্তা বন্ধ রাখা হবে । এছাড়া, দক্ষিণ 24 পরগনাতেও সব মহকুমা এলাকাতেই কনটেনমেন্ট জ়োন রয়েছে । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলিপুর সদর মহকুমা এলাকায়, কারণ এই মহকুমার অধিকাংশ এলাকা কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় । এর মধ্যে রয়েছে বিষ্ণুপুর বিধানসভা এলাকার ঘোষেরহাট, দক্ষিণ গৌরীপুর, আমগাছিয়া, কন্যানগর গভর্নমেন্ট কলোনি, আশুতি রথতলা, চকডাঙা খেলার মাঠ, কয়াল পাড়া, আকান পাড়ার মতো এলাকা ।