কলকাতা, 20 নভেম্বর : পুলিশি ঘেরাটোপে রবীন্দ্র সরোবর লেক। তবে সম্পূর্ণ রবীন্দ্র সরোবর লেক কি রয়েছে পুলিশি নিরাপত্তায়! রবীন্দ্র সরোবরে মোট পাঁচটি গেট রয়েছে। সবকটি গেটকে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে পুলিশ বাহিনী উপস্থিত রয়েছে প্রত্যেকটি গেটের বাইরে। গতকাল থেকে রবীন্দ্র সরোবর এর বিভিন্ন অংশ টিন দিয়ে সিল করে দেয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল রবীন্দ্র সরোবর সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কেই মান্যতা দিয়েছে রাজ্য ও পুলিশ প্রশাসন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় অনুসারে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করা যাবে না।
তাই সব রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সম্পূর্ণ পুলিশের নজরদারিতে মুরে ফেলা হয়েছে রবীন্দ্র সরোবর লেক। ছট পুজোর পুণ্যার্থীরা যাতে নিয়ম-শৃঙ্খলা ভাঙতে না পারেন তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যেই কলকাতা পৌরনিগম KMDA শহরজুড়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করেছে। সেইসঙ্গে শহরের ও শহরতলীর সবকটি গঙ্গার ঘাটকে প্রস্তুত করা হয়েছে ছট পুজোর জন্য।
সকাল থেকেই পরিবেশবিদরা যাতায়াত শুরু করেছে রবীন্দ্র সরোবরের বাইরে। পরিবেশবিদ সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "গত বছর বাজে ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবছর সে ধরনের কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এর থেকে বোঝা যায় রাজ্য সরকার চাইলেই সবকিছু করতে পারে। গত বছর পুলিশের ভূমিকা নিন্দনীয় ছিল কিন্তু এবছর পুলিশ যথেষ্ট তৎপর সঙ্গে কাজ করেছে। সরোবর লেককে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সরোবরে প্রবেশের যে রাস্তার সেগুলিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে মানুষ এখানে এসে ছট পুজো না করতে পারে। রাজ্য সরকার ভোটের রাজনীতি করছে বলেই গত বছর তারা কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। এবছর জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কেই হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট যৌথ মান্যতা দিয়েছে তাই কিছুটা চাপে পড়েই রাজ্য সরকার ও পুলিশ এই কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে রবীন্দ্র সরোবর ঘিরে।"
রবীন্দ্রসরোবরে ছট পুজো না, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পঞ্চমুখ পরিবেশবিদেরা পরিবেশবিদ এসএম ঘোষ জানিয়েছেন, "রাজ্য সরকার প্রথমে তাই জন্যই কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য পরে জাতীয় পরিবেশবিদদের আদালতের রায় মেনে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে এই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। অন্যান্য বছর পুজোয় বায়ু দূষণের মাত্রা প্রায় 200 কাছাকাছি থাকে রবীন্দ্র সরোবরে। সেইখানেই এবছর রবীন্দ্র সরোবরে বায়ু দূষণের মাত্রা মাত্র 90। লেক এর মধ্যে বাজি ফাটানো আগুন জ্বালানোর ফলে নিরীহ প্রাণী পশুপাখিরা ভয় পায় এবং জীবন নাশ হয়। এবছর ছট পুজো বন্ধ হওয়াতে নিরীহ পশুপাখিরা প্রাণে বেঁচে গেছে।"
পরিবেশবিদ নব কুমার দত্ত জানিয়েছেন, "রাজ্য সরকার ভোটের রাজনীতি করছে। তাই জন্যই জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কে হাইকোর্টে ও সুপ্রিমকোর্টে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে একটা সময় ময়দান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বইমেলাকে। তাহলে দূষণ প্রতিরোধ করতে কেন রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর ছট পুজো বন্ধ করা হবে না। আজ পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছে তাতে বোঝা গেল রাজ্য সরকার চাইলে সবরকম ব্যবস্থা করতে পারে।"