পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

2 বার প্রাণসংশয়, শ্বাসনালীর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বাদ দেওয়ায় বাঁচল নাবালক

ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের বাসিন্দা আট বছরের জিতেশ মান্না (নাম পরিবর্তিত) । ডেঙ্গি হওয়ায় ভরতি ছিল হাসপাতালে । সেখানে প্রথমে সে ঠিক হলেও পরে সমস্যা দেখা দেয় । কারণ, ভেন্টিলেশনে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তার শ্বাসনালীর একটি অংশ । শ্বাসনালীর সেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বাদ দেওয়ায় বাঁচল নাবালক ।

নাবালক

By

Published : Oct 20, 2019, 9:57 AM IST

Updated : Oct 20, 2019, 5:09 PM IST

কলকাতা, 20 অক্টোবর : ডেঙ্গির জেরে ছিল প্রাণসংশয় । যে কারণে, প্রাণে বাঁচাতে নাবালককে রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনে । শেষ পর্যন্ত, ডেঙ্গির কবল থেকে প্রাণে বেঁচে বাড়িও ফিরেছিল সে । তবে, মাস দেড়েক পরে আবার সমস্যা । ফের প্রাণসংশয় দেখা দেয় তার । কারণ, ভেন্টিলেশনে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তার শ্বাসনালীর একটি অংশ । বিরল এই সমস‍্যার সমাধানে অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালীর ক্ষতিগ্রস্ত ওই অংশটি কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া চিকিৎসকদের কাছে অন্য আর কোনও উপায় ছিল না । অথচ, এই অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক । কী হবে ? অস্ত্রোপচার না করলেও যেমন ঝুঁকি, করলেও ঝুঁকি । অবশেষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হলেন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । প্রাণে রক্ষা পেল নাবালক ।

ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের বাসিন্দা আট বছরের জিতেশ মান্না (নাম পরিবর্তিত) । ডেঙ্গি হওয়ায় ভরতি ছিল হাসপাতালে । সেখানে প্রথমে সে ঠিক হলেও পরে সমস্যা দেখা দেয় । SSKM হাসপাতালের CTVS (কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জারি)-এর চিকিৎসক শুভেন্দু মহাপাত্র বলেন, "শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে এই নাবালককে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল । পেডিয়াট্রিক মেডিসিনে তাকে ভরতি করানো হয় । এর আগে এই শিশুর ডেঙ্গি হয়েছিল । জটিল পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে এই শিশুকে রাখতে হয়েছিল । ব‍্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে, নিউমোনিয়া হয়ে, ডেঙ্গির অন্য যে কম্প্লিকেশনস হয়, তার জন‍্য দীর্ঘ সময় ধরে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল । ডেঙ্গি থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতেও ফিরে যায় নাবালকটি ।" এই চিকিৎসক বলেন, "মাস দেড়েক পরে আবার তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । তখন আমাদের এখানকার শিশু বিভাগে তাকে ভরতি করানো হয়‌ ।" পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, এই শিশুর শ্বাসনালীর মাঝখানের অংশ অর্থাৎ, গলার ভিতরের অংশটি ছোটো হয়ে গেছে । শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে । এই চিকিৎসক বলেন, "এর জন্য নাবালকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল । বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হচ্ছিল । পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ থেকে তাকে রেফার করা হয় CTVS-এ । এমারজেন্সি বেসিসে নাবালকের শ্বাসনালীকে ডায়লেটরের মাধ্যমে চওড়া করে দেওয়া হয়, যাতে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় ।"

নাবালকের পরিজনদের তখন জানিয়ে দেওয়া হয়, শ্বাসনালীকে চওড়া করে দেওয়ার ফলে সে কিছুদিন সুস্থ থাকবে । তবে, তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন । প্রথম ডাইলেটেশনের পরে 15 দিনের মতো হাসপাতালে ছিল জিতেশ । বাড়ি ফিরে যেতে চাইছিল সে । তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার জন্য চিকিৎসকরাও ভাবনা-চিন্তা করছিলেন । তখন আবার তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শ্বাসনালী আবার চওড়া করে দেওয়া হয় ডায়লেটরের মাধ্যমে । চিকিৎসকরা তখন সিদ্ধান্ত নেন, অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে দ্রুত এই শিশুর শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার করা হবে । কোন ধরনের অস্ত্রোপচার? চিকিৎসক শুভেন্দু মহাপাত্র বলেন, "ট্রাকিয়াল সার্জারি । এটা বিরল । কলকাতায় খুব কম সেন্টারে খুব কম এই সার্জারি করা হয় ।" এ দিকে, দ্বিতীয়বার শ্বাসনালী চওড়া করে দেওয়ার আট থেকে নয় দিন পর থেকে আবার নাবালকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । তখন পুজো চলছে । এই চিকিৎসক বলেন, "মহাসপ্তমীর দিন তৃতীয় বারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওই নাবালকের শ্বাসনালীতে ডায়লেটেশন করা হয় । না হলে কোনও মতেই এই তাকে বাঁচানো যেত না ।"

পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অস্ত্রোপচার করা হয় । চিকিৎসক শুভেন্দু মহাপাত্র বলেন, "অস্ত্রোপচারে শ্বাসনালীর এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিতে হয়েছে । শ্বাসনালীর এই অংশটি সংকুচিত হয়ে গেছিল । নাবালক এখন ভালো আছে । আশা করা হচ্ছে, এই ধরনের সমস্যা আর হবে না ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এটা খুব রেয়ার কম্প্লিকেশন । যে কোনও রোগী যখন দীর্ঘ সময় ধরে ভেন্টিলেশনে থাকে, তাদের ট্রাকিয়াল স্টেনোসিস অর্থাৎ, শ্বাসনালীর মধ্যে যে টিউব দেওয়া থাকে, সেটা যদি তিন থেকে চার দিনের বেশি থাকে এবং যদি ট্রাকিয়ার মধ্যে ইনজুরি হয়, তা হলে এই ট্রাকিয়াল স্টেনোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । বিশেষ করে যাদের সঙ্গে খাদ্যনালীর নল থাকে অর্থাৎ রাইলস টিউব, তাদের ক্ষেত্রে এই দু'টি টিউব পাশাপাশি থাকার কারণে ফিসটুলা হয়ে যায় । খাদ্যনালী এবং শ্বাসনালীর মাঝে যে পর্দার দেওয়াল থাকে, তা নষ্ট হয়ে যায় । কারও ফিসটুলা হয়, কারও ট্রাকিয়াল স্টেনোসিস হয় ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "দীর্ঘ সময় ধরে ভেন্টিলেশনে থাকার ফলে এই রেয়ার কম্প্লিকেশন দেখা দেয় । এটা লাইফ থ্রেটনিং কম্প্লিকেশন। এই পরিস্থিতিকে ম্যানেজ করা অথবা এই পরিস্থিতি থেকে সুস্থ হওয়ার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক । এই নাবালকের ক্ষেত্রে আমরা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করতে পেরেছি । কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেওয়া হতে পারে ।"

SSKM হাসপাতালের CTVS-এর এই চিকিৎসক বলেন, "অস্ত্রোপচার করা না হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হত না । এই ট্রাকিয়াল স্টেনোসিসে টিশু ইনজুরি হয়ে, টিশু ইনগ্রোথ হয়ে শ্বাসনালীর রাস্তাটা যেভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল, কোনও ওষুধে তা ঠিক করা যায় না । ডায়লেট করে সাময়িকভাবে কিছু সময় পাওয়া যায়, যাতে অস্ত্রোপচারের জন্য পরিকল্পনা করা যায় । আর একটি হচ্ছে, ট্র‍্যাকিয়াল স্টেন্ট দেওয়া হয় । এখন এই স্টেন্ট পাওয়া যায় । তবে, এই স্টেন্টের ব‍্যবহারও সাময়িক । অর্থাৎ উপায় হচ্ছে ট্রাকিয়াল সার্জারি । শ্বাসনালীর ডিজ়িজ় অংশকে বাদ দিয়ে ভালো অংশকে জুড়ে দেওয়া হয় । কিছুটা অংশ বাদ দিলেও সমস্যা হয় না । অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে । এক-তৃতীয়াংশ বা প্রয়োজনে অর্ধেকও বাদ দেওয়া যেতে পারে ।"

Last Updated : Oct 20, 2019, 5:09 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details