পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

NRS আন্দোলনের এক বছর পরও অবস্থা বদলায়নি, অভিযোগ ডাক্তারদের একাংশের

NRS - এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এক বছর পার করল গত 11 জুন ৷ চিকিৎসক নিগ্রহের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনের এক বছর পর চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে কতটা ৷

After one year of junior doctors agitation what is the present scnerio in nrs kolkata
NRS-এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের এক বছর : প্রতিশ্রুতিই সার, বদলায়নি পরিস্থিতি

By

Published : Jun 13, 2020, 1:14 PM IST

Updated : Jun 16, 2020, 6:48 AM IST

কলকাতা, 13 জুন : COVID-19 সংক্রমণের নিরিখে 11 জুন ভারতের স্থান বিশ্বে 4 নম্বরে পৌঁছে গিয়েছে । COVID-19-এ আক্রান্তের সংখ্যা এ রাজ্যেও বেড়ে চলেছে । এদিকে, গত বছর 11 জুনই NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শুরু হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের ঐতিহাসিক আন্দোলন । এই আন্দোলনের আগুন এ রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে কার্যত গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল । অবশেষে, গত বছর, 17 জুন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয় । নবান্নের ওই বৈঠকের জেরে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । ওই সব প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কতটা হয়েছে? বিশ্বজুড়ে অতিমারী COVID-19-এর কারণে পরিস্থিতি এখন অন্যরকম । তবে, এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আগে পর্যন্ত ওই সব প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগ, প্রতিশ্রুতি হিসাবেই রয়ে গিয়েছে । পরিস্থিতি ঠিক যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমনই আছে বলে যেমন জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । তেমনই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরিকাঠামোগত খামতি থেকে গেছে । এই খামতির বিষয়টি COVID-19-এর এই সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় ৷

নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের রিওয়ার্ড নোট

গত বছর 10 জুন বিকালে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ট্যাংরার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন মৃত ওই রোগীর ক্ষুব্ধ পরিজনরা । ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ ওই পরিজনদের কাছে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ ওঠে । এই ঘটনার জেরে ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে । মৃত ওই রোগীর ক্ষুব্ধ পরিজনরা ভিড় জমাতে থাকেন হাসপাতালে । পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী । অভিযোগ, এরই মধ্যে গেটের বাইরে থেকে হাসপাতালের ভিতরে মৃত ওই রোগীর ক্ষুব্ধ পরিজনরা ইট ছুঁড়তে থাকেন । ওই ইটের আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন এক জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায় । তাঁর মাথায় আঘাত লাগে । তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি এক হাসপাতালে । এই ঘটনার জেরে আরও উত্তপ্ত হয়ে পরিস্থিতি । হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তাররা পৌঁছে যান ঘটনাস্থানে । তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, অবস্থান শুরু করেন, এই ঘটনার বিহিত চাইতে থাকেন । গত বছরের 10 জুন গভীর রাত (ঘড়ির কাঁটায় তখন অবশ্য 11 জুন) থেকে কর্মবিরতি শুরু করে দেন NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা । চলতে থাকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সির কাছে অবস্থান বিক্ষোভ । বিচার চাইতে থাকেন তাঁরা । দাবি জানানো হয় , মুখ্যমন্ত্রীকে ঘটনাস্থানে যেতে হবে । হাসপাতালের গেট আটকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতে থাকেন । পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের তরফে চলতে থাকে চেষ্টা । হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । পরের দিন 12 জুন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব ৷ বর্তমানে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা । অভিযুক্ত 5 জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয় । তবে, এরপরেও দাবিতে অনড় থাকেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা । গত বছরের 10 জুন রাতে হাসপাতালে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে । অন্যদিকে, NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইমার্জেন্সির কাছে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বিক্ষোভের মঞ্চে ভিড় বাড়তে থাকে । টানা চলতে থাকে অবস্থান । ব্যাহত হতে থাকে চিকিৎসা পরিষেবা । ছড়িয়ে পড়তে থাকে আন্দোলনের আগুন । NRS-এর এই দাবি আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে একে একে কলকাতাসহ এরাজ্যের অন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররাও শুরু করে দেন কর্মবিরতি । এ রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফেও সমর্থন জানানো হয় । জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেন সিনিয়র ডাক্তাররাও । দিল্লির AIIMS - সহ দেশের অন্য বিভিন্ন স্থানের চিকিৎসকরাও NRS-এর আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে থাকেন । এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বহু বিশিষ্ট মানুষ NRS-এর অবস্থান বিক্ষোভের স্থানে বক্তব্য রাখেন । সমর্থন জানাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিক্ষোভের স্থানে যান । সমর্থন জানাতে থাকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন । সরকারি, বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চের তরফে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির আউটডোরে 12 ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয় । এই কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ গণছুটি নেয় । সাধারণ মানুষের বিভিন্ন অংশের সমর্থনও পেতে থাকে দাবি আদায়ের এই আন্দোলন । অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে না ফিরলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী । ধর্মীয় পরিচয় দেখে চিকিৎসকরা চিকিৎসা পরিষেবা দেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি । যার জেরে দেখা দেয় বিতর্ক । তবে, দাবিতে অনড় থাকেন আন্দোলনরতরা । চিকিৎসকদের মহামিছিলে সরকারি-বেসরকারি, সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি বিশিষ্ট অনেক মানুষও যেমন পা মেলান । অবশেষে, গত বছরের 17 জুন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধি হিসাবে 31 জন জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী । সরকার প্রথমে রাজি না হলেও, পরে আন্দোলনরতদের দাবি অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমে এই বৈঠকের লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ।

বছর পেরোলো NRS - এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন

কী হল এরপর ?

রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস ৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, " দুই-চারটি হেলপ্লাইন তৈরি করা, পুলিশের কে, কোন জ়োনে থাকবেন, তা জানিয়ে দেওয়া । দুই-চারটি হাসপাতালে দুই-চারটি হোর্ডিং লাগানো । সবই সাময়িক ছিল । " প্রতিটি হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ি, অভিযুক্তকে নন বেল-এবেল ধারায় গ্রেপ্তার করাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । একথা জানিয়ে তিনি বলেন, " তার মধ্যে দুই-একটি ফোন নম্বর সরকারিভাবে ঘোষণা করা ছাড়া আর কিছু বাস্তবায়ন হয়নি । পরিস্থিতি ঠিক যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমনই আছে । " তিনি আরও বলেন, " মাঝে মধ্যে সরকারকে আমরা জানিয়েছি, যে প্রতিশ্রুতিগুলি দেওয়া হয়েছিল সেগুলি রূপায়িত হোক । কিন্তু দুই-চারটি ছোটখাটো বিষয় ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি, প্রতিশ্রুতি হিসাবেই রয়ে গেছে । NRS-এর পরেও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা হয়েছে । COVID-19-এর এই পরিস্থিতি কেটে গেলে জানি না আবার একই রকমভাবে নিগ্রহের সম্মুখীন হতে হবে কি না । COVID-19-এর আবহে হয়ত চিকিৎসক নিগ্রহের পরিমাণ কমেছে । কিন্তু, চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের যে আচরণ, এখনও তা দেখা যাচ্ছে COVID-19 সংক্রমিত হলে বা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরলে । চিকিৎসকদের সম্মান জানানোর জন্য হাততালি, ফুল ছোঁড়া এসব অনেক কিছুই হয়েছে । এরপরে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে , চিকিৎসকদের সুরক্ষা চিকিৎসকদের নিজেদেরই নিতে হবে । মানে, সৈন্যবাহিনীকে আপনি যুদ্ধ করতে পাঠাবেন, আর তাঁর সুরক্ষার দায়িত্ব নেবেন সৈন্যরাই । এটা হচ্ছে রাষ্ট্রের মতামত । একই রকমভাবে আমাদের এখানেও তাই হচ্ছে । COVID-19-এর আবহে যতটা সুরক্ষা পাওয়ার কথা, সব সময় যে চিকিৎসকরা পাচ্ছেন, তা নয় । "

NRS-এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন

চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি, চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, " NRS-এ এর আগে এরকম আক্রমণ আমরা দেখিনি । আক্রান্ত হয়েছিলেন পরিবহ মুখোপাধ্যায় । আমরা দেখেছিলাম, হয়তো বহুদিনের জমা ক্ষোভ ফেটে পড়েছিল । চিকিৎসকদের মধ্যে আমরা অদ্ভুত এক ইউনিটি দেখেছিলাম ৷ যেটা কি না কেউ কোনও দিন জ্ঞানত, জীবিত কোনও ডাক্তার দেখেছেন বলে মনে পড়ে না । সিনিয়র-জুনিয়র, সরকারি-বেসরকারি সব রকম চিকিৎসকদের ইউনিটি দেখেছিলাম । আগুনটা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম । সাধারণ মানুষ দলে দলে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন । ঐতিহাসিক একটি মিছিল হয়েছিল । আমাদের আত্মীয়-পরিজনরাও রাস্তায় নেমেছিলেন । 15-20 সব বয়সী মানুষ আমাদের সঙ্গে হেঁটেছিলেন । এটা অভূতপূর্ব । "

NRS আন্দোলনের এক বছর পরও অবস্থা বদলায়নি, অভিযোগ ডাক্তারদের একাংশের

কিন্তু এর পরে...?

তিনি বলেন, " যে FIR গুলি হয়েছিল, সেগুলি নিয়ে কী হল, আমরা জানতে ইচ্ছুক । এমনও জানতে পারি, অনেকে নাকি সাক্ষী দিতে যাননি । যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে অন্যায় হয়েছে । আমরা চাই, অন্যান্য ঘটনার মতো এই ঘটনার-ও সমাপ্তি হোক । অভূতপূর্ব ওই ইউনিটি আমরা অ্যাচিভ করতে পেরেছিলাম সেটা একটা প্যান্ডোরার বাক্স । এই বাক্স একবার খুলে গেছে । সুতরাং ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের ওপর যদি কোনওরকম আক্রমণ নেমে আসে, এখন কিন্তু আমরা জানি কীভাবে সবাইকে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হয় । আমাদের উপর যারা আক্রমণ করবেন তাঁরা যেন এটা মাথায় রেখে করেন । " তিনি আরও বলেন, " প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিতে হবে । COVID-19 - এর সময় এটা হয়েছে । ফোন করলেই আপনি এখন শুনতে পাচ্ছেন । গত তিন বছর ধরে এটা আমরা বলে আসছি , প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে বলা উচিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হাত পড়লে সরকার সহ্য করবে না । এই সামান্য কথাটা বলতে কোরোনাকে লাগল কেন, সেটা দুঃখের বিষয় । তবে শেষ পর্যন্ত হয়েছে, তাতে আমরা খুশি । আমরা পিছনের দিকে তাকিয়ে চলি না । "

রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম ৷ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, " আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী তখন বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন । কিন্তু, যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিলেন, সেগুলির প্রায় কোনওটাই রক্ষা করেননি । প্রধানত পরিকাঠামোগত উন্নয়নের যে বিষয় ছিল, সেই উন্নতি হয়নি । প্রতিশ্রুতি, প্রতিশ্রুতির জায়গায় থেকে গিয়েছে । COVID-19-এর পরিস্থিতি অন্যরকম পরিস্থিতি যে কারণে হয়তো আগের মতো ঘটনা হচ্ছে না, এটা ঠিক । কিন্তু, যে কোনও সময় সেই ঘটনা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে । পরিকাঠামো আরও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে । সেই অর্থে বললে, যে চাহিদা সেটা COVID-19-এর জন্য বহুগুণ বেড়ে গেছে । পরিস্থিতি যে কোনও সময় আগের মতো হতে পারে । পরিকাঠামোগত খামতি রয়েছে বলেই এই ধরনের ঘটনা দেখা দেয় । " চিকিৎসকদের একটি সংগঠন মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক, চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, " NRS-এর আন্দোলন, গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছিল । প্রধানত পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি ছিল । সেই দাবি পূরণ হয়নি । "

গত বছর এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া জুনিয়র ডাক্তাররা কী বলছেন?

আন্দোলনরত ডাক্তারদের প্রতিনিধি হিসাবে গত বছর 17 জুন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যে 31 জন ছিলেন, তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । তাঁদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি । তবে, গত বছরের এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো বলেন, " NRS-এর ওই আন্দোলনের পরে আপাতদৃষ্টিতে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা আগের তুলনায় কম ঘটতে দেখা গেছে । তবে, ওই আন্দোলনের প্রধান বিষয় ছিল, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে । এটা এখনও হয়নি । যেমন, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন প্রয়োজন । এক বছর হয়ে গেলেও এখনও সিটি স্ক্যান হয় না । জেলার মেডিকেল কলেজগুলিতে সুপার স্পেশালিটি বিভাগ তৈরির কথা ছিল । এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি, কম-বেশি একই অবস্থায় রয়েছে । নিরাপত্তার কথা যদি বলা হয়, বিভিন্ন হাসপাতালে পুলিশ বাড়ানো হয়েছিল । কিছু দিন ছিল । এখন COVID-19-এর পরিস্থিতির মধ্যে আর নেই । " তিনি আরও বলেন, " আমাদের দাবি ছিল, পরিকাঠামোর উন্নতি করলে মানুষকে পরিষেবা দিতে পারব আমরা । পেশেন্ট পার্টি আমাদের সিকিউরিটি । আমাদের সিকিউরিটি পুলিশ হতে পারে না । কারণ, আমি যদি চিকিৎসা দিই, তা হলে রোগী কেন আমাকে মারতে যাবেন । পরিকাঠামো নেই বলে চিকিৎসা দিতে পারছি না । পরিকাঠামোর এই অভাব COVID-19 পরিস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে । সত্যিকারের পরিকাঠামো নেই বলে রাজ্য সরকার নাকানি-চোবানি খাচ্ছে । "

গত বছরের 17 জুনের পরেও দেখা গেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে । দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও ওই জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছিল । গত বছরের 2 জুলাই নবান্নের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যভবনে রিভিউ মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করেছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা । অথচ, তার কিছু দিন পর থেকে এই আন্দোলন আর হতে দেখা যায়নি । কেন আন্দোলন চলল না, সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানা সম্ভব হয়নি । তবে, জুনিয়র ডাক্তারদের বিভিন্ন অংশে এমন কথা শোনা যায়, এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুরু হয়েছিল । এটা একটা গণআন্দোলন ছিল । সবাই পথে নেমেছিলেন । পড়াশোনা, ডিউটি এসবের চাপের মধ্যে আন্দোলন আর চালানো যায়নি । আন্দোলনরতদের প্রতিনিধি হিসাবে যে 31 জন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের উপর প্রশাসনিক প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল বলেও শোনা যায়‌ । এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, " নৈতিকভাবে সবাই তখন এই আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন । তাই এই আন্দোলন ওই রকম আকার ধারণ করেছিল । সত্যিই যে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, সেটা অনুভব করেছিল । এর সঙ্গে সাধারণ মানুষ সমর্থন করেছিল । সাধারণ মানুষের এই সমর্থন দেখে যে জুনিয়র ডাক্তাররা কোনও আন্দোলনে অংশ নিতেন না ৷ তাঁরাও মনে করেছিলেন এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া উচিত । সেই জায়গা থেকে একটা গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল । "

আর, পরিবহ মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি এখন কেমন আছেন? কী বলছেন তিনি?

তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি । তবে , জানা গেছে, তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না । যদিও, সুস্থ হয়ে ওঠার পরে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট করেছেন তিনি । জানা গেছে, তিনি এখন উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনার মধ্যে রয়েছেন । অনেকের সঙ্গে পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের এখন আর যোগাযোগ নেই । নবান্নের ওই বৈঠকে অংশ নিয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন এমন এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, " ফোন নম্বর বদলে ফেলেছে পরিবহ মুখোপাধ্যায়, যোগাযোগ হয়নি । " ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি, চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, " পরিবহ মুখোপাধ্যায় ভালো আছে, কাজে জয়েন করেছে, এটা শুনেছি । " অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, " ব্যক্তিগত স্তরে পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়নি । " পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের মাথায় যে আঘাত লেগেছিল, সেই বিষয়ে এই চিকিৎসক বলেন, " ব্রেনের এই ড্যামেজগুলো তে আর রিকভারি হয় না । কিছু সমস্যা তো থাকবে । পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের ফ্রন্টাল লোপে চোট লেগেছিল । কিছু সমস্যা নিয়েই হয়তো তাঁকে থাকতে হবে । "

Last Updated : Jun 16, 2020, 6:48 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details