কলকাতা, 26 জানুয়ারি:সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বাংলা শেখার হাতে খড়ি পর্ব (Hatey Khori of Governor) ৷ সেই পর্ব শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা গেল দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল ৷ সূত্রের খবর, এদিন রাতের বিমানেই রাজধানী যাচ্ছেন তিনি ৷ এদিনই জরুরি তলব করে তাঁকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে ৷ শুক্রবার রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমানে দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়রের ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হতে পারে (CV Ananda Bose summoned to Delhi) ৷
উল্লেখ্য, সরস্বতী পুজোর দিন রাজ্যপালের হাতে খড়ি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি ৷ এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ থাকলেও রাজভবনে জাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ এদিন হাতে খড়ির পর রাজ্যপালের মুখে শোনা গিয়েছে 'জয় বাংলা' স্লোগানও ৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিউতি আলোচনাও শুরু হয়েছে ৷ তার মাঝেই রাজ্যপালের অকস্মাৎ এই দিল্লি সফরের খবরে জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷ প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েকদিনে রাজ্যপালের বাংলা শেখা, হাতে খড়ি নিয়ে এবং সর্বোপরি রাজ্যপাল হিসেবে সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকায় বিজেপি'র অন্দরে যে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা নিয়েই আলোচনা করতেই কি এবার দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose)?
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, রাজ্যপাল তো আসলে রাজ্যে থাকা কেন্দ্রের প্রতিনিধি । কেন্দ্রের পছন্দ করা মানুষকেই রাষ্ট্রপতির সুপারিশের মাধ্যমে রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় । খুব স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সময় কেন্দ্রের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালকে । এ রাজ্যেও এমন উদাহরণ যে নেই তেমন নয় । সিভি আনন্দ বোসের পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড় যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তখন রাজভবন এবং নবান্নের সংঘাত চরম পৌঁছেছিল ৷
আরও পড়ুন: আমি বাংলার মানুষকে ভালোবাসি, নেতাজি আমার নায়ক; হাতে খড়ি দিয়ে বললেন রাজ্যপাল
কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের তেমন সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়নি ৷ বরং রাজ্য সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া রক্ষা করেই চলছেন সিভি আনন্দ বোস ৷ প্রশ্ন উঠছে, এমতাবস্থায় কেন্দ্রের নিজস্ব এজেন্ডা জানিয়ে দিতেই কি তাঁকে দিল্লি ডাকা হল । এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের পরামর্শ নিতেই কি তিনি দিল্লি যাচ্ছেন ?
সূত্রের খবর, এদিন দুপুরেই জরুরি ভিত্তিতে দিল্লিতে তলব করা হয় রাজ্যপালকে । প্রথমে স্বপন দাশগুপ্ত, পরবর্তীতে শুভেন্দু অধিকারীর মুখে রাজ্যপালের হাতে খড়ির অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছিল ৷ সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল বাংলা শিখবেন খুব ভালো কথা । কিন্তু ঘটা করে রাজভবনে হাতে খড়ির অনুষ্ঠানের পিছনে রাজনীতি রয়েছে । তিনি বলেছিলেন, "এটা চমক দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয় ।"
এরপরই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন একটি টুইট করেন ৷ সেখানে, রাজভবনে না যাওয়া নিয়ে তিনি যা বলেছেন তা কার্যত স্বপন দাশগুপ্তের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি । এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, "আমি রাজ্যপালকে সতর্ক করব । যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নন্দিনী চক্রবর্তীর পাতা ফাঁদে তিনি পা না দেন ।" একইসঙ্গে রাজ্যপালের মুখে জয় বাংলা স্লোগান নিয়েও আপত্তি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা । তাঁর দাবি, মেডেন স্পিচ ছিল...আর তা নন্দিনী চক্রবর্তী লিখে দিয়েছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্যপালের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ওই ভাষণ তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । মনে করা হচ্ছে, তাঁর দিল্লি সফরে এই 'জয় বাংলা' স্লোগান নিয়ে রাজ্যপালের ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে । কারণ শুভেন্দু এদিনও দাবি করেছেন 'জয় বাংলা' বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ৷