কলকাতা, 30 অগাস্ট : WBCS 2017-র মেধাতালিকায় প্রথমে থাকা ব্যক্তি প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারেননি । খোদ প্রার্থীর RTI-এর উত্তরে সাফ জানিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (WBPSC)।
রাজ্যের আমলাতান্ত্রিক কাঠামোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডার নিয়োগের জন্য প্রতি বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তত্ত্বাবধানে WBCS (এগজ়িকিউটিভ) পরীক্ষা হয় ৷ 2018 সালের প্রথম দিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস (এগজ়িকিউটিভ) ETC এগজ়ামিনেশন 2017-কে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে । অভিযোগ ছিল, WBCS 2017-র মেইন পরীক্ষায় ইংরাজি আবশ্যিকপত্রে প্রথমে 0 পান এক প্রার্থী । সাদা খাতা জমা দিয়েও পরে সেই প্রার্থীই হঠাৎ করে 162 পেয়ে যান । ওই প্রার্থী আবার বাংলা আবশ্যিকেও 18 নম্বর পাওয়ার পর তা লাফিয়ে বেড়ে হয়ে যায় 168 নম্বর । ফলে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি ওই প্রার্থী । তা সত্ত্বেও ক্লারিক্যাল ত্রুটির উল্লেখ করে দ্বিতীয় একটি তালিকা প্রকাশ করে ওই প্রার্থীর নাম সংযুক্ত করা হয় । মেইনস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই সামনে এসেছিল বিষয়টি ।
মেইনস পরীক্ষার পর ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে 2018 সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয় WBCS 2017-র চূড়ান্ত সুপারিশ তালিকা । আশ্চর্যজনকভাবে সুপারিশ তালিকার প্রথম স্থানেই দেখা যায় ওই প্রার্থীর নাম । তিনি ইংরাজি ও বাংলায় প্রথমে 0 ও 18 পেয়ে পরে 162 ও 168 নম্বর পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল । তার পরেও তিনি কী করে প্রথম স্থান অধিকার করেন তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় প্রশাসনিক মহলে । সরব হয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা । এখনও সেই সময় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে হওয়া জনস্বার্থ মামলা চলছে হাইকোর্টে ।
এনিয়ে তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রামচন্দ্র ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি । পাশাপাশি পর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আরও একজন মামলা করেছিলেন । পর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী(হাইকোর্টের) গৌরব কুমার বসু । তিনি জানান, সেই মামলা এখনও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে । ওই প্রার্থীর উত্তরপত্র হাইকোর্টে জমা পড়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে । কিন্তু তারপর আর এই মামলার শুনানি হয়নি বিভিন্ন কারণে । ইতিমধ্যে কোরোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সে মামলা এখন সেভাবেই রয়েছে।
প্রায় তিন বছর পর নতুন মোড় নিল ঘটনা । সেই সময় ওঠা একটি অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হল খোদ প্রার্থীর RTI-এ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের জবাবে । চলতি বছর 14 ফেব্রুয়ারি ওই প্রার্থী নিজের পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় জানতে চেয়ে RTI আবেদন করেছিলেন । 17 জুলাই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তরফে সেই আবেদনের উত্তরে বলা হয়েছে, WBCS এগজ়িকিউটিভ 2017-র প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল কমিশনের ওয়েবসাইটে 2017 সালের 13 এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল । সেই আসল তালিকায় ওই প্রার্থীর রোল নম্বর 1700353 ছিল না । ওই বছর 21 এপ্রিল উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকার একটি সংশোধনী প্রকাশ করা হয় । যে তালিকায় 1700353 রোল নম্বর থাকলেও সেই রোল নম্বর সংযুক্ত করার জন্য সমর্থনযোগ্য নথি কমিশনের রেকর্ডে পাওয়া যায়নি । দ্বিধামুক্ত হওয়ার জন্য সেই সময় ওয়েবেলের তরফে পাঠানো ই-মেল কম্পিউটার সার্ভার থেকে পুনরুদ্ধার করা হয় । সেখানে দেখা যায়, ওই প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় 6.865 শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন এবং মেধাতালিকায় তাঁকে 80 হাজার 947 ব়্যাঙ্ক দেওয়া হয়েছিল প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে । যেখানে মাত্র 7 হাজার 921 জন প্রার্থী WBCS (এগজ়িকিউটিভ) ETC 2017-র মেইনস পরীক্ষায় বসার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল ।
ঘটনাটি নিয়ে সেই সময় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। PSC দুর্নীতিমুক্ত মঞ্চের তরফে ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, "2017 সালে WBCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর একটি দুর্নীতির তথ্য সামনে আসে । সাদা খাতা জমা দিয়ে 162 ও ইংরেজিতে 168 পেয়েছিলেন, সেই প্রার্থীই ওই ব্যাচের প্রথম হয়েছিলেন । এখন উত্তরবঙ্গের একটি জায়গায় আধিকারিক হয়ে কাজ করছেন । যে RTI রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা যায়, তিনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। এই ঘটনার জেরে দু'জন আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে ।"
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এখন আলিপুরদুয়ারের DM DC(প্রবেশনে) পদে রয়েছেন । এনিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাশ করেছিলেন ? এপ্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, "আমাকে সব উত্তরপত্র দিয়েছে । আমি খাতাপত্রগুলি চেয়েছিলাম । অনেকটাই পেয়ে গেছি ।" তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করেছেন কি না সেবিষয়ে তিনি বলেন, "প্রিলিমিনারিতে পাশ না করলে মেইনস-এ কী করে যাব ? আমার RTI করার অধিকার আছে, তাই আমি করেছি । আমার খাতাপত্র দেখতে চেয়েছি ।" তিনি আরও বলেন, "আমি পরীক্ষা ভালো দিয়েছি । এতদিনে ওরা আমার কাগজপত্র অনেকটাই দিয়ে দিয়েছে । এখন আমি ওদের নোটিস পাঠিয়েছি । আমি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলাম । হাইকোর্টে আমাকে সব সাপ্লাই দিতে বলেছে । ওরা সেইমতো একটা একটা করে দিচ্ছেন ।"
এবিষয়ে জানতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দেবাশিস বোসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি তাঁর সময়কালে ঘটেনি । তাই তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না ।