কলকাতা, 17 মে : নিউটাউন শুটআউট কাণ্ড । কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনামে । যতদিন যাচ্ছে একটার পর একটা তথ্য উঠে আসছে । একটার পর একটা নাম... এবার জুড়ল আরও একজন । একজন নারী । রহস্যময়ী নারী ।
কলকাতার পানশালাগুলিতে গেলে কখনও আপনিও হয়ত এই নারীকে দেখে থাকতেই পারেন । রঙিন আলোয় তার কোমরের দুলুনিতে মজেছে অনেকে । নেশা ধরিয়েছে তার চোখের চাহনি । নাচের তালে আবেদনময়ী শরীরের ভাঁজ মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেকের । কিন্তু প্রশ্ন এখন, কে সেই রহস্যময়ী মহিলা? নিউটাউন কাণ্ডে কীভাবে জড়াচ্ছে তার নাম ?
রাজ্য পুলিশের গোয়ন্দাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ঘটনার সঙ্গে পানশালার যোগ রয়েছে । ভরত কুমারের সঙ্গে কলকাতা এবং কলকাতা-সংলগ্ন বিভিন্ন পানশালার নর্তকীদের যোগাযোগের হদিস পেয়েছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তকারী অফিসাররা । তার সঙ্গে উঠে এসেছে এই মহিলার নাম । নিউটাউন কাণ্ডে ধৃত ভরত ও সুমিতের খুব ঘনিষ্ঠ সে । তদন্তে জানা গিয়েছে, ভরত ও সুমিত ওই মহিলার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে একাধিক সময় এসে উঠেছে ।
জানা গিয়েছে, পঞ্জাবে বসেই কোন পানশালায় কোন বার ডান্সার নিযুক্ত হবে সেই বিষয়ে দেখত ওই মহিলা । পাশাপাশি কোন বার ডান্সার কোন শহরে কতদিন কাজ করবে তাও ঠিক হত তার কথায় । আদতে পানশালার আড়ালে বারডান্সারদের দিয়ে একাধিক রাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করত ভরত, সুমিত । আর পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করত ওই মহিলা । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পঞ্জাবেই রয়েছে ওই মহিলা ।
আরও পড়ুন,Newtown Shoot-Out : নিউটাউন এনকাউন্টার কাণ্ডে আটক 3
ইতিমধ্যেই দুই নারীর নাম জড়িয়েছে । এনকাউন্টারের আগের দিন রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ একটি কালো গাড়িতে করে জয়পাল সিং ভুল্লার ফ্ল্যাটে দু'জন মহিলা আসেন ৷ বহুতলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে গোয়েন্দারা জানতে পারেন সেদিন রাত 11টা নাগাদ খাবার দিতে এসেছিল এক ব্যক্তি । অন্যান্য দিন দু'জনের খাবার এলেও সেই রাতে খাবার এসেছিল চারজনের জন্য । সূত্রের খবর, রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর জয়পাল সিং ভুল্লার ও জসপ্রিত ওই দুই মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল । মহিলারা সারা রাত সেখানে কাটিয়ে পরের দিন সকালে ওই কালো গাড়িতে করেই চলে যান । সেই ফুটেজও গোয়েন্দারা পেয়েছেন ।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, সুমিত কুমার ব্যবসার আড়ালে একাধিক রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল । পাশাপাশি, ধৃত ভরতের সঙ্গে পঞ্জাব পুলিশেরই বেশ কিছু পুলিশ আধিকারিকের যোগ পেয়েছেন পঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দারা । তবে তদন্তের স্বার্থে এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তদন্তকারীরা ।
ধৃত ভরত এবং সুমিত কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বিষয়ে একাধিক তথ্য মিলেছে । উদ্ধার হওয়া তথ্যের মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে । এবার সুমিত কুমার ও ভরতকে কলকাতায় এনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা । ফলে ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদনও জানাতে পারে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা ।
আরও পড়ুন,Newtown Shoot-out : এনকাউন্টারের আগের রাতে জয়পালদের ফ্ল্যাটে দুই মহিলা, উদ্ধার কন্ডোম
ইতিমধ্যেই নিউটাউন শুটআউট কাণ্ডে পঞ্জাব পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সুমিত কুমার এবং ভরতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পঞ্জাবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ এবং বিধাননগর সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা । এই ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে পঞ্জাব পুলিশ এখনও পর্যন্ত 10 জনকে আটক করেছে । এই সন্দেহভাজন দশজনকে রাজ্য পুলিশ এবং পঞ্জাব পুলিশ পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে । নিউ টাউন কাণ্ডে যতই দিন এগোচ্ছে, ততই রহস্যের একএকটি করে দিক উন্মোচন হচ্ছে । ইতিমধ্যেই ভরত এবং সুমিত কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা ।
কলকাতায় একাধিক জায়গায় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সুমিত কুমারের । অভিযোগ পাকাপাকিভাবে কলকাতায় গ্যাংস্টারদের আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার । ইতিমধ্যেই উত্তর 24 পরগনার চিনার পার্কের একটি পাঁচতারা হোটেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা । এর কারণ হল জয়পাল ভুল্লার এবং জসপ্রিত সিং প্রথম যে দিন কলকাতায় এসেছিল, সেই রাতে তারা চিনার পার্কের একটি নামকরা হোটেলে কাটিয়েছিল । পুলিশের কাছে প্রশ্ন, কী পরিচয়ে তারা সেই হোটেলে ঢুকেছিল? কতক্ষণের জন্য তারা এসেছিল এবং এই সব তথ্য বিস্তারিত জানার জন্য সেই হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতা ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
পাশাপাশি, গ্যাংস্টারদের এই জাল বাংলায় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার আভাস ইতিমধ্যেই পাচ্ছেন গোয়েন্দারা । এর কারণ উত্তর 24 পরগনা, বসিরহাট একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । কিন্তু আটক হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে এই গ্যাংস্টারদের যোগাযোগের সেইভাবে তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের প্রাথমিকভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ ।