কলকাতা, 2 মার্চ : ''দিদিকে বলো''র পর এবার ''বাংলার গর্ব মমতা ৷'' পৌরসভা ও একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে নয়া কৌশল প্রশান্ত কিশোরের ৷
গত লোকসভা ভোটের পর গেল গেল রব উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে ৷ উত্তরবঙ্গে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো ? সন্দিহান ছিলেন দলের অনেক বরিষ্ঠ নেতা ৷ দলের ভিতর শুরু হয়েছিল কানাঘুষো ৷ ঘুরে দাঁড়াতে প্রশান্ত কিশোরকে স্ট্রাটেজিস্ট নিয়োগ করেন মমতা ৷ মঞ্চে নেমেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে ''দিদিকে বলো'' দাওয়াই দিয়েছিলেন পিকে ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দাওয়াই ভালো কাজ করে ৷ ''দিদিকে বলো''র ফল দেখা যায় বিধানসভা উপনির্বাচনে ৷ তিনটির মধ্যে তিনটিতেই জয় ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা ৷ এবার সামনে পৌরসভা নির্বাচন ৷ তার আগে পিকে'র নয়া কৌশল ''বাংলার গর্ব মমতা ৷'' তৃণমূল সূত্রে খবর, দিদি'কে বলো ছিল মমতার হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের মাধ্যম ৷ আর ''বাংলার গর্ব মমতা''-র লক্ষ্য ঘর গোছানো ৷
বুথস্তরের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা, ভোট কৌশল ঠিক করা ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতেই এই নতুন দাওয়ায় দিয়েছেন পিকে ৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, ''বাংলার গর্ব মমতা''-র প্রস্তাবে খুশি দলনেত্রী নিজেও ৷ সেকারণে আজ নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে জনসংযোগ বাড়ানোর উপর বেশি করে জোর দেন ৷ তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে পুরোনো লোকজনকে ফিরিয়ে আনা, তাঁদের সম্মানিত করা, নবীন বরণ ইত্যাদির মতো জনসংযোগ ভিত্তিক একাধিক কর্মসূচির কথা ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আজকের এই সভার মধ্য দিয়ে পৌরভোট ও একুশের নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিল শাসকদল ৷
দল যে সবার ঊর্ধ্বে এবং দলের লোকজনকে অনুশাসন মেনে চলতে হবে, আজ নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে তা স্পষ্ট করে দেন মমতা । বলেন, "দল সবার আগে । এই দলে লবি হয় না । কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না । যারা নিজের মতো রাজনীতি করবে । নিয়ম মানবে না তাদের দল ছেড়ে চলে যেতে হবে । প্রয়োজনে নতুন কর্মী তৈরি হবে । জেলার পুরোনো কর্মী যারা মান-অভিমান করে বসে আছেন । তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে । কাকে আমি পছন্দ করি সেটা পরিচয় নয় । কোনও নেতা দলের থেকে বড় নয় ।"
''বাংলার গর্ব মমতা''-র নামে 75 দিনব্যাপী একটি কর্মসূচির তালিকা প্রকাশ করা হয় তৃণমূলের তরফে । 2 মার্চ থেকে 10 মে পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি । এই কর্মসূচি অনুযায়ী 75 হাজারেরও বেশি সংখ্যক দলীয় নেতা ও তৃণমূলস্তরের কর্মী 15 হাজার এলাকায় যাবেন । 7-15 মার্চ প্রথম পর্যায়ে একটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হবে । 294 টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় একলাখ দলীয় নেতা একাধিক কর্মসূচি পালন করবেন । 250 জনের বেশি দলীয় কর্মী তাঁদের নিজ নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিটি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন । 8-14 মার্চ 294 টি বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় নেতারা প্রায় 2500 জন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা করবেন । 15 মার্চ স্বীকৃতি সম্মেলনে 12000 কর্মীকে সম্মান জানাতে বিশেষ অনুষ্ঠান ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, 20 মার্চ-5 এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গধ্বনি যাত্রা চলবে । এই যাত্রায় 294টি কেন্দ্রের 15,000 টি জনবসতি এলাকায় প্রায় 40,000 কিলোমিটার পথজুড়ে এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন তৃণমূল স্তরের কর্মীরা । 15 দিন ধরে চলবে এই বিশেষ কর্মসূচি । প্রতিদিন 3টি বিধানসভা কেন্দ্রে 10 কিলোমিটার পথ যাবেন দলীয় নেতা ও কর্মীরা । 14 এপ্রিল সংহতি সভার আয়োজন করা হয়েছে । 277 টি বিধানসভা কেন্দ্রের তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত 2.5 লাখ মানুষের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন দলীয় নেতারা। একইসঙ্গে এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলির তফশিলি সম্প্রদায়ের সম্মানীয় ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে ও দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে । 19 এপ্রিল চেতনা সভার মধ্য দিয়ে 97 টি বিধানসভা কেন্দ্রের 50 হাজার হাজার তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলীয় নেতারা ।
তৃতীয় পর্যায়ে 20 এপ্রিল থেকে 10 মে পর্যন্ত একাধিক মিছিল ও সভা চলবে । 20 এপ্রিল থেকে 5 মে পর্যন্ত বাংলার বার্তা । এই কর্মসূচিতে 3,500 পঞ্চায়েত ও পৌরসভায় জনসভা করবেন নেতারা । 8 মে বিশিষ্টা সম্মেলন 294 টি কেন্দ্রের 15,000 মহিলাকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হবে । 3 মে নবীন বরণ সভা,রাজ্যের 1 লাখ যুবক যুবতির তৃণমূলে যোগদান নিয়ে হবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হবে । অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে দলের সদস্যপদ দেওয়া হবে । 20 মার্চ থেকে 8 মে তৃণমূলের সঙ্গে মান্যজন 25,000 জনমত গঠনকারীর সঙ্গে বৈঠক করবেন দলীয় নেতারা । শেষ পর্যায়ে 10 মে হবে পদাতিক সম্মেলন । 1,500 কিমি পদযাত্রা ।
আজকের সভায় বিরোধীদেরও কটাক্ষ করেন মমতা । তাঁর কথায়, কংগ্রেস ও CPI(M)-র আঁতাত রয়েছে BJP-র সঙ্গে । মমতা বলেন, "BJP বলে তাদের টার্গেট 200 সিট । কংগ্রেস আর CPI(M)-কে ছাড় । ওরা ভোট ভাগাভাগি করে নেবে। "
গতকালই রাজ্যে এসেছিলেন অমিত শাহ । পৌরসভা ও বিধানসভার কথা মাথায় রেখে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের ভিত আরও মজবুত করতে এবার থেকে মাসে মাসে আসার কথাও জানিয়েছেন তিনি । এবার তৃণমূলের তরফেও শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি ।