কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি : বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে 69 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হলেও, এই রাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের একাংশ এই বাজেটকে নিরাশার ও জনস্বার্থ বিরোধী বলে মনে করছেন । তাঁরা জানিয়েছেন, "সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল এই বাজেট ।"
স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়ার কথা । একথা জানিয়ে এই রাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার মানস গুমটা বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (who)-র সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ GDP-র ৫ শতাংশ হওয়া উচিত । আমরা দাবি করছি, GDP-র নূন্যতম 2.5 শতাংশ করা হোক । এখনও পর্যন্ত GDP-র 1 শতাংশের মতো স্বাস্থ্যখাতে খরচ হয় । 69 হাজার কোটি টাকা কীভাবে খরচ করা হচ্ছে, সেটাও বিষয় । এই টাকার বড় অংশ চলে যাবে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে । এর মানে, সরকারি কোষাগার থেকে যেটুকু খরচ করা হচ্ছে, সেই টাকাও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । বিমা কম্পানির হাতে মানুষের স্বাস্থ্য তুলে দেওয়া হচ্ছে । শিশুমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু, অপুষ্ট শিশু, এসব ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের থেকেও পিছিয়ে আছি ।"
তিনি আরও বলেন,"PPP মডেলে হাসপাতালের কথা বলা হচ্ছে । এটা বেসরকারিকরণ । স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে এটা আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া । সব মিলিয়ে এই বাজেট আমাদের নিরাশ করছে ।"
স্বাস্থ্য পরিষেবা বেসরকারিকরণের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল এই বাজেট মনে করছেন চিকিৎসকেরা এরাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "টাকার অঙ্কে 69 হাজার কোটি টাকা অনেক বলে মনে হতে পারে । তবে, স্বাস্থ্যখাতে GDP-র 1 শতাংশেরও কম বরাদ্দ হয়েছে । উন্নত দেশে যেখানে GDP-র কোথাও 5, কোথাও 10, কোথাও 15 শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয় । সেক্ষেত্রে এখানে অত্যন্ত সংকীর্ণভাবে এই বাজেট করা হয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, "যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা কীসের জন্য? স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত বেসিক যে খামতিগুলি রয়েছে, সেগুলি পূরণ করার জন্য কি করা হয়েছে? যদি খামতিগুলি কিছু কিছু করে পূরণের কথা বলা হতো, তাহলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতি হতো । বাস্তবে এটা বলা হচ্ছে না । স্বাভাবিকভাবে এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব নয় । বাজেটে PPP মডেলের কথা বলা হচ্ছে । অর্থাৎ, সরকারি যে সেটআপগুলি রয়েছে সেগুলি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে চালানো হবে । এটার জন্য যে খরচের দরকার তা এই বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে । আমাদের স্বাস্থ্যের অধিকার আরও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে । স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে অবস্থা ছিল, তার থেকেও আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাবে । এই বাজেট জনস্বার্থবিরোধী ।"