কলকাতা, 23 সেপ্টেম্বর : পূর্ব কলকাতার কামারডাঙা সাধারণ দুর্গোৎসব সমিতি ৷ তৎকালীন পরাধীন ভারতের ট্যাংরার পটারি রোডের দুর্গা মাঠে শুরু হয়েছিল এই দুর্গাপুজো ৷ হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা ৷ এই পুজোই এবার শতবর্ষে পা দিতে চলেছে ৷ তাই পুজোর উদ্যোক্তারা অভিনব দুর্গাপ্রতিমা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন ৷ 110 কেজি রুপো দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা ৷ শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার ৷
110 কেজি রুপো দিয়ে তৈরি মূর্তিটি প্রায় 15 ফুট উঁচু ৷ প্রতিমার আদল বাংলা ঘরানার হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া থাকবে । যেমন মাথায় ঘোমটা থাকলেও দুর্গা পরে থাকবেন ঘাগড়া । রুপোর পাতের উপর তৈরি হয়েছে প্রতিমার অলঙ্কার । অসুরকে বিনাশ করে শান্তির বার্তা নিয়ে দুর্গা দাঁড়িয়ে থাকবেন অসুরের শরীরের উপর । দেবী দুর্গার হাতে অস্ত্রের বদলে থাকবে জ্বলন্ত প্রদীপ । অশুভ শক্তির বিনাশের পর মাতৃমূর্তির এমনই ভাবনার প্রকাশ পাবে শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের শিল্পকর্মে । হাবরার বানিপুরে 10 জন শিল্পী ছয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই প্রতিমা তৈরি করছেন । প্রায় 60 লাখ টাকার এই প্রতিমার সুরক্ষায় থাকছে সশস্ত্র পুলিশ , সিভিক ভলান্টিয়র ও 13 টি CCTV ।
পুজোর থিম 'অপরূপা বাংলা' ৷ পশ্চিমবঙ্গের 23 টি জেলার বিশেষ বিশেষ শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি তুলে ধরা হবে পূজামণ্ডপে ৷ কৃষি, স্বাক্ষরতার হার, জনসংখ্যা ও জেলার বিশিষ্ট মনীষীদের পরিচয় থাকবে মণ্ডপে । আসামের বিশেষ ধরনের বাঁশ দিয়ে তৈরি শিল্প থাকবে মণ্ডপের প্রধান প্রবেশদ্বারে । প্রত্যেক জেলার একটি সম্যক ধারণা তুলে ধরা হবে পাটের নকশার মধ্যে দিয়ে । কারণ, একসময় পাট ছিল পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প । পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান পরিচয় তার হস্তশিল্পে । যেমন বাঁকুড়ার টেরাকোটা, পুরুলিয়ার ছৌ, বর্ধমানের কাঠের পেঁচা, মুর্শিদাবাদের শোলা শিল্প । এ রকম বিভিন্ন জেলার নানা শিল্প-সৃষ্টি দিয়ে তৈরি করা হবে মণ্ডপ । থাকবে কলকাতার ট্রাম ও রিকশার প্রতিকৃতি । পূজামণ্ডপে থাকবে আলো-আঁধারি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা । যা আনা হবে চন্দননগর থেকে । এবারের পুজোর থিম সঙ হবে বাউল ও ঝুমুর শিল্পীদের নিয়ে । পুজোর উদ্বোধনের দিন থাকবে তাঁদেরই লাইভ শো । 10 জন HIV আক্রান্ত মহিলা এই মণ্ডপসজ্জার কাজে যোগ দিয়েছেন । পুজো উদ্যোক্তা সমীর সাহার দাবি, মণ্ডপ ঘুরতে ঘুরতে দর্শনার্থীরা রূপসী বাংলায় হারিয়ে যাবেন ৷
হাবরার চৈতন্য কলেজ থেকে স্নাতক ইন্দ্রজিৎ মূর্তি বানানোর প্রশিক্ষণ নেননি ৷ 2000 সালে দীঘায় বেড়াতে গিয়ে ঝিনুক কিনেছিলেন ইন্দ্রজিৎ । আর তা দিয়েই পাড়ার ক্লাবের কালী প্রতিমা তৈরি করেন । পরের বছরই জেলার দুটি সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব পান । 2016 সালে ত্রিপুরার একটি পুজোর জন্য 4 কোটি টাকার সোনার দুর্গা তৈরি করেন তিনি । 2018 সালে তৈরি করেন 10 কোটি টাকার হীরের প্রতিমা । এবার শতবর্ষে কামারডাঙা সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটির পূজা মণ্ডপে ইন্দ্রজিৎ বানাচ্ছেন 110 কেজি রুপোর প্রতিমা ।