পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Feb 6, 2020, 2:52 AM IST

ETV Bharat / state

আজও শোনা যায় জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের আর্তনাদ, কী বলছে বিজ্ঞানমঞ্চ ?

10 বছরের পুরোনো আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝাড়গ্রাম খেমাশোলি ও সরডিয়া স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় মানুষদের ৷ রটেছে একাধিক গুজব ৷ দাবি, রাত হলেই না কি এলাকা থেকে নানান রকম ভৌতিক আওয়াজ শোনা যায় ৷ ভয়ে সন্ধ্যার পর এলাকার কেউ থাকে না ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের পরামর্শ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷

Jnaneswari Express
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস

ঝাড়গ্রাম, 4 ফেব্রুয়ারি: 10 বছর আগের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ কিন্তু স্মৃতিটা ফ্যাকাসে হয়নি এখনও ৷ দুর্ঘটনাস্থান ঘিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা ধরনের গুজব ৷ ওই এলাকা দিয়ে ভয় যাতায়াত করতে পারে না কেউ ৷ না না ধরনের ভৌতিক শব্দ না কি শোনা যায় এখনও ৷ রাত হলেই সেই আওয়াজ বাড়ে ৷ এলাকার মানুষের দাবি, বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ে সাধারণ মানুষজন ৷ আর এখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি, এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থসিদ্ধি করছে । নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে কুসংস্কার রটিয়ে দিচ্ছে একাংশ ৷ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷ কেন প্রশাসন এই বিষয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ? কেন এলাকার মানুষকে এধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচার ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে ? কেন ভাঙা কামরাগুলো আজও সরানো হয়নি ? উঠছে নানান প্রশ্ন ৷

সালটা 2010 ৷ দিনটা ছিল 28 মে ৷ সময় রাত 1:30 ৷ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এলাকার মানুষদের ৷ প্রথমে কেউ ততোটা আঁচ করতে পারেননি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাও হতে পারে ৷ চারদিক থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ ৷ কান্নার আওয়াজ ৷ বাঁচানোর আর্তনাদ ৷ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের উপর একটি মালগাড়ি উঠে পড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ৷ সরডিহা ও ক্ষেমাসুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল সেদিন । তখন মাওবাদীদের মূল পীঠস্থান ছিল এই জঙ্গলমহলসহ অবিভক্ত মেদিনীপুর । প্রায়ই যেখানে সেখানে দেখা যেত মাওবাদী কার্যকলাপ ৷ আর সেদিনও রাতের অন্ধকারে মাওবাদীরা ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট খুলে রাখায় দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ সরকারিভাবে মৃত্যু হয় 141 জন যাত্রীর ৷ আহত হয় 200 জন ৷ তবে বেসরকারি হিসাব বলেছে এই দুর্ঘটনায় কত শতজনের দেহ যে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে তার হদিশ আজও মেলেনি । শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ বহুদিন পড়েছিল সেই সময় । আজও ওই এলাকায় পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরাগুলো ৷ রোদে ,জলে, ঝড়ে সেগুলো পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে ৷ ঘটনার পর 10 বছর কেটে গেলেও আজও এলাকাজুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের কুসংস্কার ৷ এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল ৷ যার রেশ আজও কাটেনি ৷ এলাকার যে সমস্ত বাসিন্দারা সেদিন সামনে থেকে দেখেছিল ওই দুর্ঘটনা তাদের কাছে আজও সেই স্মৃতি তরতাজা ৷ উদ্ধারকার্যে গিয়ে যারা সেইসব ছিন্নভিন্ন শরীর এবং ভাঙা কামরা দেখেছিল তাদের আজও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে ৷ আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে কুসংস্কার ৷

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস

কুসংস্কার এবং ভয় মানুষের মনে এতটাই দানা বেঁধেছে যে সেই তালিকায় শিক্ষিত মানুষও বাদ যাচ্ছেন না ৷ এলাকার এক শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, "সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল তার বীভৎসতা আজও আমাদের পিছু ছাড়েনি৷ এখনও মনে হয় বিকট আওয়াজ ,সঙ্গে গোঙ্গানির আওয়াজ আসছে৷ মনে হয় আজ রাতেও দুর্ঘটনা ঘটেছে । তাই আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোই না ৷ তবে এটা অলৌকিক সেটা বলবো না ৷ যেহেতু সেই ঘটনায় আমরা সাক্ষী ছিলাম তাই হয়তো এখনও মনে হয় ওখানে মৃত মানুষের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ওই স্থানে গেলেই গা ছমছম করে ওঠে ।"

নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ রাতের বেলায় তো বটেই দিনের বেলাতেও অনেকেই ওই এলাকায় পা মাড়াচ্ছে না । দাবি, অনেকেই না কি রাতে ওই এলাকায় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে ৷ কারও কারও মতে আবার রাত হলেই না কি দু'টো ট্রেনের সংঘর্ষের বিকট আওয়াজ শোনা যায় এখনও ৷ শুনতে পাওয়া যায় না কি তীব্র আর্তনাদ ৷ ওই এলাকার আশপাশ দিয়ে গেলে গা ছমছম করে ৷ আর এখানেই বিভ্রান্তির সূত্রপাত ৷ কেন দুর্ঘটনার এত বছর পরেও এলাকার মানুষ ভয়ে ভয়ে আছেন ? কেন অহেতুক না না ধরনের গুজব বেড়ে চলেছে দিন দিন ? কেন এলাকার মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ? কেন এলাকায় সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে না? কেনই বা এতদিনে ভাঙা কামরাগুলো সরানো হল না? উঠছে একাধিক প্রশ্ন ৷

আজও পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরা

এই ধরনের অলৌকিক আত্মা, অশরীরী আত্মার কথাকে এক বাক্যেই নাকচ করে দিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ । বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন, "এই ধরনের ঘটনা , অশরীরী আত্মা বা ভূতের যারা কথা বলে তারা ভুল কথা বলে । আসলে ওই এলাকায় মাহাত, কুড়মি, লোধা, সবর লোকদের বসবাস । তাদের মধ্যে কুসংস্কার বেশি ৷ সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল এখনও সেই স্মৃতি থেকে ওরা বেরিয়ে আসতে পারেনি । তাই ওরা ভয় পাচ্ছে অহেতুক ৷ এখানে কোনও অলৌকিক ঘটনা নেই । কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার জন্য এই ধরনের ভৌতিক গুজব রটিয়ে থাকে । আমরা প্রয়োজন হলে ওখানে ক্যাম্প করে মানুষকে সচেতন করব ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details