ঝাড়গ্রাম, 4 ফেব্রুয়ারি: 10 বছর আগের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ কিন্তু স্মৃতিটা ফ্যাকাসে হয়নি এখনও ৷ দুর্ঘটনাস্থান ঘিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা ধরনের গুজব ৷ ওই এলাকা দিয়ে ভয় যাতায়াত করতে পারে না কেউ ৷ না না ধরনের ভৌতিক শব্দ না কি শোনা যায় এখনও ৷ রাত হলেই সেই আওয়াজ বাড়ে ৷ এলাকার মানুষের দাবি, বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ে সাধারণ মানুষজন ৷ আর এখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি, এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থসিদ্ধি করছে । নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে কুসংস্কার রটিয়ে দিচ্ছে একাংশ ৷ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷ কেন প্রশাসন এই বিষয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ? কেন এলাকার মানুষকে এধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচার ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে ? কেন ভাঙা কামরাগুলো আজও সরানো হয়নি ? উঠছে নানান প্রশ্ন ৷
সালটা 2010 ৷ দিনটা ছিল 28 মে ৷ সময় রাত 1:30 ৷ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এলাকার মানুষদের ৷ প্রথমে কেউ ততোটা আঁচ করতে পারেননি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাও হতে পারে ৷ চারদিক থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ ৷ কান্নার আওয়াজ ৷ বাঁচানোর আর্তনাদ ৷ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের উপর একটি মালগাড়ি উঠে পড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ৷ সরডিহা ও ক্ষেমাসুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল সেদিন । তখন মাওবাদীদের মূল পীঠস্থান ছিল এই জঙ্গলমহলসহ অবিভক্ত মেদিনীপুর । প্রায়ই যেখানে সেখানে দেখা যেত মাওবাদী কার্যকলাপ ৷ আর সেদিনও রাতের অন্ধকারে মাওবাদীরা ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট খুলে রাখায় দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ সরকারিভাবে মৃত্যু হয় 141 জন যাত্রীর ৷ আহত হয় 200 জন ৷ তবে বেসরকারি হিসাব বলেছে এই দুর্ঘটনায় কত শতজনের দেহ যে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে তার হদিশ আজও মেলেনি । শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ বহুদিন পড়েছিল সেই সময় । আজও ওই এলাকায় পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরাগুলো ৷ রোদে ,জলে, ঝড়ে সেগুলো পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে ৷ ঘটনার পর 10 বছর কেটে গেলেও আজও এলাকাজুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের কুসংস্কার ৷ এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল ৷ যার রেশ আজও কাটেনি ৷ এলাকার যে সমস্ত বাসিন্দারা সেদিন সামনে থেকে দেখেছিল ওই দুর্ঘটনা তাদের কাছে আজও সেই স্মৃতি তরতাজা ৷ উদ্ধারকার্যে গিয়ে যারা সেইসব ছিন্নভিন্ন শরীর এবং ভাঙা কামরা দেখেছিল তাদের আজও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে ৷ আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে কুসংস্কার ৷