ঝাড়গ্রাম, 1 এপ্রিল: দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার কুড়মি জনজাতিরা ৷ একাধিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে শনিবার সকাল থেকে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে 'ঘাঘরা ঘেরা' আন্দোলনে নামল কুড়মি সম্প্রদায়ের লোকেরা ৷ কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি ঐক্য়বদ্ধভাবে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বলে খবর ৷
দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের তফশিলি (এসসি) জাতিভুক্ত করার আবেদন জানিয়ে আসছে কুড়মিরা ৷ অভিযোগ তারপরও তাদের এসসি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না ৷ তাদের আরও অভিযোগ রাজ্য় সরকারই তাদের এসসি তালিকাভুক্ত করতে গড়িমসি করছে ৷ বারবার আবেদন-নিবেদন এবং অনুরোধে কাজ না-হওয়ার জেরেই আন্দোলনে নেমেছেন তারা, এমনটাই দাবি করেছে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষদের ৷ এদিনের আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে সমগ্র ঝাড়গ্রাম জেলাতেই।
কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির ডাকা আন্দোলনের জেরে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন রাস্তায় স্তব্ধ যান চলাচল। বৃষ্টির মধ্যেই আন্দোলন করছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে যারপরনাই বিলম্ব করছে। জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-সহ একাধিক সংগঠন মিলিতভাবে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কুড়মি সমাজের নেতা শিবাজী মাহাত বলেন, "পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী 'ঘাঘরা ঘেরা' আন্দোলন হচ্ছে। কুড়মিদের 76 বছরের বঞ্চনার অবসানের দাবিতেই এই আন্দোলন।"
ঝাড়গ্রাম শহরের সারদাপীঠ মোড়ে রাজ্য সড়ক, সাঁকরাইলের চুনপাড়া, কেশিয়াপাতা, পাকুরিয়া, মুরাকাটি-সহ বেশ কিছু এলাকায় রাস্তা অবরোধ করছে তারা। ঝাড়গ্রাম জেলা ছাড়াও, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাতেও একই ইস্য়ুতে আন্দোলন শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেছে কুড়মি সমাজ। আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, এই আন্দোলনকে মূলত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে ৷ এদিন সকাল ছ'টা থেকে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত 12 ঘণ্টার আন্দোলন চলবে। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ রবিবারও সকাল ছ'টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ট্যাবলো-সহ, ঝুমুর গান ও নাচের সঙ্গে বর্ণাঢ্য সাইকেল নিয়ে মিছিল হবে ৷ এই মিছিল পুরুলিয়া জেলা থেকে শুরু হয়ে বাঁকুড়ায় যাবে ৷ পাশাপাশি আন্দোলনের তৃতীয় তথা শেষদিন, সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি রয়েছে তাদের ৷
আরও পড়ুন: আজ থেকে চালু দুয়ারে সরকার কর্মসূচি, মিলবে বিধবা ভাতা-সহ চারটি নতুন পরিষেবা
সম্প্রদায়ের তরফে আন্দোলনের শেষ দিন বিকাল 3টে থেকে ঝাড়গ্রাম শহরে মহামিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অফিস ঘেরাওয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যায় রবীন্দ্র পার্কে জমায়েত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ওই এলেকাতেই রাত্রিযাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মঙ্গলবার গরাম পুজো করে গরামের আর্শীবাদ নিয়ে খেমাশুলিতে অনির্দিষ্টকালীন জাতীয় সড়ক অবরোধেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সংগঠনের তরফে কার্যত হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে, দাবি না-মিটলে জঙ্গলমহল জুড়ে আমরণ লড়াই চলবে ৷