পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার 10 বছর, আজও ক্ষতিপূরণ পায়নি নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবারগুলি

2010 সালের 27 মে ৷ গভীর রাতে অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকার সরডিহা এলাকায় ঘটে ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনা । রেল দপ্তর থেকে আহত, নিহতদের ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছিল ।

জ্ঞানেশ্বরী
জ্ঞানেশ্বরী

By

Published : May 29, 2020, 6:43 AM IST

Updated : May 29, 2020, 9:33 AM IST

ঝাড়গ্রাম, 28 মে: 10 বছর আগে ঘটে গিয়েছিল সবচেয়ে বড় হৃদয় বিদারক রেল দুর্ঘটনা ৷ ঝাড়গ্রামের জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনা । 149 জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি এখনও নিখোঁজ 15-17 জন যাত্রী । বৃহস্পতিবার সেই দুর্ঘটনার 10 বছর পূর্ণ হল ৷ যদিও আজও ওই নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজ মেলেনি ৷ ডেথ সার্টিফিকেট না মেলায় রেলের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি তাঁরা । এই নিয়ে বৃহস্পতিবার সোশাল মিডিয়ায় লাইভ করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন নিখোঁজ পরিবারগুলির আইনজীবী ।

2010 সালের 27 মে ৷ গভীর রাতে অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকার সরডিহা এলাকায় ঘটে এক ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনা । রেল দপ্তর থেকে আহত, নিহতদের ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছিল । ঘটনার পর আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই সময় বামফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র 24 ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বার করে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন । তারপর কেটে গেছে দশ-দশটা বছর । বাম শাসন সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রতিবছর জ্ঞানেশ্বরী ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোক দিবস পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস । কিন্তু অবাক বিষয়, আজ পর্যন্ত নিখোঁজ যাত্রীদের ডেথ সার্টিফিকেট পরিবার-পরিজনদের হাতে তুলে দিতে পারেনি রাজ্য সরকার ।

জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার 10 বছর

ওই রেল দুর্ঘটনায় S5 কামরার যাত্রীদের বেশিরভাগটাই ছিল হাওড়া ও কলকাতার বাসিন্দা । দীর্ঘদিন ধরে তারা পরিজনদের ডেথ সার্টিফিকেট এবং ক্ষতি পূরণের আশায় রয়েছেন ৷ কিন্তু মেলেনি কিছুই । অবশেষে 2018 সালের 4 অক্টোবর সালে ঝাড়গ্রামে দেওয়ানি মামলা করে নিখোঁজদের পরিবারগুলি । এদের মধ্যেই একজন যুথিকা আটা ৷ 45 বছরের স্বামী প্রসেনজিৎ আটাকে আজও পর্যন্ত খুঁজে পাননি তিনি ৷ স্বামীর মরদেহ শনাক্ত হয়নি DNA পরীক্ষার পরও । এমন ঘটনা ঘটেছে সুরেন্দ্র সিংয়ের ক্ষেত্রেও । সুরেন্দ্র সিং হারিয়েছেন ছেলে রাহুল কুমার সিংহ ও স্ত্রী নিলম সিংহকে । তিনিও ঝাড়গ্রাম আদালতে মামলা করেছেন ডেথ সার্টিফিকেট এবং ক্ষতি পূরণের আশায় । রাজেশ বাত্রা এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম দেওয়ানী কোর্টে হাপিত্যেশ হয়ে পড়ে থাকেন মেয়ে স্নেহা বাত্রার ডেথ সার্টিফিকেটের আশায় । রেল দপ্তর ক্ষতিপূরণের জন্য 10 লাখ টাকা দিয়েছে ৷ কিন্তু রাজ্য সরকার ডেথ সার্টিফিকেট না দেওয়ায় ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবারগুলি ।

নিখোঁজদের পরিবারগুলির অভিযোগ, একবার তারা নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সেখান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় । এই ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় লাইভ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত । মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, "সরকারের অমানবিকতা এবং উদাসীনতায় আজও ক্ষতিপূরণ পেলেন না জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবার-পরিজনরা । যেখানে রেল দপ্তর ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দিয়েছে সেখানে কেবলমাত্র রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় ডেথ সার্টিফিকেট মিলছে না৷ ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে এখনও বঞ্চিত পরিবারগুলি । বারবার আবেদন-নিবেদন করেও সদুত্তর না পাওয়ায় তাঁরা কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ।"

এ বিষয়ে BJP জেলা সভাপতি সমিত দাস বলেন, "শুধুমাত্র মানবিকতা এবং সদিচ্ছার অভাবের কারণে আজও অবহেলিত নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবার পরিজনেরা ।" তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, "তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও পালন করেনি । আমরা প্রতিবছর জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার শোক দিবস পালন করে থাকি । এবারেও লকডাউনে বাড়ি থেকেই শোক পালন করেছি । তবে রেলযাত্রীর পরিবার পরিজনেরা কেন ক্ষতিপূরণ পায়নি তা বলতে পারব না । তবে সত্যি যদি তাঁরা নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবার-পরিজন হয়ে থাকেন এবং ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন তবে তার ব্যবস্থা করা উচিত ।"

Last Updated : May 29, 2020, 9:33 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details