জলপাইগুড়ি, 15 সেপ্টেম্বর : আরও একটি শিশুর মৃত্যু ঘটল জলপাইগুড়িতে ৷ হাসপাতালে আনার পরই মৃত্যু হয় তার ৷ তবে হাসপাতালের তরফে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ৷ শিশুর পরিবারের তরফে হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ গতকাল দুই শিশুকন্যার মৃত্যু হয় ৷ এদিন সকালে আরও এক শিশুপুত্রের মৃত্যু হল ৷ এই নিয়ে জেলায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হল তিন ৷
গতকাল দুপুরে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় সাড়ে তিন মাসের কৃপায়ণ রায়কে ৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাকে ছুঁয়েও দেখেননি বলে অভিযোগ পরিবারের ৷ তাঁরা বাচ্চা প্রাইভেট এক চিকিৎসককে দেখান ৷ সেই চিকিৎসক বাচ্চাটিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ৷ তবে রাত হয়ে যাওয়ায় গতকাল আর তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি চ্যাপ্টাডাঙার বাসিন্দা ওই পরিবারের ৷ এদিন সকালে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন ৷ হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির মৃত্যু হয় ৷
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল 7টা 50 মিনিটে কৃপায়ণকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল । শিশুকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল ৷ গত তিনদিন থেকে শ্বাসকষ্ট আর সর্দি ছিল । আসার পরই তার কোভিড টেস্ট করা হয় । রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল । কিন্তু হাসপাতালের তরফে ব্রট ডেড (Brought dead) দেখানো হয়েছে । তবে শিশুর পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা যখন তাঁদের ছেলেকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে তখনও তার শ্বাস চলছিল ৷ ভর্তির টিকিটও করা হয়ে গিয়েছিল ৷ তার মধ্যে তাঁদের বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে ৷ তাকে মৃত অবস্থায় তাঁরা হাসপাতালে আনেননি ৷
পেশায় কৃষক কমলেশ রায়ের অভিযোগ, "ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বাচ্চাকে আনা হলেও হাসপাতালে চিকিৎসকরা ঠিক মতো চিকিৎসা করছিল না । তাই আমরা হাসপাতাল থেকে বের করে প্রাইভেটে ডাক্তার দেখাই । এরপর আমরা প্রাইভেটে ডাক্তারের পরামর্শে সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি করাতে নিয়ে আসি । আসার পরই সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি চলাকালীন মারা যায় ।"
ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনল মৃত শিশুপুত্রের পরিবার এদিকে, ময়নাগুড়ির বিএসওএইচ লাকি দেওয়ান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন । পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সুশান্ত রায় বলেন, "বাচ্চাটিকে দেরিতে আনা হয়েছিল ৷ এটা ব্রট ডেড কেস ৷ কিন্তু ময়নাতদন্ত না করেই পরিবার তাকে নিয়ে চলে যায় ৷ কিন্তু ময়নাগুড়িতে চিকিৎসা কেন হয়নি তা জানা নেই । খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ।"
গত কয়েকদিন ধরে জ্বর নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে প্রায় 130 জন শিশু ভর্তি হয় ৷ তাদের মধ্যে বেশ কিছুজন সুস্থ হয়ে বাড়িও গিয়েছে ৷ গতকাল ভোরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন 6 বছরের একটি শিশুকন্যার মৃত্যু হয় ৷ পাশাপাশি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় চার মাসের আরও এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে ৷ তবে চিকিৎসকদের তরফেও জানানো হয়, পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে ৷ ভয় পাওয়ার কিছু নেই ৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল পরিদর্শন করে গিয়েছেন ৷ কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজের ট্রপিক্যাল মেডিসিনেও নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Fever in Children : জলপাইগুড়িতে মৃত্যু 2 শিশুর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আরও এক