কেন্দ্রই একমাত্র সঠিক রাস্তা, পৃথক রাজ্য ইস্যুতে দাবি অনন্ত মহারাজের শিলিগুড়ি/জলপাইগুড়ি, 12 জুলাই: গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন নেতা অনন্ত মহারাজ রাজ্যসভার প্রার্থী পদে বিজেপির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন ৷ তবে, বিজেপি হঠাৎ তাঁকেই বাছল কেন ? এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা একটাই কারণকে উল্লেখ করছেন গুঞ্জন শুরু হয়েছে ৷ অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সাংসদ করার পিছনে 2024 লোকসভা নির্বাচনের সমীকরণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ রাজ্যসভায় অন্তত মহারাজকে পাঠাতে পারলে লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে রাজবংশী ভোট আরও পোক্ত হবে বিজেপির পক্ষে ৷
এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আজিজুল বিশ্বাস বলেন, "মূলত বিজেপি রাজনৈতিক কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভোট ব্যাংক অক্ষুন্ন রাখতেই এই পদক্ষেপ ৷" রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অমিতাভ কাঞ্জিলালের মতে, "অনন্ত মহারাজের উত্তরবঙ্গে কিছুটা প্রভাব রয়েছে ৷ এক শ্রেণির মানুষের কাছে তিনি ধর্মগুরু ৷ বিজেপি আবার ছোট রাজ্যের পক্ষে ৷ তাঁকে সাংসদ করায় পৃথক রাজ্যের জিগির আবার উঠবে ৷ এতে উত্তরের রাজনীতিতে আবার বিজেপির প্রভাব কায়েম হবে ৷ তবে, পাহাড়ের রাজনীতিতে এর সেরকম প্রভাব পড়বে না ৷"
উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি আসন বাড়িয়েছে ৷ কিন্তু, শাসকদলের জয়ের নিরিখে সামনে সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ৷ উলটোদিকে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি ৷ যেখানে এই গেরুয়া শিবির লোকসভায় এই দুই জেলার সবক’টি আসনে জিতেছে 2019 সালে ৷ আর 2 বছর আগে বিধানসভাতেও অধিকাংশ আসন পদ্মশিবিরে গিয়েছে ৷ তার পরেও, গ্রাম দখলের লড়াইয়ে বিজেপির ব্যর্থতা চিন্তা বাড়িয়েছে শীর্ষনেতৃত্বে ৷
আরও পড়ুন:নজরে রাজবংশী ভোট, অনন্ত মহারাজ কি রাজ্যসভায় বিজেপি প্রার্থী ?
জন বারলা এবং নীশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ৷ পাহাড়ে রয়েছেন রাজু বিস্তা ৷ কিন্তু, উপনির্বাচন, জিটিএ নির্বাচন এবং এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝেছে যে, উত্তরে আগের মতো ক্ষমতা তাদের আর নেই ৷ সেটা সাংগঠিনক দূর্বলতা হোক বা তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণেই ৷ শক্তিক্ষয় যে হয়েছে তা মানছে গেরুয়া শিবির ৷ গোর্খাল্যান্ড ইস্যু আর কাজে লাগছে না ৷ ফলে বিজেপিকে ফের হারানো জায়গায় ফিরে আসতে হলে, পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেই ইস্যু করতে হবে ৷ তাই গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর সঙ্গে কামতাপুর ও রাজবংশীদের হাতিয়ার করছে বিজেপি ৷
আরও পড়ুন:'নন্দীগ্রামের মতো কারচুপি', রামপুরহাটে 36 ভোটে হারের পর দাবি মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের স্ত্রীর
আর তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে অনন্ত মহারাজের বক্তব্যেই ৷ নীশীথ প্রামাণিক তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিলে, তিনি তা গ্রহণ করেছেন ৷ আর সাংবাদিকদের সামনে মন্তব্যও করেছেন, ‘‘আমার যে দাবি, তা পূরণের সঠিক পথ কেন্দ্র ৷ সেখানেই আমাদের দাবিগুলিকে তুলে ধরব ৷’’ স্পষ্টতই পৃথক কামতাপুর তথা কোচবিহার রাজ্যে দাবির কথাই তিনি বলছেন ৷ কিন্তু, তাতে পাহাড়-সহ তরাই ও ডুয়ার্সের রাজনীতিতে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই ধারণা রাজনৈতিকমহলের ৷
উল্লেখ্য, গতকাল নীশীথ প্রামাণিকের রাজ্যসভার প্রার্থী পদের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পর, আজ অনন্ত মহারাজ দিল্লি উড়ে গিয়েছেন ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছেন ৷ শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে তাঁরা কলকাতা হয়ে দিল্লির জন্য রওনা দেন ৷ রাজ্য বিধানসভা থেকে বিজেপির একমাত্র আসনটিতে অনন্ত রায় মহারাজের নাম বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের অফিস থেকে আজই ঘোষণা হতে পারে ৷