পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সরকার কোটি কোটি গাছ বিলি করলেও বাঁচে কটা , উঠছে প্রশ্ন - পশ্চিমবঙ্গে গাছ না বাঁচানোর অভিযোগ

রাজ্য সরকারের তরফে প্রত্যেক বছরই কোটি কোটি গাছ লাগানো হয় । কিন্তু তার মধ্যে আদৌ সব গাছ বেঁচে থাকে না । এমনই অভিযোগ করছেন পরিবেশপ্রেমীরা । যেমন ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে কোয়ার্টারের পিছনে ফাঁকা জায়গায় প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছিল । কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটি মাত্র গাছ পড়ে রয়েছে । সেখানে ছায়াদানকারী গাছ সহ মূল্যবান গাছও লাগানো হয়েছিল । সেখানে একটিও গাছ বেঁচে নেই বলে অভিযোগ । যার ফলে প্রশ্ন উঠছে সরকারের ভূমিকা নিয়েও ।

Jalpaiguri
জলপাইগুড়ি

By

Published : Jun 5, 2020, 3:43 PM IST

জলপাইগুড়ি , 5 জুন : সবুজায়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কোটি কোটি গাছ লাগানো হয় । আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস । প্রত্যেকবারের মতো এবারও সাড়ে তিন কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু এই মুহূর্তে একটাই প্রশ্ন , এই সাড়ে তিন কোটির মধ্যে কতগুলি গাছ বাঁচবে ? পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ , কোটি কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছ বাঁচানো যায় না । সেক্ষেত্রে সরকারি উদাসীনতাকে দায়ি করেছেন তাঁরা । গাছ লাগানোর পর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যদি সরকার না নেয় তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা ।

এবারও সাড়ে তিন কোটি গাছ লাগানো হবে । কিন্তু বাঁচানো যাবে কতটা , জানেন না কেউ । তবুও দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে । তথ্য অনুযায়ী , 2017 সালে 1 কোটি 11 লাখ 60 হাজার গাছের মধ্যে বনবিভাগ গাছ লাগায় 5580 হেক্টর জমিতে । বাকি চারাগাছ বিতরণ করা হয় । 2018 সালে 1 কোটি গাছের মধ্যে বনবিভাগ গাছ লাগায় 4300 হেক্টর জমিতে । 2019 সালে 1 কোটি 5 লাখ চারা গাছের মধ্যে বনবিভাগ লাগায় 4800 হেক্টর জমিতে । প্রত্যেক বছরের ক্ষেত্রে বাকি চারাগাছগুলি প্রদান করা হয় । আর এবার অর্থাৎ 2020 সালে রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলের 8000 থেকে 9000 হেক্টর জমিতে চারাগাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে । কিন্তু প্রত্যেক বছর এই পরিমাণ গাছ লাগানো হলেও কি তত পরিমাণ গাছ বেঁচে থাকে ?

ময়নাগুড়িতে গাছ লাগানো হলেও বর্তমানে আর কোনও গাছ বেঁচে নেই


এপ্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউত বলেন , "আমাদের কাছে খুব বেদনা দায়ক ও বিড়ম্বনার বিষয় যে প্রতিবছর ঘটা করে গাছ লাগানো হয় । কিন্তু তা বাঁচানো যায় না । মাত্র 20-30 শতাংশ গাছ বাঁচে । আমাদের এখন সজাগ হওয়া দরকার । দরকার হলে আমরা কম গাছ লাগাব এবং যা লাগাব তা যেন বাঁচাতে পারি । আমরা লাগানো চারাগাছের 50 থেকে 60 শতাংশ বাঁচাতে পারি । সেই দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে । " এই বিষয়ে তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন , " সরকার সবুজায়নের লক্ষ্যে সফল নয় । কারণ গাছ লাগানোর পরেও কোনও নজরদারি নেই । সরকারি উদ্যোগে একটু খামতি আছে । অনেকে গাছ লাগান কিন্তু তাঁরা রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাকভাবে করে উঠতে পারেন না । সেক্ষেত্রে সরকার যদি সহযোগিতা করে তবে ভালো হয় । পঞ্চায়েত , পৌর এলাকার পৌরসভাগুলি যদি এই দায়িত্ব নেয় , তাহলে সবুজায়ন সম্ভব । মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত বিধায়ককে বলেছিলেন , 1 হাজার চারাগাছ লাগানোর কথা । তা কিন্তু বাস্তবে লাগানো হয়নি । "

শুনে নিন জলপাইগুড়ি সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের বক্তব্য

অন্যদিকে , লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে গাছ লাগানোর চেষ্টা করা হলেও তাঁর মধ্যে কতগুলি গাছ বেঁচে থাকে তার কেউ হিসাব রাখে না । এনিয়ে , উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসের কো-অর্ডিনেটর সুবীর সরকার বলেন , "এক কোটি গাছ লাগানো হলে কত গাছ বেঁচে আছে সেই অডিট কেউ করে না । আজ পর্যন্ত তা হয়নি। RSVY প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার ধারে গাছ লাগানো হয়েছিল । প্ল্যানিং কমিশনের তরফে এটা ভালো কাজ হয়েছিল । আমরা পাঁচ বছরে মনিটরিং করে দেখেছি পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ গাছ বেঁচেছিল । তবে ময়নাগুড়ি এলাকায় সফল হওয়া গিয়েছিল । "

অন্যদিকে অভিযোগ , ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে কোয়ার্টারের পিছনে ফাঁকা জায়গায় প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছিল । কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটি মাত্র গাছ পড়ে রয়েছে । সেখানে ছায়াদানকারী গাছ সহ মূল্যবান গাছও লাগানো হয়েছিল । পানবাড়ি প্রাথমিক স্কুলেও লাগানো হয়েছিল কয়েকশো গাছ । কিন্তু সেখানে একটিও গাছ নেই বলে অভিযোগ ।

এনিয়ে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা নিলেশ দাসগুপ্ত জানান , বিশ্ব পরিবেশ থেকে শুরু করে অন্যান্য সময় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান , স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে গাছ বিলি করা হয় । কিন্তু বাস্তবে গাছগুলি বাঁচানো হয় না । আমরা যদি বাড়ির সন্তানের মতো যত্ন করি , তাহলে আমাদের প্রতিবছর এত গাছ বিলি করতে হত না । সন্তানের মতো গাছ রক্ষা করলে আমাদের ভালো হয় । ওই গাছ বড় হলে গাছে ভরে যাবে । সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে অনুরোধ করব গাছ বাঁচানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে গাছ লাগাতে হবে । না হলে প্রতি বছর গাছ লাগানো হবে । আর ছাগল গোরুতে খাবে ।

অন্যদিকে , রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন , "আমরা প্রতি বছর সাড়ে তিন কোটি চারা গাছে লাগাই এবং সাধারণ মানুষকে বিলি করি । আমরা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে দুই কোটি চারাগাছ লাগিয়ে থাকি । এবারও দুই কোটি চারাগাছ রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলের 8000 থেকে 9000 হেক্টর জমিতে চারাগাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে । এবং দেড় কোটি চারা গাছ সাধারণ মানুষকে প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে । আমরা আমাদের জাতীয় উদ্যান ,অভয়ারণ্য-সহ অন্যান্য জঙ্গল এলাকায় যে গাছগুলি লাগিয়ে থাকি তা এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নজরদারি করে থাকি । লক্ষ্য করা গেছে , প্রথম বছর 10 শতাংশ গাছ মারা যায় , দ্বিতীয় বছর 30 শতাংশ গাছ মারা যায় । এরপরের বছর যদি গাছের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার হয় নজরদারি করেনি নয়তো গাছ খারাপ ছিল । তবে আমরা প্রতিবছর মুখ্যমন্ত্রীর সবুশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে 15 লাখ টাকার চারাগাছ বিলি করে থাকি । তবে আমাদের জঙ্গল এলাকায় গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও সাধারণ মানুষকে সবুজায়নের জন্য যে গাছ প্রদান করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কোনও নজরদারি বা বনবিভাগের পক্ষে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয় না ।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা জানান , আমাদের রাজ্যে গত দশ বছরের গাছ বেড়েছে 10 শতাংশ । যা খুবই আনন্দের । তবে যারা গাছ লাইনে দাড়িয়ে নিচ্ছেন তাঁরা গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করবেন । এটা ধরে নিয়েই চলি আমরা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details