জলপাইগুড়ি, 4 এপ্রিল: ভাওয়াইয়া গান গাইতেন বলে সমাজ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল ৷ পুরো পরিবারকেই একঘরে করে রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু, তাতেও দমে থাকেননি রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর এএসআই নজরুল ইসলাম ৷ এখনও তিনি ভাওয়াইয়া গানের চর্চা করেন কোচবিহারের নাটাবাড়ির বাসিন্দা 57 বছরের নজরুল ৷ বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরীর সাদা সাদা কালা কালা গান গেয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি ৷ উত্তরবঙ্গের মাটির এই গান গেয়ে তাঁর খ্যাতি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি অসমেও ৷ তাঁকে গানে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন সহকর্মী এবং পুলিশের আধিকারিকরা ৷
নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ কর্মীদের বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে হয় ৷ ফলে সকলের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না ৷ বাড়ি ছেড়ে, বাবা-মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের ছেড়ে ভিন জেলায় থাকতে হয় তাঁদের ৷ তাই সহকর্মীদের একটু আনন্দ দিতে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর জেল ব্যারাকে গান করেন তিনি ৷ জানিয়েছেন, তাঁকে এবং পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছিল ৷ কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হত না ৷ কিন্তু, তিনি থেমে যাননি ৷ টানা 4 বছর সামাজিকভাবে বহিষ্কার থাকার পর, লোকজনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল তাঁর পরিবার ৷
পুলিশের চাকরিতে বাইরে থাকতেন ৷ সেই সময় তাঁর বাবা সমাজের কাছে ভাওয়াইয়া গানের গুরুত্ব এবং এর কদর বোঝান ৷ ধীরে ধীরে মানুষ তাঁর গান শুনতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম ৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের শিল্পী চঞ্চল চৌধুরীর ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি গেয়েছেন নজরুল ৷ আর তারপরেই তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে ৷ তাঁর 12 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট ডিএসপি উদয় ছেত্রীর অনুরোধে গানটি গেয়েছিলেন ৷ সেই গানের ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই পুলিশ মহলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি ৷
বাংলাদেশের গায়ক তথা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী সম্প্রতি চিলাপাতয় এসেছিলেন ৷ সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছে নজরুল ইসলামের ৷ জানিয়েছেন, ভাওয়াইয়ার পাশাপাশি, পল্লিগীতিও গেয়ে থাকেন তিনি ৷ রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশের 12 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট ডিএসপি উদয় ছেত্রী জানিয়েছেন, নজরুল ইসলামের গান গাওয়ার বিষয়টি তাঁর ভালো লাগে ৷ হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নজরুলের গান-বাজনার প্রতি এই আগ্রহ তাঁকে প্রভাবিত করেছে ৷ আর তাঁর গানে ব্যারাকের অন্যান্য পুলিশকর্মীদের মনোরঞ্জনও হয় ৷ কাজে নতুন করে উৎসাহ পান তাঁরা ৷