ডুয়ার্সে বাড়ছে চিতাবাঘের হামলা, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক জলপাইগুড়ি, 12 সেপ্টেম্বর:ডুয়ার্সে মানুষ ও চিতাবাঘের সংঘাতের ঘটনা ঘটেই চলেছে । চা মহল্লায় সহজলভ্য শিকার কুকুর ধরতেই জঙ্গল ছেড়ে বেড়িয়ে আসছে চিতাবাঘ । জঙ্গল থেকে চিতাবাঘ বেরিয়ে এসে বাচ্চাদের নিয়ে গিয়েছে, এই ঘটনাও ঘটেছে ৷ আর এতেই বাড়ছে এলাকায় চিতাবাঘের আতঙ্ক । চিতাবাঘের হানায় প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনের । তার মধ্যে চিতাবাঘের হানায় বাচ্চাদের মৃত্যুর সংখ্যাটাই বেশি। চিতাবাঘের হানা থেকে বাঁচতে ব্যাপক প্রচারে নেমেছে বনবিভাগ। আলিপুরদুয়ার জেলার চিতাবাঘের আক্রমণের ফলে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছরে 5 জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ চা বাগান আর ঝোপঝাড় চিতাবাঘের আদর্শ আস্তানা বলে জানাচ্ছেন বনাধিকারিকরা ।
গত 15 দিনের ব্যবধানে চিতাবাঘের আক্রমণে দু'জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল । যদিও চিতাবাঘের আক্রমণের আহতের সংখ্যা শতাধিক। কয়েক বছরে আলিপুরদুয়ারের জেলার ধুমচিপাড়া চা বাগান ও রামঝোরার চা বাগান, গ্যারগেন্ডা চা বাগান, ঢেকলাপাড়া চা বাগানের বাড়ির উঠোন থেকে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উদ্বিগ্ন বনবিভাগ। জলপাইগুড়ি বনবিভাগের ডিএফও বিকাশ বিজয় জানান, চিতাবাঘের আক্রমণে চা বাগানে কয়েকদিনের ব্যবধানে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সচেতেনতা প্রচার চালাচ্ছি । চা বাগানে চিতাবাঘ ধরার জন্য খাঁচা পাতা হচ্ছে। তবে সচেতেনতা প্রয়োজন ৷ সন্ধের পর কোনও বাচ্চাকে একা বের হতে দেওয়া যাবে না । রাতে একসঙ্গে চলাফেরা করতে হবে । কোনরকম পশুর দেহাংশ জঙ্গল বা চা বাগানের মধ্যে ফেলা যাবে না । যাতে করে চিতাবাঘ আকৃষ্ট হয় । চিতাবাঘ বাচ্চাদের ওপর আক্রমণ করতে পছন্দ করে । সহজেই যে শিকার পাবে সেটাই তারা করবে। সবার সহযোগিতা আমাদের দরকার ।"
গত অগস্ট মাসে চিতাবাঘের আক্রমণের মৃত্যু পর মাইকিং করি । চা বাগান ও ফরেস্ট বস্তি এলাকাতেই চিতাবাঘের আক্রমণ ঘটছে । চা বাগানের ঝোপ ও বন্ধ চা বাগান চিতাবাঘের থাকার আদর্শ জায়গা। চিতাবাঘ সাধারণ আক্রমণ করে না । কিন্তু চিতাবাঘ বাচ্চা ও বৃদ্ধদের আক্রমণ করে । লেপার্ড বাইরে আসছে তার মূল কারণ কুকুর । দেশি কুকুরদের ধরতে বাইরে চলে আসছে । আমাদের লেপার্ডের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু এর কোনও সমীক্ষা এখনও করা হয়নি । বন্ধ চা বাগানে থাকার আদর্শ জায়গা বলে আমরা মনে করি । চা বাগানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও বাড়িতে শৌচাগার থাকলে এই সমস্যা হবে না । কারণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে আসার ফলে বন্যপ্রাণী ও মানুষের সংঘাত হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: চা বাগানে চিতাবাঘের পচাগলা দেহ উদ্ধার
15 জানুয়ারী 2019 তারিখে গেরগেন্ডা চা বাগানে এক চার বছরের শিশুকন্যাকে তুলে নিয়ে যায় চিতাবাঘ । পরে জলদাপাড়ার বন বিভাগের বনকর্মীরা তল্লাশী চালিয়ে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে । এর পরের ঘটনা ঘটে 2018 সালের 12 ডিসেম্বর ৷ ওইদিন দুপুর তিনটে নাগাদ ধুমচিপাড়া চা বাগানের শ্রমিক মহল্লা থেকে ইডেন ওঁরাও নামের এক পাঁচ বছরের শিশুকে তুলে নিয়ে যায় চিতাবাঘ । পরে চা বাগানের নালা থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির মৃতদেহ । দ্বিতীয় ঘটনাটি ওই চা বাগানেই ঘটে 15 ডিসেম্বর । ওইদিন রাতে প্রবীণ শ্রমিক বুধরাম মাঝির উপর ওইদিন রাতে ও পরের দিন ভোরে পরপর দুবার হামলা চালায় চিতাবাঘ । তবে বরাত জোরে বেঁচে যান তিনি। এরপর 23 ডিসেম্বর 2018 সালে রামঝোরা চা বাগানে বেলা দশটা নাগাদ অনিকেত ওঁরাও নামের এগারো বছরের এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে যায় চিতাবাঘ । পরে চা বাগানের ঝোপ থেকে উদ্ধার হয় তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ ।
আরও পড়ুন: উঠোনে খেলার ফাঁকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গেল চিতাবাঘ ! মৃত্যু দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার
এরপরেই মাদারিহাটের ওই চা বাগান গুলিতে চরমে ওঠে মানুষ চিতাবাঘের সংঘাত । গ্যারগেন্ডা চা বাগান থেকে 26 ও 27 ডিসেম্বর 2018 তারিখে উদ্ধার হয় দুটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘের মৃতদেহ । ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয় যে বিষক্রিয়া মৃত্যু হয়েছিল দুটি চিতাবাঘের ৷ স্পোর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে বলেন, "অনায়াসে শিকার ধরতে পছন্দ করে চিতাবাঘ । ফলে বাচ্চাদের টার্গেট করে । বাচ্চাদের ধরতে ওত পেতে থাকে । গতকালের ঘটনাটিও একই রকম । বিশেষ করে বাড়ির গৃহপালিত পশু, কুকুরদের ধরতে চিতাবাঘ ঢুকে পরে । তাই আমরা চা বাগানের মহল্লায় বা বনবস্তিতে বাচ্চাদের সন্ধ্যার পর বের হতে না বলে থাকি । আমরা প্রচার করি । দেশী কুকুর ধরতে পছন্দ করে চিতাবাঘ । ফলে তারা বাড়িতে ঢুকে যায় । যার ফলে মানুষ ও চিতাবাঘের সংঘাত হয় ।"
সোমবার আলিপুরদুয়ারের ঢেকলাপাড়া চা বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনে একটি বাড়ির উঠোন থেকে এক বাচ্চাকে টুটি কামড়ে নিয়ে যায় একটি চিতাবাঘ । 7 বছরের ওই বালকের বাড়ি ঢেকলাপাড়া চা বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনের নিচ লাইনে । জানা গিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যাবেলায় বালকটি বাড়ির উঠোনে খেলছিল । সে সময় একটি চিতাবাঘ টুটি কামড়ে চা বাগানের ভিতরে নিয়ে যায় । অন্যদিকে, গত 27 অগস্ট আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা থানার জটেশ্বর ফাঁড়ির অন্তর্গত অতিতপাড়া ব্যাঙকান্দি এলাকায় চিতাবাঘ এক মহিলাকে খুবলে খায় । মৃত বৃদ্ধার নাম সরদিনী রায় (65) । মুণ্ডহীন মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় ।
27 অগস্ট রাতে খাবার পর কলতলায় বাসন ধুতে যান বৃদ্ধা । এরপরেই বৃদ্ধাকে পাওয়া যায় না । ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও বন বিভাগের তল্লাশীতে বাড়ির থেকে পঞ্চাশ মিটার দূরত্বে বৃদ্ধার মহিলার মুন্ডহীন দেহ ঝোপের আড়াল থেকে উদ্ধার করা হয় । দেহের সন্ধান পেলেও মাথার কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি । সোমবার খোঁজাখুজির পর তাতাসি নদীর ধারে জঙ্গলের মধ্যে ওই মহিলার ক্ষতবিক্ষত মাথা উদ্ধার হয় । মাথাটি খুবলানো অবস্থায় উদ্ধার হয় । দেহ থেকে মাথাটি ছিড়ে নেওয়া হয়েছে । জলপাইগুড়ি বনবিভাগের দলগাঁও রেঞ্জের পর পর দুটো ঘটনায় হতবাক বনাধিকাররিকরা ।