জলপাইগুড়ি, 6 নভেম্বর: ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধরাম সর্দার ! উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় বনকর্মীদের অবস্থা এখন অনেকটা এমনই ৷ এর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু তো ঠেকানো যাচ্ছেই না ৷ তার উপর প্রাণ যাচ্ছে বনকর্মীদেরও ৷ ফলে পরিস্থিতি দিনদিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন বনকর্মী থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা ৷
উল্লেখ্য, গত একমাসে লোকালয়ে বুনো হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে 15 জনের । কেবলমাত্র আলিপুরদুয়ার জেলার হাতির হানায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে । কোচবিহার জেলায় একই দিনে বুনো হাতির আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে । জলপাইগুড়ি জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ।
এই সাতজনের মধ্যে আবার একজন বনকর্মী ৷ গত শনিবার ঘটনাটি ঘটে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম ব্যাঙডাকি বিটের যোগেন্দ্র নগরে । হাতির হানায় মৃত্যু হয় রিথে সুব্বা (41) নামে ওই বনকর্মীর ৷ তাঁর মৃত্যুর পর বনকর্মীদের বিপদের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে ৷ কারণ, সেদিন বন্দুক কাজ করেনি ওই বনকর্মীর ৷ হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গুলি করতে গিয়ে গুলি না বের হয়নি বন্দুক থেকে ৷ ফলে বনকর্মীকে আছড়ে পিষে মারে হাতিটি ।
প্রসঙ্গত, বছরের এই সময়ে হাতি জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বের হয় ধান খাওয়ার লোভে । আর এতেই মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত বাড়ে । হাতিকে জঙ্গলে তাড়াতে অনেক সময় ডাবল ব্যারেল গান দিয়ে গুলি করা হয় । যাতে হাতি ভয়ে চলে যায় । আর সেই বন্দুকই কাজ করেনি কিন্তু সম্প্রতি হাতি তাড়াতে গিয়ে বন্দুক থেকে গুলি না বের হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় ওই বনকর্মীকে ।
বনকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, 2011 সাল থেকে বারবার বনকর্মীদের নতুন হাতিয়ার ও উপকরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও, তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ । 2016 সালে বিনয় বর্মন বনমন্ত্রী থাকাকালীনও অত্যাধুনিক অস্ত্র-সহ বনকর্মীদের হাতে উপকরণ দেওয়ার কথা বললেও, তা বাস্তাবায়ন করেননি । বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বারবার সংবাদমাধ্যমের সামনে বনকর্মীদের অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলে দেওয়ার কথা বললেও তিনিও তা করেননি বলে অভিযোগ ।
জলপাইগুড়ি জেলার প্রাক্তন বনকর্মী বিজয় ধর অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বন কর্মীদের অবস্থা খুবই খারাপ । দফতরের আধিকারিকদের কাছে তৃণমূলস্তরের কর্মীদের কোনও মূল্য নেই । বনকর্মীদের যে হাতিয়ার হাতি তাড়ানোর জন্য দেওয়া হয়, তা মান্ধাতা আমলের । হাতি তাড়ানোর জন্য ভালো লাইট, ক্র্যাকার্স, ফায়ার আর্মস ব্যবহার হয় । গ্রাস রুট লেভেলে যাঁরা হাতি তাড়ানোর কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তার নেই ! কারও কোনও হেলদোল নেই । নিজের উপর রিক্স নিয়েই কাজ করতে হয় ।’’